৩৯. শকুনির লাঞ্ছনা

কর্ণ যদি ভঙ্গ দিল সংগ্রাম ভিতর।
ভঙ্গ দিয়া পলাইল যত কুরুবর।।
পলায় দুর্ম্মুখ বিবিবংশতি মহাবল।
চিত্রসেন বেগে ধায় শকুনি সৌবল।।
শকুনি পলায়ে যায় অর্জ্জুনের আগে।
দেখিয়া অর্জ্জুন রথ চালালেন বেগে।।
শকুনিরে আগুলিয়া রাখিলেন রথ।
বিহ্বল সৌবল, পলাইতে নাথি পথ।।
মুখেতে উড়িল ধূলা নাহি সরে কথা।
অর্জ্জুনে দেখিয়া দুষ্ট হেঁট করে মাথা।।
অর্জ্জুন বলেন, কোথা পালাও মাতুল।
আমাদের যত কষ্ট, তুমি তার মূল।।
তোমারে মারিলে হয় দুঃখ বিমোচন।
কপট পাশার হও তুমিই কারণ।।
তোমায় আমায় আজি খেলাইব পাশা।
নিঃশব্দ হইলে কেন, নাহি কহ ভাষা।।
ধনুক করিব পাশা, অস্ত্রগণ অক্ষ।
মস্তক করিব সারি, যত তোর পক্ষ।।
তুমি সে কৌরব কুলে দুষ্ট বুদ্ধিদাতা।
সব দ্বন্দ্ব ঘুচে, যদি কাটি তোর মাথা।।
চিন্তিয়া শকুনি কহে করিয়া উপায়।
যতেক কহিলে তাত, তোমারে যুয়ায়।।
তোমার শকতি নাহি আমারে মারিতে।
আমার প্রতিজ্ঞা সহদেবের সহিতে।।
অবধ্য তোমার শত্রু, জানহ আপনে।
অঙ্গে ঘাত করিতে না পার কদাচনে।।
আমার প্রতিজ্ঞা তুমি জান ভালমতে।
অস্ত্রাঘাতে পারি ক্ষিতি দহন করিতে।।
আমার সাক্ষাতে যুদ্ধে রবে কোন্ জন।
প্রাণ লয়ে শীঘ্রগতি পলাহ অর্জ্জুন।।
ইহা বলি বিধ্য অস্ত্র ধনঞ্জয়ে মারে।
নানা অস্ত্র বৃষ্টি করে অর্জ্জুন উপরে।।
শুনিয়া পার্থের মনে হইল স্মরণ।
প্রতিজ্ঞা করেছে পূর্ব্বে মাদ্রীর নন্দন।।
চিন্তিয়া অর্জ্জুন অস্ত্র মারে বেড়াপাক।
রথ ঘুরে শকুনির কুমারের চাক।।
ভ্রমাইয়া লয়ে গেল রজকের গৃহে।
খরপৃষ্ঠে চাপাইয়া বান্ধিলেক তাহে।।
অদ্ভুত দেখে যে দূরে কুরুবীরগণ।
চক্রাকার সম ঘুরে সুবল-নন্দন।।
বিপাক দেখিয়া শকুনির লোকে হাসে।
আর যত কুরুসৈন্য পলায় তরাসে।।
ঊর্দ্ধশ্বাসে হীনবাসে ধায় সব বীর।
ভীষ্মের চরণে গিয়া রাখয়ে শরীর।।
মহাভারতের কথা বর্ণিতে অপার।
কাশীরাম দাস কহে, ভক্তি সুধাসার।।