২৫. দ্রোণের প্রতি দুর্য্যোধনের শ্লেষোক্তি

দ্রোণের এতেক বাক্য শুনি দুর্য্যোধন।
ক্রুদ্ধ হয়ে ভীষ্মে চাহি বলিছে বচন।।
পুনঃ পুনঃ মোর প্রতি কহেন এ কথা।
পাণ্ডবের পক্ষ গুরু জানিহ সর্ব্বথা।।
সতত কহেন পাণ্ডবের গুণাগুণ।
অনুক্ষণ নিকটেতে দেখেন অর্জ্জুন।।
এয়োদশ বর্ষ সবে করি গেল পণ।
ইতিমধ্যে দেখা তারা দিবে কি কারণ।।
বিশেষ একাকী কেন আসিবে হেথায়।
অকস্মাৎ আসিবেক কোন্ অভিপ্রায়।।
অর্জ্জুন হইল যদি, কিবা চাই আর।
ভ্রাতৃসহ বনমাঝে যাবে আরবার।।
বিরাটের পক্ষ হয়ে সে কেন আসিবে।
অন্য কেহ সেনাপতি বিরাটের হবে।।
কিম্বা সেই আসিতেছে বিরাট নৃপতি।
কিম্বা আগে পাঠাইল মুখ্য সেনাপতি।।
দক্ষিণ গোগৃহে রাজা সুশর্ম্মা যে গেল।
মৎস্যদেশ জয় করি সেই বা আসিল।।
না দেখিয়া না শুনিয়া শব্দমাত্র শুনি।
পুনঃ পুনঃ কহিছেন আসিল ফাল্গুনি।।
জানি আমি আচার্য্যের পাণ্ডুপুত্রে প্রীত।
অতএব কহিছেন হয়ে হৃষ্টচিত।।
মোরে ভয় দেখাইয়া শত্রুর প্রশংসা।
পুনঃ পুনঃ কহিছেন অকুশন ভাষা।।
পশুজাতি অশ্বগণ নিরবধি ত্রাসে।
পক্ষীর স্বভাব সদা উড়য়ে আকাশে।।
মেঘের সহজ কর্ম্ম উঠিলে গরজে।
কভু ধীর কভু তীক্ষ্ণ পবনের তেজে।।
ইহা দেখি কহিছেন নাহি আর জয়।
না করিয়া যুদ্ধ গুরু পান এত ভয়।।
নামেতে হইল ত্রাস, কি করিবে রণ।
যুদ্ধস্থলে পণ্ডিতের নাহি প্রয়োজন।।
প্রাসাদ মন্দির যথা নৃপতির সভা।
সেই সব স্থলে হয় পণ্ডিতের শোভা।।
পুরাণের বাক্য যদি বেদ অধ্যয়ন।
সেই সব স্থলে হয় পণ্ডিত শোভন।।
যথায় বালক শিক্ষা বিচার কথন।
সেই স্থলে পণ্ডিতের হয় সুশোভন।।
যদি বা আইসে পার্থ লঙ্ঘিয়া সময়।
কিবা শক্তি আছে তার, কেন এত ভয়।।
আসুক অর্জ্জুন, আমি করিব সংগ্রাম।
ভয়ার্ত্ত হলেন গুরু, যান নিজ ধাম।।
ভোজ্য অন্ন দিয়া তার পাইলাম ফল।
সে মিত্রে কি কার্য্য যেই শত্রুর বৎসল।।
ভক্তি হয় দুই গুরু করেন পাণ্ডবে।
সদাকাল এইমত জানি অনুভবে।।
হেথায় রহিয়া কিছু নাহি প্রয়োজন।
যথা ইচ্ছা তথাকারে করুণ গমন।।
সময়োচিত কর্ম্ম করহ পিতামহ।
সৈন্যগণে ডাকি সব আশ্বাসিয়া কহ।।
স্থানে স্থানে গুল্ম পাতি দৃঢ় কর সেনা।
মোর স্থানে গবী লয় হেন কোন্ জনা।।
গুরুকে করিয়া পাছু থাক গুল্মগণ।
ভয়ার্ত্ত লোকেরে রাখি নাহি প্রয়োজন।।
ভয়েতে কাতর কেন দেখি সেনাগণ।
আচার্য্যের বাক্যে বুঝি হৈল ভীত মন।।
যুদ্ধের সময় পাল যুদ্ধের যে নীতি।
রণসাজে থাক সবে সৈন্য সেনাপতি।।