৩০. দুর্য্যোধন দূত উলূকের প্রতি পাণ্ডবগণের উক্তি

দুর্য্যোধন আদেশেতে সে উলূক দূত।
শীঘ্রগতি গেল যথা পাণ্ডু-পঞ্চসুত।।
যত কহি পাঠাইল কুরু নৃপমণি।
দণ্ডবৎ করি সব কহিল কাহিনী।।
শুনিয়া রুষিল পঞ্চ পাণ্ডুর নন্দনে।
উলূকে চাহিয়া বলে ক্রোধ করি মনে।।
দুর্য্যোধন মোর হাতে মরিবে নিশ্চয়।
আজি কালি মধ্যে যাবে যমের আলয়।।
দুঃশাসনের মরণ হৈল সেই দিনে।
দ্রৌপদীর কেশ ধরিয়াছে যেই ক্ষণে।।
শুনহ উলূক বলি, কহে বৃকোদর।
গদার প্রহারে ঊরু ভাঙ্গিব তাহার।।
এই লৌহ মহাগদা দেখ বিদ্যমান।
ইহাতে শতেক ভাই হারাইবে প্রাণ।।
এত বলি গদা লয়ে বীর বৃকোদর।
চক্রিচক্র ফিরে যেন মস্তক উপর।।
গাণ্ডীব ধনুক তবে লইয়া অর্জ্জুন।
আকর্ণ পূরিয়া টঙ্গারেন ধনুর্গুণ।।
এককালে হৈল যেন শত বজ্রাঘাত।
প্রমাদ গণিল সবে দেখিয়া নির্ঘাত।।
ধনঞ্জয় কহিলেন উলূকে চাহিয়া।
মোর দম্ভ দুর্য্যোধনে শীঘ্র কহ গিয়া।।
সূতপুত্র সঙ্গে এস করিয়া সাজন।
মোর হাতে তোমা সহ লইবে শমন।।
ইন্দ্র যদি রক্ষা করে নাহি রক্ষা পাবে।
অবশ্য আমার হাতে যমঘরে যাবে।।
এইরূপে পার্থ গর্ব্ব করেন বিস্তর।
মাদ্রীর তনয় তবে কহিল সত্বর।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন সাত্যকি যতেক বীরগণ।
একে এক উলূকের কহে সর্ব্বজন।।
উলূক পাইয়া আজ্ঞা রথে আরোহিয়া।
দুর্য্যোধনে সব কথা নিবেদিল গিয়া।।
যে কহিল পাণ্ডবেরা কহিতে সে ভয়।
কহিল নিষ্ঠুর বাণী ভীম ধনঞ্জয়।।
রাজা বলে, কিবা ভয় কহ ত কাহিনী।
কি কহিল ভীমসেন ধর্ম্ম-নৃপমণি।।
কি কহিল ধনঞ্জয় মাদ্রীর নন্দন।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বিরাটাদি যত বীরগণ।।
উলূক বলিল, রাজা না বলিলে নয়।
শুন যাহা বলিলেন ধর্ম্ম মহাশয়।।
ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারীর চাহি আমি সুখ।
সে কারণে সহিলাম, দিল যত দুখ।।
কৃষ্ণেরে পাঠাই অগ্রে করিবারে প্রীতি।
অহঙ্কারে না শুনিল গোবিন্দের নীতি।।
ইহার উচিত শাস্তি হাতে হাতে পাবে।
অচিরেতে সবংশেতে নিপাত হইবে।।
ক্রোধে ভীম দর্প করি বলিল বচন।
মোর সম বলিষ্ঠ না দেখি কোন জন।।
রাক্ষস দানব মোর অগ্রে নহে স্থির।
গদার বাড়িতে তার ভাঙ্গিব শরীর।।
মাদ্রীর নন্দন আদি যত বীরগণ।
একে একে প্রতিজ্ঞা যে করে জনে জন।।
যে হয় উচিত রাজা করহ বিহিত।
শুনি দুর্য্যোধন করে সৈন্য সমাহিত।।
আশ্বাসি কহিল সব যত যোদ্ধাগণে।
মোর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ কর যোদ্ধাগণে।।
মোর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ কর সর্ব্বজনে।
শুন কর্ণ মহাবীর রাধার নন্দন।
পরম বান্ধব তুমি মোর দুনয়ন।।
পূর্ব্বে অঙ্গীকার কৈলে সবার গোচরে।
পাণ্ডবে মারিয়া রাজ্য দিবে হে আমারে।।
তাহার সময় এই হৈল উপনীত।
করহ বিধান সখে ইহার উচিত।।
কর্ণ বলে, রাজা মোর সত্য অঙ্গীকার।
প্রাণপণে কার্য্য সিদ্ধ করিব তোমার।।
যাবৎ শরীরে প্রাণ আছয়ে আমার।
তাবৎ সাধিব কার্য্য, শুন সারোদ্ধার।।
এত শুনি দুর্য্যোধন হৈল হৃষ্টমন।
বহু পুরষ্কার কর্ণে দিল সেইক্ষণ।।
মহাভারতের কথা অমৃত-লহরী।
শ্রবণে অধর্ম্ম খণ্ডে, পরলোক তরি।।