০১৫. সুধাবণ্টন ও রাহু-কেতুর বিবরণ

সৌতি বলে, সাবধানে শুন মুনিগণ।
কহিনু অপূর্ব্ব হরি-হরের মিলন।।
দেবগণ-রক্ষা হেতু দেব ভগবান্।
পুনরপি আইলেন সবা বিদ্যমান।।
হেথা সুরাসুর সবে পাইয়া চেতন।
কোথা কন্যা, কোথা কন্যা, করে অন্বেষণ।।
হেনকালে নারী-বেশে দেখে নারায়ণে।
এই এই বলিয়া ধাইল সর্ব্বজনে।।
চতুর্দ্দিক হইতে ধাইল সুরাসুর।
কন্যারে বেড়িল সবে করি লক্ষপুর।।
চিত্তের পুত্তলী প্রায় চাহে সর্ব্বজন।
ততক্ষণে নারায়ণ বলেন বচন।।
এই ক্ষীর -সিন্ধু মধ্যে আমার বসতি।
মোহিনী আমার নাম, সমুদ্রে উৎপত্তি।।
সহিতে নারিনু অনুক্ষণ কলবর।
কি হেতু কলহ কর তোমরা এ সব।।
এত শুনি কহিতে লাগিল সর্ব্বজন।
অসুর-অমর-দ্বন্দ্ব অমৃত কারণ।।
ভাল হৈল, তোমা সহ হইল মিলন।
আপনি থাকিয়া দ্বন্দ্ব কর নিবারণ।।
বাঁটি দেহ সুধা, দ্বন্দ্ব হৌক সমাধান।
তুমি যে করিবা তাহা না করিব আন।।
কন্যা বলে, এত দ্বন্দ্বে আমার কি কাজ।
কভু না মধ্যস্থ হৈব সুরাসুর-মাঝ।।
আমার বিধান যদি নাহি লয় মন।
সবে ক্রোধ করিলে কি করিব তখন।।
তাহা শুনি ডাকি তবে বলে সর্ব্বজন।
সত্য কহি, না লঙ্ঘিব তোমার বচন।।
এতেক সবার মুখে শুনি দৃঢ়বাণী।
কহিতে লাগিল তবে দেব চক্রপাণি।।
তোমা সবাকার বাক্য না করিব আন।
আনি দেহ সুধাভাণ্ড আমা-বিদ্যমান।।
দুই পংক্তি হইয়া বৈসহ সর্ব্বজন।
একভিতে দৈত্য, একভিতে দেবগণ।।
মায়াবীর মায়াতে মোহিত সর্ব্বজন।
সুধাভাণ্ড আনিয়া দিলেক ততক্ষণ।।
দুই পংক্তি বসিল লইয়া পত্রাসন।
কাঁখে সুধাভাণ্ড করি করেন বণ্টন।।
দেবতার জ্যেষ্ঠ ভাগ বলেন মোহিনী।
দেবে সুধা বিতরিতে যুক্তি আগে মানি।।
দৈত্যগণ বলিল, যেমত তব মতি।
শুনিয়া বাঁটেন সুধা তবে লক্ষ্মীপতি।।
ইন্দ্র যম কুবের আদিত্য হুতাশন।
ইত্যাদি তেত্রিশ কোটি যত দেবগণ।।
সবাকারে ক্রমে সুধা বাঁটিয়া মোহিনী।
অবশেষে যত ছিল খাইল আপনি।।
হেনকালে ডাকিয়া বলেন রবি শশী।
দেখ দেখ রাহু-দৈত্য সুধা খায় আসি।।
শুনি সুদর্শনে আজ্ঞা দেন নারায়ণ।
চক্রেতে অসুর-মুণ্ড করিল ছেদন।।
তথাপি না মরিলেক সুধাপান হেতু।
মুখ হৈল রাহু, কলেবর হৈল কেতু।।
দৈত্যে মারি সুধা হরি হৈল অন্তর্ধান।
দেখি ক্রোধে কম্পাম্বিত হৈল দৈত্যগণ।।
মারহ অমরগণে বলিয়া উঠিল।
প্রলয়কালেতে যেন সিন্ধু উথলিল।।
নানা অস্ত্র শস্ত্র সবে বরিষে প্রচুর।
কে বর্ণিতে পারে যুদ্ধ কৈল সুরাসুর।।
সুধাপানে বলবান্ যতেক অমর।
মথনেতে দৈত্যগণ ক্লান্ত কলেবর।।
না পারিয়া ভঙ্গ দিয়া গেল দৈত্যজন।
আপন আলয়ে চলি গেলা দেবগণ।।
ভারতের পুণ্যকথা শুনে পুণ্যবান।
কাশীরাম কহে, কলি-ভয়ে পরিত্রাণ।।