২৩৩. স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্তব্য

২৩৩তম অধ্যায়

স্বামীর প্রতি স্ত্রীর কর্ত্তব্য

দ্ৰৌপদী কহিলেন, “সখি! স্বামীর চিত্ত অনুরঞ্জন ও আকর্ষণ করিবার যে অব্যর্থ উপায় বলিতেছি, তদনুরূপ কাৰ্য্য করিলে তোমার স্বামী আর কখনও অন্য নারীর মুখাবলোকন করিবেন না। পতিই পরমদেবতা; পতির ন্যায় দেবতা আর কুত্রাপি দৃষ্টিগোচর হয় না; অতএব তাঁহার প্রসাদে সমস্ত মনোরথ সফল হয়, কোপসমুদয় বিনষ্ট হয়, তাহা হইতেই অপত্য, বিবিধ বিষয়োপভোগ, উত্তম শয্যা, বিচিত্র আসন, বসন, গন্ধ, মাল্য, স্বৰ্গ, পুণ্যলোক ও মহতী কীর্ত্তি লাভ হইয়া থাকে। সুখের সময় সুখলাভ হয় না, সাধবী স্ত্রী প্রথমতঃ দুঃখভোগ করিয়া পরিশেষে সুখভাগিনী হয়।

“তুমি কৃষ্ণের প্রতি প্রতিদিন অকৃত্রিম প্ৰণয়প্রকাশপূর্ব্বক রমণীয় বেশভূষা, সুচারু ভোজন দ্রব্য, মনোহর গন্ধ-মাল্য প্ৰদানদ্বারা তাঁহার আরাধনা করিলে তিনি আপনাকে তোমার পরম প্রণয়াস্বদ বিবেচনা করিয়া অবশ্যই তোমার প্রতি অনুরক্ত হইবেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। দ্বারদেশাগত স্বামীর কণ্ঠস্বর শ্রবণ করিবামাত্র গাত্ৰোত্থানপূর্ব্বক গৃহমধ্যে দণ্ডায়মান থাকিবে, অনন্তর তিনি গৃহপ্রবিষ্ট হইলেই পাদ্য ও আসন প্রদানপূর্ব্বক তাঁহার অভ্যর্থনা করিবে। তিনি কোন কাৰ্য্যের নিমিত্ত দাসীকে নিয়োগ করিলে তুমি স্বয়ং উত্থিত হইয়া সেই কাৰ্য্য সম্পাদন করবে। তোমার এই প্রকার সদ্ব্যবহারসন্দর্শনে কৃষ্ণ তোমাকে অবশ্যই সাতিশয় পতিপরায়ণ জ্ঞান করিবেন। পতি তোমার নিকট যাহা কহিবেন, তাহা গোপনীয় না হইলেও তুমি কদাচ প্রকাশ করিবে না, কারণ, তোমার সপত্নী যদি কখন সেই কথা কৃষ্ণকে বলে, তাহা হইলে তিনি তোমার প্রতি বিরক্ত হইতে পারেন।

“যে-সমস্ত ব্যক্তি স্বামীর প্রণয়পাত্ৰ, সতত অনুরক্ত ও হিতসাধনে নিযুক্ত, বিবিধ উপায়দ্বারা তাঁহাদিগকে ভোজন করাইবে এবং প্ৰযত্নাতিশয়-সহকারে স্বামীকে দ্বেষ্য, বিপক্ষ, অহিত্যাচারী ও কুহকীদিগের সহবাস পরিত্যাগ করাইবে। অন্য পুরুষের সমক্ষে মত্ততা ও অনবধানতা পরিত্যাগপূর্ব্বক মৌনাবলম্বী হইয়া স্বীয় অভিপ্ৰায় সংযত করিয়া রাখিবে। প্ৰদ্যুন্ন ও শাম্ব তোমার পুত্ৰ হইলেও স্বামীর অসমক্ষে কদাপি তাহাদিগের সহিত একত্র বাস করিও না।

“সৎকুলজাত পুণ্যশীল পতিব্ৰতা স্ত্রীদিগের সহিত সখ্য করিবে; ক্রূর, কলহপ্রিয়, ঔদরিক [পেটুক], চৌর, দুষ্ট ও চপল অবলাদিগের সহবাস সর্ব্বতোভাবে পরিত্যাগ করিবে এবং সদগন্ধচর্চ্চিতকলেবর [উত্তম গন্ধদ্রব্যদ্বারা লিপ্তদেহ] ও মহার্ঘ মাল্যাভরণবিভূষিত হইয়া সর্ব্বদা স্বামীর শুশ্রূষাপরতন্ত্র হইবে। এইরূপ সদাচরণে কালহরণ করিলে কেহ তোমার প্রতি শত্রুতচরণ করিতে পরিবে না, এবং তোমার মহতী কার্ত্তি, পরম সৌভাগ্য ও স্বৰ্গ লাভ হইবে।”