০১৬. নাগগণের প্রতি কদ্রুর অভিসম্পাত ও বিনতার দাসীত্ব বিবরণ

শৌনকাদি মুনিগণ সৌতিরে পুছিল।
কদ্রু আর বিনতায় কি প্রসঙ্গ হৈল।।
সৌতি বলে, দুই জন দেখি তুরঙ্গম।
সর্ব্ব সুলক্ষণ অশ্ব অতি মনোরম।।
কদ্রু বলে, বিনতা দেখহ অশ্ববর।
কোন্ বর্ণ ধরে অশ্ব পরম সুন্দর।।
বিনতা কহিল, অশ্ব শ্বেতবর্ণ ধরে।
তুমি কোন্ বর্ণ দেখ, কহ দেখি মোরে।।
কদ্রু বলে, কৃষ্ণবর্ণ হয় অশ্ববর।
দুই জনে বিতণ্ডা যে হইল বিস্তর।।
কদ্রু বলে, বিনতা কোন্দল কি কারণ।
দুই জনে এস তবে করি কিছু পণ।।
দাসী হয়ে থাকিবেক যেই জন হারে।
নির্ণয় করিয়া দোঁহে চলি গেল ঘরে।।
অস্ত গেল দিনমণি, দৃষ্টি নাহি চলে।
কল্য আসি তুরঙ্গম দেখিব সকালে।।
এত বলি চলি গেল যে যাহার গৃহে।
পণের কারণে কিন্তু মনস্থির নহে।।
সহস্রেক পুত্রে কদ্রু আনিল ডাকিয়া।
কহিল বৃত্তান্ত যত পুত্রে বসাইয়া।।
পুত্রগণ বলে মাতা কি কর্ম্ম করিলে।
শ্বেতবর্ণ উচ্চৈঃশ্রবা খ্যাত ভূমণ্ডলে।।
কদ্রু বলে, অশ্ব যদি ধবল-আকার।
কৃষ্ণাঙ্গ যেমতে হয়, কর প্রতিকার।।
বিনতার সহ আমি করিয়াছি পণ।
হারিলে হইব দাসী, না হয় খণ্ডন।।
এত শুনি নাগগণ বিরস-বদন।
মায়ের চরণে তবে করে নিবেদন।।
যেমন জননী তুমি তেমন বিনতা।
কপটেতে দিব দুঃখ, ভাল নহে কথা।।
শুনিয়া কুপিল কদ্রু, দিল শাপবাণী।
জন্মেজয়-যজ্ঞে ভ্স্ম হৈবে সব ফণী।।
কদ্রু শাপ দিল যদি, আনন্দিত ধাতা।
ইন্দ্র সহ আনন্দিত যতেক দেবতা।।
বিষম দুর্জ্জয় ফণী লোক-হিংসা করে।
আনন্দে কুসুমবৃষ্টি করে পুরন্দরে।।
বিষের জ্বলনে লোক হয় ত বিনাশ।
রক্ষা-হেতু ব্রহ্মা মন্ত্র করিল প্রকাশ।।
দিব্য মন্ত্র গারুড়ির দিল কশ্যপেরে।
কশ্যপ হইতে প্রচারিল মর্ত্ত্যপুরে।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
কাশীরাম দাস কহে শুনে পুণ্যবান।।