১২৬. ব্যাসদেবের আগমন এবং পাণ্ডবগণের অজ্ঞাতবাসের পরামর্শ

পরদিন প্রাতঃকালে উঠি ছয় জন।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলি সবে ডাকে ঘনে ঘন।।
হেনকালে আসিলেন ব্যাস তপোধন।
প্রণমিয়া নরপতি করে নিবেদন।।
শুন প্রভু গত দিবসের এক ভাষা।
এই সরোবরে আমা সবার দুর্দ্দশা।।
পথিশ্রমে পিপাসায় হইয়া কাতর।
নিকটেতে জল নাই, দূরে সরোবর।।
জল অন্বেষণে ভীমে দিয়া অনুমতি।
তাহার বিলম্বে পার্থে দিলাম আরতি।।
দ্রৌপদী সহিত এই ভারি চারি জন।
এই জল পরশিয়া ত্যজিল জীবন।।
পশ্চাতে আসিয়া আমি দেখি সরোবরে।
শবরূপে ভাসে সবে জলের উপরে।।
দেখি মূর্চ্ছাগত হয়ে পড়িলাম ভূমে।
চৈতন্য পাইয়া পুনঃ উঠিলাম ক্রমে।।
আমিহ মরিতে যাই সরোবর-নীরে।
বকরূপী ধর্ম্ম ডাকি বলিলেন ধীরে।।
ওহে ধর্ম্ম হেন কর্ম্ম উচিত না হয়।
আত্মহত্যা কি কারণে কর মহাশয়।।
যদি বড় তৃষ্ণাযুক্ত হও মতিমান।
চারি প্রশ্ন বলি পরে কর জলপান।।
প্রণাম করিয়া আমি কহিলাম তাঁরে।
কিবা প্রশ্ন আছে তব, বলহ আমারে।।
প্রশ্ন চারি বলিলেন ধর্ম্ম মহাশয়।
উত্তর দিলাম, মোর জ্ঞানে যাহা হয়।।
প্রশ্নের উত্তর শুনি সন্তুষ্ট হইয়া।
কহিলেন, এক ভাই লহ বাঁচাইয়া।।
ভাবিয়া চাহিনু, দেহ সহদেব ভাই।
বিমাতার পিতৃবংশে জলপিণ্ড নাই।।
কপটেতে প্রতারণা অনেক করিয়া।
জীয়ায়ে দিলেন সবে ইষ্ট বর দিয়া।।
ইহা মুনি কহিলেন ব্যাস মহামুনি।
যথা ধর্ম্ম তথা জয়, বেদবাক্য শুনি।।
বিদায় হইয়া মুনি গেলেন স্বস্থানে।
সেই রাত্রি বঞ্চে তথা ভাই পঞ্চ জনে।।
পর দিন প্রাতঃকালে উঠি সর্ব্বজনে।
যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসেন মাদ্রীর নন্দনে।।
কহ ভাই সহদেব বিচারে প্রবীণ।
দ্বাদশ বৎসর গত, শেষ কত দিন।।
আজ্ঞামাত্র সহদেব সাবধান হয়ে।
গণিতে লাগিল শীঘ্র হাতে খড়ি লয়ে।।
কহিল রাজার আগে করিয়া নির্ণয়।
দ্বাদশ বৎসর শেষ আছে দিন ছয়।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির ভাবে মনে মনে।
অজ্ঞাত বাসের হেতু কহে সর্ব্বজনে।।
সবে জান পূর্ব্বে যাহা নির্ণয়।
উপস্থিত হৈল আসি অজ্ঞাত সময়।।
কোন্ দেশে কিবা বেশে বঞ্চি বৎসরেক।
নিকটে বেষ্টিত আছে নগর অনেক।।
সবে মিলি পরামর্শ কর এইবার।
কিরূপে দুঃখের হ্রদে সবে হৈব পার।।
এত শুনি কহে তবে ভাই চারি জনে।
সুযুক্তি ইহার সবে করি মনে মনে।।
দোষ গুণ বুঝি দেশ করিব নির্ণয়।
অকারণে চিন্তা কেন কর মহাশয়।।
কি হেতু চিন্তিব প্রভু, মোরা সর্ব্বজন।
অবশ্য হইবে যাহা বিধির লিখন।।
এই সব চিন্তা করি ধর্ম্ম-অধিকারী।
নির্ণয় করিতে আর গেল দিন চারি।।
মুনি বলে, শুন পরীক্ষিতের নন্দন।
এরূপে দ্বাদশ বর্ষ যাপিল কানন।।
নানা ক্লেশে বিচরণ করে বহু বন।
সংক্ষেপে কহিনু আমি বনের ভ্রমণ।।
অশ্বমেধ ফল পায় যে শুনে এ কথা।
ব্যাসের বচন, এই নাহিক অন্যথা।।
ভক্তিতে শুনিলে এই বনপর্ব্ব কথা।
নাহি থাকে তার কভু পাপ তাপ ব্যথা।।
লক্ষ শ্লোকে বিরচিল কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন।
এত দূরে বনপর্ব্ব হৈল সমাপন।।

।। বনপর্ব্ব সমাপ্ত।।