১৯. সপ্তম দিনের যুদ্ধারম্ভ

রজনী প্রভাতে কুরু-পাণ্ডুর নন্দন।
যুদ্ধ হেতু দুই দলে করিল সাজন।।
বিবিধ বাদ্যের শব্দে পূরিল গগন।
ভেরী শঙ্খ বাজিল পটহ অগণন।।
যতেক ঝাঝরি বাজে না যায় লিখন।
শত শত শঙ্খ বাজে কে করে গণন।।
সৈন্যের পদের ভরে কাঁপিছে মেদিনী।
মহাঘোর শব্দ হৈল মহাঘোর ধ্বনি।।
তবে ভীষ্ম মহাবীর গঙ্গার নন্দন।
গরুড় আকার ব্যূহ করিল রচন।।
স্থানে স্থানে বুঝিয়া রাখিল যোধগণ।
বামশৃঙ্গে-কৃতবর্ম্মা গুরুর নন্দন।।
দক্ষিণ শৃঙ্গেতে ভরদ্বাজ মহামতি।
কৃপাচার্য্য জয়দ্রথ শকুনি প্রভৃতি।।
মধ্যশৃঙ্গে ভগদত্ত সুশর্ম্মা রাজন।
ত্রিগর্ত্ত সৌবল আদি যত যোধগণ।।
পৃষ্ঠভাগে দুর্য্যোধন সহ সহোদর।
সোমদত্ত বাহ্লীক ও প্রতীক-কুমার।।
রথী মহারথী সহ দুঃশাসন বীর।
পূর্ব্বশৃঙ্গে রহিলেন নির্ভয় শরীর।।
হেনরূপে ব্যূহ কৈল ভীষ্ম মহামতি।
ব্যূহকথা শুনিলেন ধর্ম্ম-নরপতি।।
অর্জ্জুনেরে ডাকি আজ্ঞা করিল রাজন।
ততোধিক ব্যূহ পার্থ করিল সাজন।।
ইন্দ্রাকার ব্যূহহৈল বড়ই দুষ্কর।
স্থানে স্থানে বুঝিয়া রাখিল যোধবর।।
দক্ষিণ শৃঙ্গেতে ভীম সংগ্রামে নির্ভয়।
বিরাট দ্রুপদ আদি সাত্যকি দুর্জ্জয়।।
ধৃষ্টদ্যুম্ন শিখণ্ডী সত্যসেন সহিতে।
বামশৃঙ্গে রহিলেন নানা অস্ত্র হাতে।।
পূর্ব্বশৃঙ্গে সহদেব নকুল সুন্দর।
চক্রবক্র আদি পঞ্চ দ্রুপদ-কুমার।।
মধ্যে রাজা যুধিষ্ঠির ধর্ম্মের নন্দন।
অভিমন্যু সহ যত মহারথিগণ।।
দশ সহস্র রথী আর সঙ্গে পরিবার।
এইরূপে ব্যূহ কৈল বড়ই দুষ্কর।।
দশ সহস্র মহারথী বিদ্যুৎ আকার।
উত্তর শৃঙ্গেতে রহে ভোজের কুমার।।
ব্যূহ অগ্রে হৈল পার্থ কুন্তীর কুমার।
মহারথিগণ সব সঙ্গে পরিবার।।
এইরূপে ব্যূহ কৈল বড়ই বিষম।
দেখাদেখি দুই দলে বাজে মহারণ।।
রথী মহারথী যুঝে পদাতি পদাতি।
আশোয়ারে আশোয়ারে মত্তে মত্ত হাতী।।
পদাতি পদাতি যুঝে ধানুকী ধানুকী।
পত্তি পত্তি যুদ্ধ বাজে তবকি তবকি।।
গজে গজে মহাযুদ্ধ না হয় বর্ণন।
বীরগণ করে তবে বাণ বরিষণ।।
শেল শক্তি জাঠা জাঠি মুষল মুদগর।
পরশু ভূষণ্ডী চক্র নারাচ তোমর।।
অর্দ্ধচন্দ্র সূচীমুখ শিলীমুখ বাণ।
দুই দলে মহারণ না হয় বর্ণন।।
রথী মহারথিগণ পড়িল অনেক।
লিখনে না যায় পত্তি পড়িল যতেক।।
শোণিতে বহিছে নদী অতি বেগবতী।
