০৬০. দুর্য্যোধনকে পরিত্যাগ করিতে বিদুরের মন্ত্রণা দান ও দুঃশলারজন্ম বিবরণ

বিদুর বলেন, অবধান মহারাজ।
যত অমঙ্গল দেখি, ভাল নহে কাজ।।
ইথে প্রায়শ্চিত্ত রাজা কিছু নাহি আর।
তবে সে মঙ্গল হয়, ত্যজ এ কুমার।।
কুলের অন্তক রাজা! এ পুত্র তোমার।
ইহাকে পালিলে দুঃখ পাইবা অপার।।
নিজ-কুল হিত যদি চিন্তহ রাজন্।
এক ঊন হৌক তবে শতেক নন্দন।।
কুলাঙ্গার এই শিশু-তোমার যে হৈল।
নিশ্চয় জানিহ, এই অধর্ম্ম জন্মিল।।
কুলের কারণ রাজা ত্যজি একজন।
কুল ত্যাগ করি রাজা গ্রামের কারণ।।
গ্রাম ত্যজি শুন রাজা জনপদ-হিতে।
পৃথিবীকে ত্যজি রাজা আপনা রাখিতে।।
হেন নীতি আছে রাজা কহে পূর্ব্বাপর।
জ্যেষ্ঠ পুত্র মারি বংশ রাখ নৃপবর।।
এতেক বচন যদি বিদুর বলিল।
পুত্রস্নেহে ধৃতরাষ্ট্র শুনি না শুনিল।।
তবে আর ঊনশত হইল নন্দন।
হেনমতে হৈল ভাই একশত জন।।
একশত পুত্র হৈল কন্যা এক গণি।
শুনি মুনিবরে জিজ্ঞাসিল নৃপমণি।।
আপনি বলিলা ব্যাসদেবের যে বরে।
একশত পুত্র হবে গান্ধারী-উদরে।।
অধিক হইল কন্যা কিসের কারণ।
ইহার বৃত্তান্ত মোরে কহ তপোধন।।
মুনি বলে, শুন তত্ত্ব শ্রীজন্মেজয়।
যখন বিভাগ করে ব্যাস মহাশয়।।
সতী পতিব্রতা দেবী সুবল-নন্দিনী।
মনেতে বাঞ্ছিল, এক কন্যা দেহ মুনি।।
শুনিয়াছি স্ত্রীলোকের কন্যায় পীরিত।
দানেতে অক্ষয় স্বর্গ আছে হেন নীত।।
শত পুত্র বর দিল ব্যাস মহামুনি।
নাহিক সন্দেহ পুত্র হইবে এখনি।।
কায়মনোবাক্যে যদি হই আমি সতী।
পতিব্রতা হই আমি পতি মোর গতি।।
ব্রাহ্মণেরে গবী দিয়া থাকি কোটি কোটি।
তবে মোর ইথে কন্যা হবে একগুটি।।
ব্রত তপ করে থাকি গুরুর সেবন।
যদি কভু পূজে থাকি দেব-দ্বিজগণ।।
গান্ধারী মানস আর বিধির সৃজন।
মাংসপিণ্ড ব্যাসদেব করিল সিঞ্চন।।
একশত এক ভাগ মাংসপিণ্ড হৈল।
দেখি মহামুনি ব্যাস গান্ধারীকে কৈল।।
আমার বচন বধূ কভু মিথ্যা নয়।
এই দেখ পাইলাম শতেক তনয়।।
একখানি অধিক যে সুবল-নন্দিনী।
তোমার মানস হৈতে হৈল একখানি।।
শুনি হরষিত হৈল সুবল-দুহিতা।
সে কারণে অধিক হইল এক সুতা।।
অন্যা ধৃতরাষ্ট্র-ভার্য্যা বৈশ্যের কুমারী।
বহু সেবা ধৃতরাষ্ট্রে করিলা সুন্দরী।।
তাহার উদরে হৈল একটি নন্দন।
যুযুৎসু বলিয়া নাম জানে সর্ব্বজন।।
হেনমতে একত্রেতে শত শহোদর।
সবে মহাবলবন্ত পরম সুন্দর।।
বিবাহ করিল সবে রাজার কুমারী।
জয়দ্রথে সমর্পিল দুঃশলা সুন্দরী।।
কৌরবের জন্মকথা কহিলাম সব।
বলি শুন পাণ্ডবের যেমত উদ্ভব।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
একমনে শুনিলে তরয়ে ভব-বারি।।
ইহার শ্রবণে যত সুখ লভে নর।
এমত নাহিক সুখ ত্রৈলোক্য-ভিতর।।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কহে রচিয়া পয়ার।
ভক্তিভরে শুনে যেন সকল সংসার।।
শুন শুন সাধু-সুধী হয়ে একমন।
অপূর্ব্ব ভারত-গাথা ব্যাসের রচন।।