প্রথম খণ্ড
দ্বিতীয় খণ্ড
তৃতীয় খণ্ড

২০. অধিকার

প্রয়োজন ছাড়াও অধিকারীর কথা।

লোকায়ত-দর্শনের আলোচনায় কি অধিকার-ভেদের কথা সত্যিই তোলা উচিত? প্রশ্নটাকে সোজাসুজি এইভাবে পাড়লে নিশ্চয়ই জবাব দেবার অসুবিধে হবে। কিন্তু এই প্রসঙ্গেই একটি কথা উত্থাপন করবার অবকাশ পাওয়া যায়। কথাটা জরুরী।

লোকায়ত-দর্শনের আলোচয়ায় আমরা যতোই অগ্রসর হবো ততোই স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর ভাবে দেখতে পাবো যে আলোচনার অনেক দলিলই সমাজ-বিকাশের এমন এক পর্যায়ের সঙ্গে জড়িত যে-পর্যায়ে পর্যায়ে ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা রাষ্ট্রব্যবস্থার আবির্ভাব হয় নি। তাই ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা রাষ্ট্রব্যবস্থা অনাদি, সনাতন—এ-রকম কোনো ধারণা নিয়ে এগোলে দলিলগুলির তাৎপর্য চোখে পড়া কঠিন হবে। সাম্প্রতিক যুগে আমাদের দেশে এবং বিদেশেও দিকপাল ভারততত্ত্ববিদ তো বড়ো কম জন্মান নি। বরং, দলিলপত্র বলতে আমরা যেটুকু সংগ্রহ করেছি তার সবটুকুর সঙ্গেই তাঁদের পরিচিয় ছিলো। কিন্তু তবুও ব্যক্তিগত-সম্পত্তিকে তাঁরা সনাতন মনে করেছেন আর এই কুসংস্কাররের দরুনই তাঁদের দৃষ্টি সীমাবদ্ধ ও সংকীর্ণ হয়েছে। ফলে দলিলগুলি চোখের সামনে থাকলেও সেগুলির প্রকৃত তাৎপর্য দেখতে পাওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব হয় নি। কার্ল মার্কস্‌(৬৯) এক জায়গায় এই সীমাবদ্ধতার উল্লেখ করেই বলেছেন,

Owing to certain judicial blindness even the best intelligences absolutely fail to see the things which lie in front of their noses.

একরকমের আইনগত অন্ধতার দরুনই এমন কি সবচেয়ে উঁচুদরের বুদ্ধিমানেরাও একেবারে নাকের গোড়ায় যা রয়েছে তা মোটেই দেখতে পান না।

মার্কস্‌-এর কথায় পরে ফিরতে হবে। আপাতত শুধু এইটুকুই বলা দরকার যে মানব সমাজে যা কিনা নিছক আধুনিক যুগের অবদান সেইটুকুকে সনাতন বলে ভুল করলে প্রাচীন ভারতীয় পুঁথিপত্রের অনেক তাৎপর্যই চোখে পড়বে না। ব্যক্তিগত সম্পত্তিকে যিনি চিরন্তন মনে করেন তিনি লোকায়ত দর্শনের তাৎপর্য কোনোদিনই বুঝতে পারবে কিনা সন্দেহ।

—————–
৬৯. K. Marx and F. Engels C 209.