০৩৪. অর্জ্জুনের ইন্দ্রালয়ে গমন

হেনকালে তথা আসি যত দেবগণ।
অর্জ্জুন উপর করে পুষ্প বরিষণ।।
দক্ষিণে থাকিয়া ডাকি বলে প্রেতপতি।
মম বাক্য ধনঞ্জয় কর অবগতি।।
বর দিতে তোমারে আইনু দেবগণে।
লইয়াছ জ্ন্ম তুমি শত্রু নিবারণে।।
দেব দৈত্য অসুর যতেক পৃথিবীতে।
সবে পরাভব হবে তোমার অস্ত্রেতে।।
তব শত্রু আছে যেই কর্ণ ধনুর্দ্ধর।
তব হস্তে হত হবে সেই বীরবর।।
হের লহ এই অস্ত্র অব্যর্থ সংসারে।
আমার প্রধান অস্ত্র দণ্ড নাম ধরে।।
এত বলি মন্ত্র সহ দিল প্রেতপতি।
পশ্চিমে থাকিয়া ডাকি বলে জলপতি।।
আমার বরুণ পাশ অর্ব্যর্থ সংসারে।
এই যে দেখহ, যম নিবারিতে নারে।।
প্রীতিতে তোমারে দিনু ধরহ অর্জ্জুন।
ইহা হৈতে কর সদা বিপক্ষ দলন।।
উত্তরে থাকিয়া ডাকি কুবের বলিল।
অর্জ্জুন তোমারে যম বরুণ অস্ত্র দিল।।
এবে মম স্থানে লহ অস্ত্র অন্তর্দ্ধান।
এই অস্ত্রে হর কৈল ত্রিপুরে নিধন।।
মৃত্যুপতি জলপতি দিল যক্ষপতি।
ডাকি বলে সুরপতি অর্জ্জুনের প্রতি।।
কুন্তীগর্ভে জাত তুমি আমার নন্দন।
অসুর বধিতে আমি দিব অস্ত্রগণ।।
এখনি পাঠাব রথ তোমারে লইতে।
স্বর্গেতে আসিবে তুমি মাতলি সহিতে।।
হেথা এলে পূর্ণ হবে তব প্রয়োজন।
এত বলি চলি গেল সব দেবগণ।।
কতক্ষণে রথ লৈয়া আইল মাতলি।
ঘোর মেঘ মধ্যে যেন স্ফুরিত বিজলী।।
বায়ুবেগে অদ্ভূত তুরঙ্গ রথ বয়।
নিশাকালে হৈল যেন রবির উদয়।।
ডাকিয়া মাতলি বলে অর্জ্জুনের প্রতি।
ইন্দ্রের আজ্ঞায় রথে চড় শীঘ্রগতি।।
তোমা দরশনে বাঞ্ছা করে দেবরাজ।
আর যত আছে তথা দেবের সমাজ।।
আনন্দে করেন পার্থ রথ আরোহণ।
মাতলি চালায় রথ পবন গমন।।
পথেতে দেখিল পার্থ দেব ঋষিগণ।
বিমানেতে আরোহণ যত পুণ্যজন।।
গন্ধর্ব্ব অপ্সর যত আনন্দে বিহরে।
কতক পড়িছে তারা দেখে বীরবরে।।
বিস্ময় মানিয়া কহে অর্জ্জুন তখন।
কত শুনি মাতলি এ সব কোন জন।।
মাতলি বলিল, এই পুণ্যবানগণ।
পৃথিবীতে সুকর্ম্ম করিল অগণন।।
রাজসূয় অশ্বমেধ আদি যত কৈল।
সম্মূখ সংগ্রাম করি শরীর ছাড়িল।।
সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয় দিল বহু দান।
দেবপূজা উগ্র তপ কৈল তীর্থস্নান।।
সেই সব জন এই বিমানে বিহরে।
বিনা পুণ্যে নাহি শক্তি আসে স্বর্গপুরে।।
তারা বলি ত্রৈলোক্যেতে ঘোষয়ে মানুষে।
পুণ্যক্ষয় হয়ে গেল হের দেখ খসে।।
সুরা পিয়ে, মাংস খায়, গুরুপত্নী হরে।
কদাচিৎ সে জন না আসে স্বর্গপুরে।।
আনন্দে অর্জ্জুন সব করেন দর্শন।
কোটি কোটি বিমানেতে ভ্রমে পুণ্যজন।।
শত শত বরাঙ্গনা সেবয়ে তাঁহারে।
সুগন্ধ সহিত বায়ু সদা মন হরে।।
সিদ্ধ সাধ্য সেবে দেব মরুৎ অনল।
সপ্ত বসু রুদ্রগণ আদিত্য সকল।।
দিলীপ নহুষ আদি যত মহীপতি।
দেবঋষি রাজঋষি বহু সিদ্ধ যতি।।
অর্জ্জুনে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল সর্ব্বজন।
কহ ত মাতালি এই কাহার নন্দন।।
পরিচয় দিয়া তবে মাতলি চলিল।
বায়ুবেগে ইন্দ্রালয়ে উপনীত হৈল।।
ইন্দ্রালয়ে যান তবে ইন্দ্রের নন্দন।
সভাস্থ সকল দেবে করেন বন্দন।।
ইন্দ্রের বিচিত্র সভা বর্ণন ‍না যায়।
যেন শত চন্দ্র, শত সূর্য্যের উদয়।।
রথ হৈতে অবতরি যান বীরবর।
দুই হাত ধরি তাঁরে তুলে পুরন্দর।।
আলিঙ্গন চুম্ব দিল মস্তক উপর।
আসনেতে বসাইল সভার ভিতর।।
ইন্দ্র বিনা বসিবারে নারে অন্য জন।
দেব ঋষি মান্য যেই ইন্দ্রের আসন।।
আপন আসনে ইন্দ্র বসালেন কোলে।
মুহুমুহুঃ সহস্রেক নয়নে নেহালে।।
আসনে বসিয়া পার্থ পাইলেন শোভা।
মঘবার কোলে যেন দ্বিতীয় মঘবা।।
পুণ্যকথা ভারতের আনন্দ লহরী।
শুনিলে অধর্ম্ম ক্ষয়, পরলোকে তরি।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান।।