০৩৬. ব্যাসের পুনরাগমন ও জন্মেজয়ের প্রতি ভারত শ্রবণের উপদেশ প্রদান

অন্তর্য্যামী সর্ব্বজ্ঞ শ্রীবেদব্যাস মুনি।
বর্ণনে না যায় যিনি অপ্রমিত গুণী।।
সত্যবতী-হৃদয়-নন্দন মুনি ব্যাস।
যাঁর মুখ-চন্দ্রে তিন ভুবন প্রকাশ।।
যেই মুখ-পঙ্কজ-গলিত-সুধাধার।
পানেতে তরিল প্রাণী এ ভব-সংসার।।
কনক-পিঙ্গল-জটা বিরাজিত শিরে।
কৃষ্ণ -সর-চর্ম্ম পরিধান কলেবরে।।
অম্বর সম্বরি যে ভারত বাম কাঁখে।
দক্ষিণ বামেতে পাছে মুনি লাখে লাখে।।
জানিয়া রাজার কষ্ট সদয়-হৃদয়।
উপনীত হৈলেন যেখানে জন্মেজয়।।
অধোমুখে আছে রাজা হয়ে শোকাবেশ।
ব্যাসে দেখি লজ্জিত হইল সবিশেষ।।
মুনি বলে অভিমান ত্যজ নরপতি।
মোর বাক্য না শুনিয়া হৈল হেন গতি।।
ব্যাসের বচনে রাজা পাইয়া আশ্বাস।
চরণে পড়িয়া কহে গদগদ ভাষ।।
আমা হেন নিন্দিত নাহিক এ সংসারে।
তোমার বচন নাহি শুনি অহঙ্কারে।।
তার সমুচিত ফল এবে পাইলাম।
দুস্তর-নরক-সিন্ধু মাঝে পড়িলাম।।
কৃপা কর মুনিরাজ! পড়িনু চরণে।
তোমা বিনা তারে মোরে নাহি অনজনে।।
ত্যজিল আমারে ভ্রাতা মন্ত্রী বন্ধুজন।
ত্যজিল যতেক দ্বিজ-পুরোহিতগণ।।
পাপী বলে কহে মোর নিকটে না আসে।
আপনি আইলা কৃপা করি স্নেহবশে।।
আজ্ঞা কর মুনিরাজ! কি করি এখন।
পাপ-সিন্ধু হৈতে মোরে করহ তারণ।।
মুনি বলে, চিত্তে দুঃখ না ভাবিহ আর।
হইবে নিষ্পাপ, ধর বচন আমার।।
ব্রহ্মবধ-আদি পাপ সব হবে ক্ষয়।
অশ্বমেধ-ফল পাবে, নাহিক সংশয়।।
এক লক্ষ শ্লোক মহাভারত রচন।
শুচি হয়ে একমনে করহ শ্রবণ।।
খণ্ডিবেক পাপ-তাপ নাহিক সংশয়।
মোর বাক্য ধর পরীক্ষিতের তনয়।।
কৃষ্ণবর্ণ চন্দ্রাতপ বান্ধহ উপর।
তার তলে ভারত শুনহ নরবর।।
মহাভারতের কথা কীর্ত্তন করিতে।
কৃষ্ণবর্ণ ত্যজি শুক্ল হইবে নিশ্চিতে।।
তব পিতৃ-পিতামহগণের চরিত।
বিবিধ অপূর্ব্ব কথা ভারতে গ্রথিত।।
মহাপুণ্যপ্রদ তত্ত্ব অতুল সংসারে।
করহ শ্রবণ, মুক্ত হবে পাপ-ভারে।।
এত শুনি নৃপমণি আনন্দিত মতি।
ভক্তিভরে মুনিবরে করিয়া প্রণতি।।
বলিলা আমার প্রতি যদি কৃপাবান্ ।
আপনি শুনিতে তবে ভারত-আখ্যান।।
কি হেতু আমার পিতৃ-পিতামহগণ।
জ্ঞাতি সহ যুদ্ধ করি হইল নিধন।।
আপনি আছিলা দেব সে সব সময়।
তবে কেন বিবাদে হইল সব ক্ষয়।।
চিরদিন শুনিতে উৎসুক মম মন।
কহ মোরে মুনিবর ইহার কারণ।।
মুনি বলে, ভারতের কথন বিস্তার।
কহিবারে অবসর নাহিক আমার।।
মুনিশ্রেষ্ঠ শিষ্যশ্রেষ্ঠ এই তপোধন।
ভারতে আমার সম শ্রীবৈশম্পায়ন।।
শুনহ ইহার মুখে ভারত-আখ্যান।
যে আজ্ঞা বলিয়া রাজা করেন সম্মান।।
এত বলি মুনিরাজ গেল নিজ স্থান।
অনুমতি দিয়া শিষ্যে বর্ণিতে পুরাণ।।
অনন্তর নৃপবর ব্যাসের বচনে।
কৃষ্ণবর্ণ চন্দ্রাতপ করে ততক্ষণে।।
তার তলে বসে রাজা লয়ে মন্ত্রিগণ।
চারি জাতি নগরেতে শ্রেষ্ঠ যত জন।।
পূজা করি মুনিবরে নানা উপচারে।
বিনয় বচনে ভূপ জিজ্ঞাসেন তাঁরে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম বিরচিল শুনে পুণ্যবান।।