০৩৮. বিষ্ণুর পরশুরাম অবতার গ্রহণ

হরি হরি শব্দ করি শুন একচিতে।
প্রথমেতে সবাকার রক্ষা যেই মতে।।
পৃথিবীর মধ্যে ক্ষত্র হইল অপার।
মহামত্ত হৈয়া সবে করে কদাচার।।
লোকহিংসা হসিতে না পারি জনার্দ্দন।
ভৃগুবংশে হইলেন প্রকাশ তখন।।
করেতে কুঠার জমদগ্নির কুমার।
নিঃক্ষত্রা করিল ক্ষিতি তিন সম্প বার।।
ক্ষত্রবলে ক্ষিতি মধ্যে না রাখিল রাম।
মারিল দুগ্ধের শিশু ক্ষত্র যার নাম।।
ব্রাহ্মণেরে রাজ্য দিয়া গেল তপোবন।
বিপ্রগৃহে প্রবেশিল ক্ষত্রিয় স্ত্রীগণ।।
রাজকর্ম্ম বিপ্রগণে সম্ভব না হয়।
সে কারণে সমুৎপন্ন ক্ষেত্রজ তনয়।।
ক্ষত্র মাতা বিপ্র পিতা হইল কুমার।
পুনঃ ক্ষিতিমধ্যে হৈল ক্ষত্রিয় সঞ্চার।।
নিষ্পাপ হইল সবে পরম ধার্ম্মিক।
ধর্ম্মেতে বাড়িল বংশ, হইল অধিক।।
ধর্ম্মেতে করিল সবে প্রজার পালন।
রাজ্যে না রহিল আর অকাল মরণ।।
নিজ নিজ বৃত্তিতে করেন সবে কর্ম্ম।
ব্রাক্ষণ ক্ষত্রিয় বৈশ্য শূদ্রে যেই ধর্ম্ম।।
পাপের প্রসঙ্গ নাহি, ধর্ম্মেতে তৎপর।
সাগর অবধি ক্ষিতি পূর্ণ হৈল নর।।
স্বর্গের বৈভব পূর্ণ হৈল ক্ষিতিমাঝ।
রাজগণ হইল দ্বিতীয় দেবরাজ।।
অনন্তর যতেক দানব-দৈত্যগণ।
দেব হৈতে পরাভব হইল যখন।।
সুখ-ভোগ্য-স্থান ক্ষিতি দেখি মনোরম।
ভোগের কারণে নিল মনুষ্য-জনম।।
জন্মিয়া পৃথিবী মধ্যে হইল প্রবল।
তপ জপ যজ্ঞ দান হিংসিল সকল।।
দানবের ভার ধরা না পারি সহিতে।
ব্রহ্মারে জানায় গিয়া বিষাদিত চিতে।।
কাতরে কহেন সব বিনয়-বচনে।
অবিরল অশ্রুজল ঝরে দু-নয়নে।।
ক্ষিতির রোদন দেখি কমল-আসন।
পৃথিবীরে কহিলেন প্রবোধ বচন।।
না কর ক্রন্দন তুমি, স্থির কর মন।
উপায়ে তোমার কার্য্য করিব সাধন।।
তোমার উদ্ধারে মিলি সব দেবগণে।
নবরূপে জন্মাইব অসুর নিধনে।।
এত বলি পৃথিবীরে করিয়া মেলানি।
দেবগণে লৈয়া যুক্তি করে পদ্মযোনি।।
প্রবল অসুরগণে হৈল ক্ষিতিভার।
হরি বিনা কার শক্তি করিতে সংহার।।
চল সবে, কহি গিয়া দেব নারায়ণে।
এত বলি ব্রহ্মা সহ যত দেবগণে।।
ঊর্দ্ধ বাহু করি স্তুতি করে প্রজাপতি।
কৃপা কর নারায়ণ অনাথের গতি।।
সর্ব্বভূত আত্মা তুমি সবার জীবন।
তোমার আজ্ঞায় সৃষ্টি হইল ভুবন।।
হেন সৃষ্টি নাশ করে দানব প্রবল।
তোমা বিনা রক্ষা নাহি মজিল সকল।।
কাতর হইয়া ব্রহ্মা করিলেন স্তুতি।
করিলেন অনুজ্ঞা কৃপায় লক্ষ্মীপতি।।
তোমার বচনে ব্রহ্মা হৈব অবতার।
আপনি খণ্ডিব আমি অবনীর ভার।।
নিজ নিজ অংশ লৈয়া যত দেবগণ।
সবে জ্ন্ম লও লিয়া গিয়া মনুষ্য ভবন।।
এতেক আকাশ বাণী শুনি প্রজাপতি।
ততক্ষণে আজ্ঞা দিল দেবগণে প্রতি।।
দেবতা গন্ধর্ব্ব আর যত বিদ্যাধরে।
সবে জন্ম লহ গিয়া ধরণী ভিতরে।।
ব্রহ্মার আদেশ পেয়ে যত দেবগণ।
অবনীর মাঝে গিয়া জন্মিলা তখন।।
দেবতা মানব দৈত্য একত্র হইল।
শুনি জন্মেজয় রাজা মুনিরে কহিল।।
কোন্ জন দৈত্য ইথে কেবা দেব নর।
সবিশেষে আমারে সব কহ মুনিবর।।