০৫০. পুরুবংশ কথন

জন্মেজয় বলে, স্বর্গে গেল নৃপবর।
পুরুকে করিল রাজা রাজ্যের ঈশ্বর।।
আর চারি পুত্রে শাপ দিল নরপতি।
কি কর্ম্ম করিল তারা, কহ মহামতি।।
মুনি বলে, যদু হৈতে জন্মিল যাদব।
তুর্ব্বসু হইতে সব যবন-উদ্ভব।।
দ্রুহ্যু হৈতে হৈল উৎপত্তি ভোজ-বংশ।
অনুর ঔরসে জন্ম ম্লেচ্ছ-অবতংস।।
পুরুর ঔরসে জন্ম হইল পৌরব।
বংশে যাঁর নিজে হইয়াছেন উদ্ভব।।
তপ-জপ-যজ্ঞ-ব্রত-ধর্ম্মেতে তৎপর।
পুরুর যতেক কর্ম্ম লোকে-অগোচর।।
পুরুরাজ পাটেশ্বরী পৌষ্টী নাম ধরে।
তিন পুত্র জন্মাইল তাহার উদরে।।
প্রবীর প্রধান পুত্রে দির রাজ্যভার।
শূরসেনী নামে কন্যা বনিতা তাঁহার।।
তাঁর পুত্র মনস্যু হইল নরবর।
তিন পুত্র হৈল তাঁর পরম সুন্দর।।
তিন পুত্র মধ্যে হৈল রাজা সংহনন।
মিশ্রকেশী-গর্ভে জন্মিলেক দশ জন।।
দশ পুত্র মধ্যে রাজা হইল মতিনার।
তংসু আদি চারি পুত্র হইল তাঁহার।।
ঈলিন তংসুর পুত্র বল মহাতেজা।
তাঁর পঞ্চ পুত্রে জ্যেষ্ঠ দুষ্মন্ত হৈল রাজা।।
শকুন্তলা ভার্য্যা তাঁর বিখ্যাত সংসার।
ভরত নামেতে পুত্র হেইল তাঁহার।।
ভরতের গুণ কর্ম্ম কহিতে বিস্তার।
ভূমন্যু বলিয়া পুত্র হইল তাঁহার।।
সুহোত্র বলিয়া রাজা তাহাতে উৎপত্তি।
তাঁর পুত্র হস্তী নামে পায় প্রতিপত্তি।।
বসাইল আপনার নামেতে নগর।
হস্তিনা বলিয়া নাম ভুবন ভিতর।।
অজমীঢ় মহারাজ হ্স্তীর-নন্দন।
তাঁর পৌত্র রাজা হৈল নাম সম্বরণ।।
সম্বরণ-রাজ্যকালে হৈল অনাবৃষ্টি।
দুর্ভিক্ষ হইল লোকে লুপ্তপ্রায় সৃষ্টি।।
পাঞ্চাল- দেশের রাজা বলে নিল দেশ।
সম্বরণ করিলেন বনেতে প্রবেশ।।
সিন্ধু-নদী-কূলে হিমালয়ের নিকটে।
সহস্র বৎসর তথা রহিল সঙ্কটে।।
কৃপা করি বশিষ্ঠ সহায় হৈল তাঁর।
পুনরপি রাজ্য-প্রাপ্ত হইল তাঁহার।।
নানা যজ্ঞ দান তবে করিল নৃপতি।
তাঁর জায়া সূর্য-কন্যা নামেতে তপতী।।
তাঁহার নন্দন কুরু বিখ্যাত ভূতলে।
কুরুক্ষেত্র কৈল রাজা নিজ পুণ্য ফলে।।
জন্মেজয়-আদি করি পঞ্চ পুত্র তাঁর।
ধৃতরাষ্ট্র রাজা জন্মেজয়ের কুমার।।
প্রতীপ নামেতে ধৃতরাষ্ট্রের নন্দন।
তিন পুত্র হৈল তাঁর বিখ্যাত ভুবন।।
দেবাপি শান্তনু বাহ্লীক যে নাম হয়।
তিন পুত্র প্রতীপের ঔরসে জন্মায়।।
জ্যেষ্ঠ পুত্র দেবাপি সন্ন্যাস-ধর্ম্ম নিল।
শৈশব-কালেতে সেই অরণ্যে পশিল।।
শান্তনু দ্বিতীয় পুত্র হৈল নরপতি।
গঙ্গাগর্ভে তাঁর পুত্র ভীষ্ম মহামতি।।
বিবাহ না করে ভীষ্ম, বংশ না হইল।
সত্যবর্তী কন্যারে পিতাকে বিভা দিল।।
তাঁর গর্ভে শান্তনুর যুগল কুমার।
চিত্রাঙ্গদ প্রথম বিচিত্রবীর্য্য আর।।
গন্ধর্ব্বে মারিল জ্যেষ্ঠ চিত্রাঙ্গদ বীরে।
সে রাজ্য বিচিত্রবীর্য্য হৈল দণ্ডধরে।।
বংশ না হইতে তাঁর হইল নিধন।
পুনর্ব্বার বৃদ্ধি কৈল ব্যাস তপোধন।।
ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডু আর বিদুর সে নামে।
ধৃতরাষ্ট্র পুত্র হৈল একশত ক্রমে।।
ভ্রাতৃ সহ যুদ্ধে তারা হইল সংহার।
বংশরক্ষা হেতু হৈল পাণ্ডুর কুমার।।
দেব-বরে পঞ্চপুত্র পাণ্ডুর হইল।
যাঁদের মহিমা-যশে পৃথিবী পূরিল।।
যুধিষ্ঠির ভীম আর বীর ধনঞ্জয়।
নকুল সুরূপ সহদেব মহাশয়।।
অর্জ্জুনের পুত্র হৈল সুভদ্রা-উদরে।
যৌবনে মরিল সেই ভারত-সমরে।।
তাঁর ভার্য্যা উত্তরা আছিলা গর্ভবতী।
পরীক্ষিত মহারাজ তাহাতে উৎপত্তি।।
আপনি হইলা তুমি তাঁহার নন্দন।
তোমার নন্দন এই দেখ দুই জন।।
শতানীক আর শঙ্কু দুই সহোদর।
অশ্বমেধদত্ত শতানীকের কোঙর।।
পুরুবংশ সবিস্তারে যেই জন শুনে।
আয়ুর্যশ পুণ্য তার বাড়ে দিনে দিনে।।