রক্তজলে পদাতিক ভাসে মত্তহাতী।।
রক্তমাংসাহারী সব ঘোর রব করে।
নাচয়ে কবন্ধগণ হাতে ধনুঃশরে।।
তবে ভীষ্ম দ্রোণ আদি গুরুর নন্দন।
বিকর্ণ সৌবল আদি সুশর্ম্মা রাজন।।
এইরূপে যত বীর হৈয়া একচাপ।
ঘন ঘন অস্ত্র বর্ষে যেন কাল সাপ।।
ভঙ্গ দিল পাণ্ডবের যত সৈন্যগণ।
ক্রোধ হৈল ভীমসেন মহাবলবান।।
চেকিতান চক্রবক্র সুভদ্রা-নন্দন।
শরজালে অন্ধকার করিল গগন।।
পুরোমিত্র মারিল ভীমেরে পঞ্চশর।
শরে শর নিবারণ কৈল বৃকোদর।।
ডাক দিয়া পুরোমিত্রে বলয়ে বচন।
মোর হাতে যাবে আজি যমের ভবন।।
এত বলি দিব্য অস্ত্র এড়িল ত্বরিতে।
মস্তক কাটিয়া তার পাড়িল ভূমিতে।।
পুরোমিত্র কুমার পড়িল মহোরণে।
হাহাকার শব্দ হৈল কুরুবীরগণে।।
ভীমেরে দেখিয়া ভঙ্গ দিল কুরুগণ।
ক্রোধ হৈয়া যুঝিবারে এল দুর্য্যোধন।।
মহারথি সহিত, সহিত সহোদর।
নানা অস্ত্র মারি বিন্ধে বীর বৃকোদর।।
সব অস্ত্র নিবারয়ে পবন-কুমার।
বিক্রমে প্রচণ্ড বীর প্রতাপে অপার।।
ক্রোধে কৃষ্ণার্জ্জুনে দোঁহে প্রবেশিল রণে।
হস্তী যেন প্রবেশিল কদলীর বনে।।
বিক্রমে বিশাল বীর সংগ্রামে প্রচণ্ড।
ব্যূহ কাটি ভীষ্মের করিল খণ্ড খণ্ড।।
ব্যূহমধ্যে ছিল যত কুরুসৈন্যগণ।
শিকলি করিয়া বেড়ে ইন্দ্রের নন্দন।।
সহস্র সহস্র রথী বেড়ে চারিদিকে।
নাহিক বম্ভ্রম যেন সিংহ আর মৃগে।।
শেল শূল শক্তি জাঠা মুষল মুদগর।
নানা অস্ত্র এড়ে কৃষ্ণার্জ্জুনের উপর।।
শীঘ্রহস্ত ধনঞ্জয় কুন্তীর নন্দন।
শরে শর হানিয়া করিল নিবারণ।।
আকাশেতে প্রশংসা করিল দেবগণ।
ধন্য ধন্য মহাবীর ইন্দ্রের নন্দন।।
তবে পার্থ মহারথা পূরিল সন্ধান।
বাছিয়া বাছিয়া মারে দিব্য দিব্য বাণ।।
বড় বড় বীরে বিন্ধে চোখ চোখ বাণে।
সপ্তম-দিবস ‍যুদ্ধ না হয় বর্ণনে।।
আগু হৈয়া দুঃশাসন প্রবেশিল রণে।
শিখণ্ডী-উপরে করে বাণ বরিষণে।।
আষাঢ় শ্রাবণে যেন বর্ষে জলধর।
নানাবিধ অস্ত্র ফেলে শিখণ্ডী উপর।।
শেল শূল শক্তি জাঠা মুষল মুদগর।
পরিঘ ভূষণ্ডী গাদ নারাচ তোমর।।
নাহি ভুরূক্ষেপ কিছু দ্রুপদ নন্দন।
অস্ত্রে অস্ত্র কাটি বাণ কৈল নিবারণ।।
মহা বাতাঘাতে যেন কদলীর বন।
অস্থির সমরে যেন প্রচণ্ড তপন।।
সংগ্রামে প্রচণ্ড বীর শিখণ্ডী দুর্জ্জয়।
নব বাণ মারি বিন্ধে গান্ধারী-তনয়।।
