০৪৩. শুক্রস্থানে কচের বিদ্যাশিক্ষা

জন্মেজয় বলে, কহ ইহার কারণ।
শুক্রস্থানে কোন্ দোষ করিলা রাজন।।
কি কারণে শাপ দিল ভৃগুর কুমার।
সে সব চরিত্র কহ করিয়া বিস্তার।।
মুনি বলে, অবধান কর নরবর।
দেবাসুরে মহাযুদ্ধ হয় নিরন্তর।।
নিজ নিজ হিত দোঁহে বাঞ্ছা করি মন।
দুই জনে পুরোহিত কৈল নিয়োজন।।
বৃহস্পতি পুরোহিত করেন বাসব।
দৈত্যবংশে পুরোহিত হইল ভার্গব।।
যুদ্ধে যত দৈত্যবধ করে যত দেবে।
সকল জীয়ান শুক্র মন্ত্রের প্রভাবে।।
সঞ্জীবনী মন্ত্রে ভৃগু-পুত্রের অভ্যাস।
যত মরে তত জীয়ে, নাহিক বিনাশ।।
যুদ্ধে যত দেবগণ হইত নিধন।
নারিতেন বাঁচাইতে অঙ্গিরা নন্দন।।
শুক্রের প্রতাপে দেবগণ করয়ে বিচার।
কচ নামে ছিল বৃহস্পতির নন্দন।
তাহারে বলিল তবে সব দেবগণ।।
সঞ্জীবনী-মন্ত্র জানে ভৃগুর নন্দন।
উপায় করিয়া কর সে মন্ত্র গ্রহণ।।
বৃষপর্ব্ব-পুরে হয় শুক্রের বসতি।
তোমা বিনা যাইতে না পারে কোন কৃতী।।
শিষ্য হৈয়া শুক্র-স্থানে কর অধ্যয়ণ।
দেবযানী তাঁর কন্যা করিবে সেবন।।
এত যদি বলিল সকল দেবগণ।
বৃষপর্ব্ব-পুরে কচ করিল গমন।।
শুক্রের চরণে কচ করি লমস্কার।
প্রত্যক্ষেতে পরিচয় দিল আপনার।।
অঙ্গিরার পৌত্র আমি, জীবের নন্দন।
পড়িবারে আইলাম তোমার সদন।।
এত শুনি শুক্র তাঁরে দিলেন আশ্বাস।
পড়াব সকল শাস্ত্র যেই অভিলাষ।।
শুক্রের আশ্বাসে কচ আনন্দিত-মন।
ব্রহ্মচর্য্য পালি বিদ্যা করেন পঠন।।
বিবিধ প্রকারে কচ শুক্রে সেবা করে।
ততোধিক সেবে কচ তাঁহার কন্যারে।।
কর-যোড়ে থাকে কচ দেবযানী-আগে।
অবিলম্বে আনে কচ কন্যা যাহা মাগে।।
নৃত্য-গীত বাদ্যে সদা তোষে তাঁর মন।
আজ্ঞাবর্ত্তী হৈয়া পাশে থাকে অনুক্ষণ।।
হেনমতে পঞ্চশত বৎসর যে গেল।
গাভী রাখিবারে শুক্র কচে নিয়োজিল।।
গোধন-রক্ষণে কচ নিত্য যার বনে।
দৈত্যগণ তাঁহারে দেখিল এক দিনে।।
জানিল কচেরে দেব-গুরুর নন্দন।
মায়া করি আসিয়াছে মন্ত্রের কারণ।।
তবে সব দৈত্যগণ কচেরে ধরিয়া।
তীক্ষ্ণ খড়্গে খণ্ড খণ্ড করিল কাটিয়া।।
অস্থি-মাংস যতেক শার্দ্দূলে খাওয়াইল।
কচে মারি দৈত্যগণ নিজ ঘরে গেল।।
সন্ধ্যাকালে গাভীগাণ প্রবেশে নগরে।
কচ নাহি, গাভীগণ প্রবেশিল ঘরে।।
কচ নাহি, দেবযানী হইল চিন্তিত।
কান্দিয়া পিতার ঠাঁই জানায় ত্বরিত।।
গোধন ফিরিল গৃহে, কচ না আইল।
সিংহ ব্যাঘ্র কিম্বা দৈত্যে তাঁহারে মারিল।।
কচের বিহনে আমি ত্যজিব জীবন।
এত বলি দেবযানী করেন ক্রন্দন।।
শুক্র বলে, দেবযানী না কর ক্রন্দন।
মন্ত্রবলে কচে আমি জীয়াব এখন।।
এস কচ বলি শুক্র তিন ডাক দিল।
মন্ত্রের প্রভাবে কচ আসি উত্তরিল।।
কচে দেখি দেবযানী আনন্দিত-মন।
জিজ্ঞাসিলা কোথায় আছিলা এতক্ষণ।।
কচ বলে, দৈত্যগণ আমারে মারিল।
প্রসন্ন হইয়া গুরু পুনঃ জিয়াইল।।
এত শুনি দেবযানী পিতাকে কহিল।
গোধন-রক্ষণ হেতু নিষেধ করিল।।
ভারতের কথা হয় শ্রবণে অমৃত।
পাঁচালী-প্রবন্ধে কাশীদাস-বিরচিত।।