৫২. কৌরব-বধে পাণ্ডবের প্রতিজ্ঞা

বিলম্ব না করিলেন ধর্ম্ম-নরপতি।
ততক্ষণে করিলেন অরণ্যেতে গতি।।
বসন ভূষণ আদি সকল ত্যজিয়া।
মুনিবেশ ধরিলেন বাকল পরিয়া।।
হেনকালে দুঃশাসন উপহাসচ্ছলে।
সভামধ্যে দ্রুপদ-কন্যার প্রতি বলে।।
মূর্খ রাজা যজ্ঞসেন কি কর্ম্ম করিল।
দ্রৌপদী এমন কন্যা ক্লীবে সমর্পিল।।
শুন ওহে যাজ্ঞসেনি! মোর বাক্য ধর।
কোথা দুঃখ পাবে গিয়া কানন-ভিতর।।
এই কুরু-জন মধ্যে যারে মন লয়।
তাহারে ভজিয়া সুখে থাকহ আলয়।।
এইরূপে পুনঃ পুনঃ বলিল অপার।
গর্জ্জিয়া নেউটি কহে পবন-কুমার।।
রে দুষ্ট! নিকট মৃত্যু জানিলি আপন।
সেই হেতু বলিস এ হেন কুবচন।।
এ সব বচন আমি করাব স্মরণ।
রণমধ্যে আমি তোরে পাইব যখন।।
নখেতে শরীর তোর করিব বিদার।
নির্ম্মূল করিব সখা যতেক তোমার।।
শত সহোদর সহ লোটাইব ক্ষিতি।
ইহা না করিলে যেন না পাই সদগতি।।
এতেক কহিয়া তবে যায় বৃকোদর।
সিংহাসন হইতে উঠিল কুরুবর।।
যেইরূপে চলি যায় পবন-নন্দন।
সেইরূপে হাসি চলে দুষ্ট দুর্য্যোধন।।
নেউটিয়া বৃকোদর পাছু পানে চায়।
উপহাস জানিয়া ক্রোধেতে কম্পে কায়।।
রে দুষ্ট! উচিত ফল পাইবি ইহার।
সে কালে এ সব কথা স্মরাব তোমার।।
পদ দিয়া এইরূপে তোমার মস্তকে।
চলিয়া যাবার কালে স্মরাব তোমাকে।।
তোরে সংহারিব তোর যত বন্ধু সখা।
শত ভাই তোমার মারিব আমি একা।।
কর্ণের মারিবে পার্থ, গর্ব্ব কর যার।
সহদেব শকুনিরে করিবে সংহার।।
এত বলি বৃকোদর নিঃশব্দেতে রয়।
সভামধ্যে ডাকিয়া বলেন ধনঞ্জয়।।
যতেক প্রতিজ্ঞা কর সব অকারণ।
ত্রয়োদশ বৎসরান্তে যদি নহে রণ।।
এয়োদশ বৎসরান্তে যদি পাই রণ।
তবে ত তোমার আজ্ঞা করিব পালন।।
কর্ণেরে মারিব যেন পতঙ্গের মত।
তোর যত সহায় সকলে হৈবে হত।।
হিমাদ্রি টলিবে, সূর্য্য ত্যজিবে কিরণ।
তথাপি প্রতিজ্ঞা মম না হবে লঙ্ঘন।।
শুন সব রাজগণ, আছ সভাস্থলে।
আজি হৈতে ত্রয়োদশ বৎসরান্ত-কালে।।
কৌতুক দেখিবা সবে যুদ্ধ হয় যদি।
কৌরবের শোণিতে পূরাব নদ-নদী।।
কদাচিত দিব্যজ্ঞান জন্মে দুর্য্যোধনে।
বিনত হইয়া পড়ে ধর্ম্মের চরণে।।
তবে ত প্রতিজ্ঞা যত সকলি বিফল।
আনন্দে বঞ্চিবে তবে কৌরব সকল।।
তবে সহদেব কহে চাহিয়া শকুনি।
রে দুষ্ট গান্ধার-পুত্র শুন এক বাণী।।
কপটেতে পাশা তুই করিলি রচন।
পাশা নহে, প্রহারিলি তীক্ষ্ণ অস্ত্রগণ।।
মম তীক্ষ্ম-অস্ত্রাঘাত যুদ্ধেতে দেখিবে।
সবান্ধবে মম হাতে সংহার হইবে।।
ভীমের আদেশ মম, নহিবে লঙঘন।
অবশ আমার হাতে তোমার নিধন।।
সহসা নকুল উঠি বলে সভাস্থলে।
এবে মন দিয়া শুন নৃপতি সকলে।।
ধর্ম্মপুত্র-আজ্ঞা আর কৃষ্ণার সম্মতি।
নিঃশেষ করিব কুরু-সৈন্য-সেনাপতি।।
এত বলি চলিলেন পাণ্ডু পুত্রগণ।
ধৃতরাষ্ট্র-স্থানে যান বিদায় কারণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-সমান।
শুনিলে নিষ্পাপ হয়, জন্মে দিব্যজ্ঞান।।