দুই বাণে ধ্বজচ্ছত্র কৈল খণ্ড খণ্ড।
ধনু কাটি দুঃশাসনে কৈল লণ্ডভণ্ড।।
চারি অশ্ব কাটি করে সিংহের গর্জ্জন।
রণমধ্যে অপমান পাইল দুঃশাসন।।
বায়ুবেগে শিখণ্ডীকে কাটিতে চাহিল।
খড়্গ চর্ম্ম হাতে বীর সম্মুখে আসিল।।
মৃগ বধিবারে যেন ধায় মৃগপতি।
আগু হৈয়া রক্ষা কৈল ভীম মহামতি।।
মহাবীর শিখণ্ডী পাইয়া অবসর।
দশ বাণে বিন্ধে দুঃশাসন কলেবর।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির বহে দুঃশাসন বীর।
শকুনির রথে চড়ি হইলা সুস্থির।।
তবে ত শকুনি ক্রোধে পুরিল সন্ধান।
শিখণ্ডীর শরীরে মারিল দশ বাণ।।
অষ্ট বাণে ধ্বজচ্ছত্র কাটিয়া পাড়িল।
দুই বাণে সারথিরে পরাণে মারিল।।
বিরথ শিখণ্ডী হৈল সমর ভিতর।
আগু হৈয়া রক্ষা কৈল সুভদ্রা-কোঙর।।
অভিমন্যু চেকিতান সাত্যকি সুধীর।
রণমধ্যে নিকষিল তিন মহাবীর।।
গান্ধার সুবল সৈন্য যতেক আছিল।
শরে হানি তিন বীর খণ্ড খণ্ড কৈল।।
রথী মহারথিগণ পদাতি অপার।
আশোয়ার গজ বাজি করিল সংহার।।
সৈন্যের বিপদ দেখি সুবল ভূপতি।
নানা অস্ত্রে সাত্যকিরে বিন্ধে শীঘ্রগতি।।
রুষিল সাত্যকি বীর সমরে প্রচণ্ড।
রথধ্বজ সুবলের কৈল খণ্ড খণ্ড।।
পুনরপি নব বাণ এড়ে এক চাপে।
সারথির মাথা কাটি ফেলে বীর দাপে।।
চারি অশ্ব কাটিয়া করিল সিংহনাদ।
পাণ্ডবের দলে হৈল জয় জয় বাদ।।
তবে ত সুবল রাজা রণে ধনু ধরি।
সাত্যকির রথ কাটে অষ্ট বাণ মারি।।
বিরথ হইল লজ্জা পাইল মহামতি।
অভিমন্যু রথে চড়ি পাইল অব্যাহতি।।
তবে দ্রোণ মহাবল পুত্রের সহিত।
পাঞ্চাল সৈন্যের মধ্যে হৈল উপনীত।।
পাঞ্চালের উপরে করিল মহামার।
দৃষ্টি করি ধৃষ্টকেতু ধাইল সত্বর।।
রুষ্ট হৈল ধৃষ্টকেতু সমরে প্রচণ্ড।
দ্রোণপুত্রে বিন্ধিলেক যেন কালদণ্ড।।
সর্ব্বাঙ্গ বহিয়া পড়ে রুধিরের ধার।
তথাপি ভ্রুক্ষেপ নাহি দ্রোণের কুমার।।
ধৃষ্টকেতু উপরে করেন শরজাল।
দ্রোণের সহিত যুঝে প্রধান পাঞ্চাল।।
মহাবল ধৃষ্টদ্যুম্ন সমরে প্রখর।
দ্রোণের সহিত যুঝে অতি মনোহর।।
শরে শরে অন্ধকার হইল অম্বরে।
দুই দল কম্পমান দোঁহার সমরে।।
ক্রোধ হৈল দ্রোণগুরু হাতে লৈল বাণ।
দিব্য দশ বাণ এড়ে প্রধান প্রধান।।
চৈতন্য হরিল বীর দ্রুপদ-কুমার।
রথ লয়ে সারথি হইল আগুসার।।
রথী মূর্চ্ছা দেখি রথ ফিরায় সারথি।
