০১৭. বণিক কর্ত্তৃক চিন্তা হরণ

তবে সাধু হর্ষযুত গলে বন্ত্র দিয়া।
যথা চিন্তা সতী তথা উত্তরিল গিয়া।।
চিন্তাদেবীরে সাধু কহে বিনয় বাণী।
আমারে করহ রক্ষা, ওগো ঠাকুরাণি।।
সাধুরে দেখিয়া চিন্তা কহে দুঃখ মনে।
আমাকে যাইতে মানা করিল রাজনে।।
কি কহিবে মহারাজ আসিয়া ভবনে।
ভাবিয়া চিন্তিয়া রাণী স্থির কৈল মনে।।
কাতর শরণাগত যেই জন হয়।
তাহারে করিলে রক্ষা ধর্ম্মের সঞ্চয়।।
বেদে শাস্ত্রে মুনিমুখে শুনিয়াছি আমি।
প্রাণ দিয়া রাখয়ে শরণাগত প্রাণী।।
যাহা কন মহারাজ এ কথা শুনিয়া।
সহবি সকল কথা শরণ মাগিয়া।।
এত ভাবি চিন্তাদেবী হৃষ্টচিত্তা হৈয়া।
চলিলেন তবে রাণী ঈশ্বর ভাবিয়া।।
উপনীত হন যথা সদাগর তরী।
করযোড়ে কহে দেবী প্রদক্ষিণ করি।।
যদি আমি সতী হই পতি অনুগতা।
তবে সে ভাসিবে তরী কহিনু সর্ব্বথা।।
এত বলি সেই তরী পরশ করিতে।
ভাসিয়া উঠিল তরণী সেইক্ষণেতে।।
দেখি সদাগর হল হরিষত মন।
জানিল মনুষ্য নহে এই নারীজন।
যদি মার নৌকা কভু আটক হইবে।।
ইহাকে লইলে সঙ্গে তখনি চলিবে।
এত ভাবি নৌকা পরে লইল চিন্তারে।।
দেখ যুধিষ্ঠির রাজা দৈবে কি না করে।
শুনি ধর্ম্ম-নৃপমণি কহে প্রভু প্রতি।।
অমৃত অধিক শুনি তোমার ভারতী।
চিন্তার বলহ শেষে হৈল কোন গতি।
কিরূপে রহিল কোথা শ্রীবৎস নৃপতি।।
এত শুনি কহেন শ্রীগশোদা কুমার।
শুন মহারাজ কহি বিশেষ ইহার।।
অতি দুঃখে শোকাকুল কাতর অন্তরে।
ঈশ্বর স্মরিয়া দেবী কান্দে উচ্চৈঃস্বরে।।
কেন আমি আইলাম আপনা খাইয়া।
কান্দিয়া আকুল চিন্তা এ কথা ভাবিয়া।।
সূর্য্যপানে চাহি দেবী যোড় করি হাত।
বহু স্তব করে চিন্তা বহু প্রণিপাত।।
দয়া কর দিননাথ অখিলের পতি।
মোর রূপ লহ দেব! দেহ কু আকৃতি।।
জরাযুত অঙ্গ প্রভু দেহ শীঘ্রগতি।
এত বলি কান্দে দেবী লোটাইয়া ক্ষিতি।।
দেখি দেব ভাঙ্করের দয়া উপিজিল।
ভয় নাই ভয় নাই বাণী নিঃসরিল।।
না কান্দহ না চিন্তিহ ওগো চিন্তাসতী।
স্বামী প্রতি সদা হয়ে থেকো ভক্তিমতী।।
তব সুন্দর রূপরাশি এবে হরিব।
স্মরিলে আমায় পুনঃ পূর্ব্বরূপ দিব।।
তবে সতী রূপ সূর্য্য করেন হরণ।
গলিত ধবল মূর্ত্তি দিল ততক্ষণ।।
এইরূপে চিন্তাদেবী নৌকায় রহিল।
দক্ষিণেতে নৌকা বাহি সাধু যে চলিল।।
এথায় কানন হতে আসি নিজালয়।
শূন্য ঘর দেখি রাজা মানিল বিস্ময়।।
কান্দিয়া অস্থির রাজা না দেখি চিন্তায়।
সকাতরে পড়সীরে জিজ্ঞাসেন রায়।।
পঠনে শ্রবণে নারী লভে ধর্ম্মজ্ঞান।।
মহাভারতের কথা অমৃত সমান।
কাশীরাম দাস কহে, শুনে পুণ্যবান্ ।।