০২৪. দুই রাজ্ঞী সহ শ্রীবৎস রাজার স্বরাজ্যে গমন

যুধিষ্ঠির জিজ্ঞাসেন, কহ গদাধর।
বরদাতা হয়েশনি গেল অতঃপর।।
তদন্তরে বাহু রাজা শ্রীবৎস নৃপতি।
কি করিল বিস্তারিয়া কহ লক্ষ্মীপতি।।
মাধব কহেন, রাজা কর অবধান।
বর দিয়া শান যদি গেল নিজ স্থান।।
আনন্দিত বাহু রাজা পুত্রের সহিত।
নট নটী আনাইয়া গাওয়াইল গীত।।
নানা বাদ্য মহোৎসব প্রতি ঘরে ঘরে।
হাস্য পরিহাসে কেহ পাশাক্রীড়া করে।।
অস্ত্র লোফালুফি করে, ধানুকী তবকী।
কেহ ভোজ বিদ্যা খেলে চক্ষে দিয়া ফাঁকি।।
বাদ্য অন্বেষণ কেহ করে কোন স্থানে।
কেহ নাচে, কেহ গায়, আনন্দ বিধানে।।
রোপাইল সারি সারি গুবাক কদলী।
চন্দনের ছড়া দিয়া নাশিলেক ধূলি।।
দিব্য রত্ন অলঙ্কারে বেশ ভূষা করে।
অগুরু চন্দন চূয়া পুষ্পমালা পরে।।
যতনে পরয়ে কেহ উত্তম বসন।
কোন ‍নারী ত্বরা করি করিল রন্ধন।।
চর্ব্ব চুষ্য লেহ্য পেয় করি আয়োজন।
কোন কোন স্থানে হয় ব্রাহ্মণ ভোজন।।
নগরের মধ্যে এই হইল ঘোষণ।
মালিনীর গৃহে ছিল শ্রীবৎস রাজন।।
ধন্য বাহুরাজ ঘরে ভদ্রা জন্মেছিল।
যাহা হতে বাহুরাজা শ্রীবৎস পাইল।।
এইরূপে মহানন্দে রহে সর্ব্বজন।
কত দিন বঞ্চে তথা শ্রীবৎস রাজন।।
একদিন প্রভাতে করিয়া স্নান দান।
যান রাজা সানন্দে শ্বশুর সন্নিধান।।
করযোড়ে করি কহে শ্রীবৎস রাজন।
অবধান কর রায় মোর নিবেদন।।
আজ্ঞা কর নিজ দেশে করিব গমন।
বহুদিন দেখি নাই জ্ঞাতি বন্ধুগণ।।
বাহুরাজা কহে বাপু কি কথা কহিলে।
পূর্ব্ব পুণ্যফলে বিধি তোমারে মিলালে।।
এই রাজ্যে রাজা তাত হইবে আপনি।
কি কারণে হেন কথা কহ নৃপমণি।।
রাজা কহে, যত কহ স্নেহের কারণ।
অদ্য আমি নিজ রাজ্যে করিব গমন।।
নিশ্চয় বুঝিয়া মন বাহু নৃপবর।
সারথিরে আজ্ঞা তবে করিল সত্বর।।
আজ্ঞামাত্র সারথি চলিল শীঘ্রগতি।
রথ সাজি সেইক্ষণে আনিল সারথি।।
রাজা বলে, সৈন্যগণ সাজ সর্ব্বজন।
শ্রীবৎস কহিল রায় নাহি প্রয়োজন।।
দক্ষিণ সমুদ্র পারে আমার বসতি।
সৈন্য সেনা কেমনে যাইবে ঘোড়া হাতী।।
রাজা বলে কেমনে যাইবে তুমি তথা।
শ্রীবৎস বলিল, রাজা উপায় দেবতা।।
তাল বেতালের রাজা করিল স্মরণ।
স্মরণমাত্রেতে তারা আসে দুই জন।।
হাসিয়া কহিল দোঁহে কি আজ্ঞা করহ।
শ্রীবৎস কহিল, মোরে নিজ রাজ্যে লহ।।
শ্বশুরে প্রণাম করি উঠে রথোপরে।
চিন্তা ভদ্রা বলি নৃপ ডাকিল সত্বরে।।
দোঁহে বাহুরাজ পদে বিদায় মাগিল।
চিন্তা ভ্রদা দোঁহে আসি রথে আরোহিল।।
চূড়ায় বসিল তাল বেতাল সারথি।
বায়ুবেগে যায় রথ সুললিত গতি।।
নিমেষেতে দশ হাজার যোজন যান।
রাজা কহে, কহ তাল এই কোন্ স্থান।।
তাল কহে, এই দেখ সুরভি আশ্রম।
কহিতে কহিতে পায় কাঠুরে ভবন।।
তাল কহে, মহারাজ কর অবধান।
পোড়া মৎস্য জলে গেল, দেখ সেই স্থান।।
ভাঙ্গা নায় শনি আসি কাঁথা হরে নিল।
নিমেষেতে সেই স্থান পশ্চাৎ হইল।।
ক্রমেতে পাইল আসি আপন ভবন।
তাল কহে, নিজ রাজ্যে আইলা রাজন।।
রথ হৈতে রাজা রাণী নামি তিন জন।
পদব্রজে ধীরে ধীরে করেন গমন।।
শুনিল নগরলোক আইল রাজন।
মত শরীরেতে যেন পাইল জীবন।।
বাম পার্শ্বে দুই রাণী সিংহাসনে রাজা।
পাত্র মিত্র সবে আসি করিলেক পূজা।।
পূর্ব্বের সুহৃদ বন্ধু যতেক আছিল।
ক্রমেতে আসিয়া সবে একত্র হইল।।
বান্ধব সানন্দ, নিরানন্দ রিপুগণ।
পূর্ব্বমত রাজা রাজ্য করেন শাসন।।
চিন্তা ভদ্রা দুই রাণী পরম সুশীলা।
ক্রমে ক্রমে শত পুত্র দোঁহে প্রসবিলা।।
দুই রাণী গর্ভে জন্মে দুই কন্যা ধন।
অমৃতেতে অভিষ্ক্তি হইল রাজন।।
বহুকাল রাজ্য করে শ্রীবৎস রাজন।
ধর্ম্ম কর্ম্ম করে যত না যায় বর্ণন।।
রাজসূয় অশ্বমেধ করে বার বার।
দানেতে দরিদ্র কেহ না রহিল আর।।
দীর্ঘকাল রাজ্য করি পরম কৌতুকে।
অন্তকালে রাণী সহ গেল বিষ্ণুলোকে।।
অতএব যুধিষ্ঠির করি নিবেদন।
দৈবাধীন কর্ম্মে শোক করা অকারণ।।
শ্রীবৎস চরিত্র আর শনির মাহাত্ম্য।
যেবা শুনে, যেবা পড়ে সে হয় পবিত্র।।
কদাচ শনির কোপ তাহারে না হয়।
শাস্ত্রের বচন এই নাহিক সংশয়।।
যে জন শনির ধ্যান করে বারো মাস।
বিপদ না হয় তার কহে কাশীদাস।।