সিংহনাদ কৈল দ্রোণগুরু মহামতি।।
অবসর পেয়ে গুরু এড়ে নানা শর।
বরিষা কালেতে যেন বর্ষে জলধর।।
কারো হস্ত পদ কাটে কারো কাটে শির।
নাসা শ্রুতি কাটিয়া পড়িল কোন বীর।।
মধ্যদেশ দুই খণ্ড করিল কাহার।
পাঞ্চালের বহু সৈন্য করিল সংহার।।
কালাগ্নি সমান শিক্ষা দ্রোণ মহামতি।
সহস্র সহস্র সংহারিল মহারথী।।
দ্রোণের বিক্রমে পাঞ্চালের সেনাগণ।
রণে ভঙ্গ দিয়া পলাইল সর্ব্বজন।।
বহু মতে রাখিতে নারিল যুধিষ্ঠির।
কতক্ষণে মোহ ভাঙ্গে ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর।।
আশ্বাসিয়া নিজ সৈন্য করিল স্থগিত।
দ্রোণের সাক্ষাতে গিয়া হৈল উপনীত।।
ক্রোধে ভীম প্রবেশিল কুরুসৈন্য মাঝে।
গজেন্দ্রমণ্ডলে যেন কেশরী বিরাজে।।
বিচিত্র ধনুক আদি বহু অস্ত্রগণ।
পবন বিক্রম বীর পবন নন্দন।।
কাহার ধনুক কাটে কারো কাটে তনু।
কাহার কবচ কাটে কারো কাটে জানু।।
মধ্যদেশ দুই খণ্ড হৈল কোন বীর।
মুকুট সহিত কারো কাটি পাড়ে শির।।
গজমুণ্ড কাটি পাড়ে মাহুত সহিতে।
চারি পদ কাটি কারে পাড়িল ভূমিতে।।
ভীমের বিক্রমে ভীষ্ম পায় অপমান।
দেখে ভঙ্গ দিল সৈন্য লইয়া পরাণ।।
ভঙ্গ দিল কুরুসৈন্য সংগ্রাম ত্যজিয়া।
যুঝিবারে দুর্য্যোধন আইল ক্রোধ হৈয়া।।
আশ্বাসিয়া সর্ব্ব সৈন্য কৌরব-নন্দন।
ভীমের উপরে করে বাণ বরিষণ।।
হাসি বীর বৃকোদর পবন-নন্দন।
গজেন্দ্র পাইয়া হর্ষ পঞ্চাস্য যেমন।।
আকর্ণ পূরিয়া দিল ধনুকে টঙ্কার।
পুনরপি মারি বাণ বিন্ধে কলেবর।।
কবচ ভেদিয়া অস্ত্র ছেদিল শরীর।
তূণযুগ কবচাদি ভূষিত রুধির।।
সর্ব্বাঙ্গে রুধির ধারা হৈল অচেতন।
রথ লয়ে সারথি পলায় ততক্ষণ।।
নৃপে ভঙ্গ দেখিয়া ত্রাসিত সৈন্যগণ।
ভঙ্গ দিয়া লৈল সবে ভীষ্মের শরণ।।
শক্তি করি ভীষ্ম সৈন্য না পারে রাখিতে।
জল স্থির নহে যেন বালির বান্ধেতে।।
কতক্ষণে দুর্য্যোধন পাইল চেতন।
আশ্বাস করিয়া স্থির কৈল সেনাগণ।।
শীঘ্রগতি আইল রাজা ভীষ্মের গোচর।
কান্দিতে কান্দিতে কহে কপট উত্তর।।
অঙ্গীকার কৈলে তুমি সভা বিদ্যমানে।
রণমধ্যে পরাজিবে পাণ্ডুর নন্দনে।।
তব বাক্য মিথ্যা হৈল মোর কর্ম্মদোষে।
উপরোধে পাণ্ডবেরে না মার বিশেষে।।
কুরুবংশ-বর তুমি কুরুবংশপতি।
ধর্ম্মভয় চিন্তি তোমা কৈনু সেনাপতি।।
