১২২. ভ্রাতৃগণ ও দ্রৌপদীর অন্বেষণে রাজা যুধিষ্ঠিরের গমন

এখানে আশ্রমে বসি রাজা যুধিষ্ঠির।
সবার বিলম্ব দেখি হলেন অস্থির।।
কোথা ভীম ধনঞ্জয় মাদ্রীর তনয়।
তোমা সবা না দেখিয়া প্রাণ বাহিরায়।।
কোথা লক্ষ্মী গুণবতী দ্রুপদনন্দিনী।
তোমার গুণেতে বশ ছিল যত মুনি।।
আমার সঙ্গেতে প্রিয়ে বহু দুঃখ পেয়ে।
হস্তিনায় গেলে বুঝি আমারে ছাড়িয়ে।।
এই মত পরিতাপ পেয়ে নরপতি।
বনে বনে বিচরণ করে দুঃখমতি।।
অরণ্যের মধ্যে রাজা করি অন্বেষণ।
ভীমের পাইয়া চিহ্ন করেন গমন।।
যেই পথে গিয়াছেন বীর বৃকোদর।
কত শত বৃক্ষ চূর্ণ, কত শিলাবর।।
গমন করেন সেই পথে যুধিষ্ঠির।
কতক্ষণে উপনীত সরোবর তীর।।
সরোবর তীরে দেখিলেন রম্য বন।
অপ্রমিত মৃগ পশু মহিষ বারণ।।
দেখিয়া এ সব শোভা নাহি তাহে চান।
উদ্বিগ্ন চিত্তেতে রাজা সরোবরে যান।।
সরোবরে দৃষ্টি যেই করেন নৃপতি।
দেখেন ভাসিছে জলে ভীম মহামতি।।
তার পাশে ধনঞ্জয় ভাসিতেছে জলে।
মাদ্রীপুত্র ভাসে দোঁহে পবন হিল্লোলে।।
দ্রৌপদী সুন্দরী ভাসে জলের উপরে।
শরীর ভেদিল যেন সহস্র তোমরে।।
দেখি রাজা মূর্চ্ছা হৈয়া পড়েন ধরণী।
অচেতন ছটফট করে নৃপমণি।।
কতক্ষণে সংজ্ঞা পেয়ে রাজা যুধিষ্ঠির।
দেখিয়া সবার মুখ হলেন অস্থির।।
পুনর্ব্বার পড়িলেন ধরণী উপর।
চেতন পাইয়া পুনঃ উঠেন সত্বর।।
কাঁপিতে কাঁপিতে পুনঃ পড়ে ঘনে ঘন।
হা কৃষ্ণ হা কৃষ্ণ বলি করেন রোদন।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাশীরাম দাস কহে, ভবভয় তরি।।