২৩. শ্রীকৃষ্ণের নিকটে কুন্তীর রোদন

হা হা ভীম যুধিষ্ঠির,           হা হা পুত্র পার্থবীর,
সহদেব নকুল তনয়।
রূপ গুণ শীলযুতা,           হা হা বধূ পতিব্রতা,
তোমার বিচ্ছেদে প্রাণ রয়।।
বিষম দুর্গম বনে,           সঙ্গে নিজ স্বামিগণে,
বহুকষ্টে বঞ্চিলে কেমনে।
দারুণ দুরন্ত পশু,           ব্যাঘ্র সর্প যত কিছু,
যক্ষ রক্ষ ভয়ানক স্থানে।।
তপস্বীর বেশধারী,           যত সব হিংসাকারী,
ভাগ্যে পুণ্যে না মারিল প্রাণে।
পূর্ব্ব পুণ্যফল হৈতে,           রক্ষা হৈল রিপুহাতে,
ধর্ম্মবলে আঁচিল জীবনে।।
প্রাণের দোসর তুমি,           নির্ভয় করিলে ভূমি,
সংহারিয়া রাক্ষস দুর্জ্জন।
হা হা পুত্র বৃকোদর,           মম গোত্রে গোত্রধর,
হা হা পার্থ আমার জীবন।।
করিয়া খাণ্ডব দাহ,           তুষ্ট কৈলে হব্যবাহ,
ইন্দ্রের ভাঙ্গিলে মহাভয়।
মহা উগ্র তপ করি,           তুষ্ট কৈলে ত্রিপুরারি,
বাহুযুদ্ধে কৈলে পরাজয়।।
এইরূপে পুত্রগণ,           মনে করি চতুর্গুণ,
কান্দে দেবী ভোজের নন্দিনী।
শোকাকুল অতি দীন,           শরীর অত্যন্ত ক্ষীণ,
মূর্চ্ছা হয়ে পড়িল ধরণী।।
দেখি ব্যস্ত হয়ে হরি,           তুলিলেন হাতে ধরি,
প্রবোধিয়া কহিছেন তাঁরে।
শোক ত্যজ পিতৃষ্বসা,           গেল তব দুঃখদশা,
পুত্রগণ-দুঃখ গেল দূরে।।
প্রসন্ন হইল কাল,           ধর্ম্ম হবে মহীপাল,
আজি কালি হস্তিনা নগরে।
আমারে করিয়া দূত,           পাঠাইল ধর্ম্মসূত,
বুঝাইতে কৌরব-কুমারে।।
যদি নাহি শুনে বাণী,           ক্রুরমতি কুরুমণি,
যদি নাহি দেয় রাজ্য তাঁর।
তবে তব পুত্র জয়,           ক্রূরবুদ্ধি কুরুচয়,
সবংশেতে হইবে সংহার।।
বলিলেন যুধিষ্ঠির,           শীঘ্র যাহ যদুবীর,
জননীরে কহিবে এমতি।
হবে দুঃখ অবসান,           ধর্ম্ম রাখিবেন মান,
অচিরেতে ঘুচিবে দুর্গতি।।
এত বলি জগৎপিতা,           প্রবোধেন ভোজসুতা,
শুনি কুন্তী হৈল হৃষ্টমন।
উদ্যোগপর্ব্বের কথা,           ব্যাস বিরচিত গাথা,
কাশীরাম দাস বিরচন।।