অগ্রে যদি সৈনাপত্য দিতাম কর্ণেরে।
মুহূর্ত্তেকে সংহারিত সব পাণ্ডবেরে।।
মহাপরাক্রমে বীর রাধার নন্দন।
পরশুরামের শিষ্য অতি বিচক্ষণ।।
দিব্য অস্ত্র শিক্ষা বীর প্রতাপে প্রচণ্ড।
দৃষ্টিমাত্র করিত পাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড।।
তারে উপেক্ষিনু আমি তোমার বিচারে।
অগ্রযুদ্ধে সেনাপতি করিনু তোমারে।।
উপরোধে পাণ্ডবেরে না মারহ রণে।
আপন সাক্ষাতে দেব দেখ বিদ্যমানে।।
লণ্ডভণ্ড কৈল মোর অপ্রমিত সেনা।
তুমি দ্রোণ দুর্জ্জয় থাকিতে দুই জনা।।
সংগ্রামে পূজিত তুমি জগতে বাখান।
হেন অপৌরুষ কর্ম্ম কর বিদ্যমান।।
এত শুনি কহে ভীষ্ম গঙ্গার নন্দন।
ক্রোধে দুই চক্ষু যেন অরুণ বরণ।।
পূর্ব্বেতে কহিনু তোরে সভার ভিতর।
না শুনিলে মোর কথা করি অনাদর।।
ধৃতরাষ্ট্র কহিল আচার্য্য মহামতি।
কৃপাচার্য্য অশ্বত্থামা বাহ্লীক প্রভৃতি।।
ভৃগুরাম নারদাদি ব্যাস তপোধন।
আপনি বুঝালো তোমা দেব নারায়ণ।।
গান্ধারী বিদুর আদি বুঝালো অপার।
কার বাক্য না শুনিলে করি অহঙ্কার।।
তার ফল ভুঞ্জ এই দেখহ সাক্ষাতে।
কার শক্তি পাণ্ডবেরে সমরে জিনিতে।।
ভ্রাতৃ বন্ধু ক্ষত্রকুল সবংশে নিধন।
তব দোষে কুলক্ষয় হবে দুর্য্যোধন।।
দেব হৈতে জন্ম পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।
দেবের বিক্রম পঞ্চ দেব-অবতার।।
পরাক্রমে বাসুদেব সম পঞ্চজনে।
কাহার শকতি তারে জিনিবেক রণে।।
ইন্দ্র সহ আইসে যদি ‍দিক্ পালগণে।
তথাপি জিনিতে নারে পাণ্ডুর নন্দনে।।
বৃদ্ধ হয়ে শক্তিমত যতেক করিনু।
সপ্ত দিন পাণ্ডবের সহ যুদ্ধ কৈনু।।
এত বলি হৃদয়ে ভাবিল মহামতি।
পুনরপি দুর্য্যোধন বলিল ভারতী।।
আশ্বাসিয়া কহে দৃঢ় শুনহ বচন।
স্থির হও দুর্য্যোধন না কর ক্রন্দন।।
প্রতিজ্ঞা করি যে আমি তোমার গোচর।
বিদ্যমানে আজি মোর দেখিবে সমর।।
একেশ্বর পাণ্ডবে করিব পরাভব।
পূর্ব্বে বলি পরাজিল যেমন বাসব।।
সঞ্জয় বলেন, রাজা শুন একমনে।
এত বলি গঙ্গাপুত্র প্রবেশিল রণে।।
হৃদয়ে আনন্দ হৈল রাজা দুর্য্যোধন।
রথ চালাইয়া ভীষ্ম যথা কৃষ্ণার্জ্জুন।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
শুনিলে অধর্ম্ম খণ্ডে জন্মে দিব্য জ্ঞান।।
কাশীরাম দাস কহে রচিয়া পয়ার।
অবহেলে শুনে যেন সকল সংসার।।