১৪. দ্বারকায় শ্রীকৃষ্ণের নিকট উলূকের গমন

জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল, কহ তপোধন।
অতঃপর কি করিল কুরুর নন্দন।।
তবে দ্বারকায় দূত গেল কোন্ জন।
দূত মুখে শুনি কিবা নহে নারায়ণ।।
বিবরিয়া আমারে বলহ মুনিবর।
শুনিয়া তোমার মুখে জুড়াক অন্তর।।
মুনি বলে, শুন শুন নৃপ জন্মেজয়।
উলূকেরে পাঠাইল কুরু মহাশয়।।
দুর্য্যোধন আদেশেতে যায় অনুচর।
শীঘ্রগতি চলি গেল দ্বারকা নগর।।
কৃষ্ণের সাক্ষাতে গিয়া হৈল উপনীত।
দণ্ডবৎ করি পত্র দিলেন ত্বরিত।।
পড়িলেন পত্র কৃষ্ণ ঈষৎ হাসিয়া।
পঠনান্তে কহিছেন দূতেরে চাহিয়া।।
দুই কুল হিত আমি বিখ্যাত ভুবন।
উভয় কুলের হিত চিন্তি অনুক্ষণ।।
দুর্য্যোধনে কহিবে যে বচন আমার।
ভাই ভাই বিরোধিয়া কি কার্য্য তোমার।।
তোমাতে অপ্রীত নহে পাণ্ডুর নন্দন।
গন্ধর্ব্বের হাতে তোমা রাখিল অর্জ্জুন।।
সভামধ্যে পূর্ব্বে যেই করিলে নির্ণয়।
তাহাতে হইল মুক্ত পাণ্ডুর তনয়।।
আপনি কহিলে তুমি সভা বিদ্যমান।
সত্য হৈতে মুক্ত হৈলে পাণ্ডুর সন্তান।।
পুনর্ব্বার আপনার পাবে রাজ্যধন।
তবে কেন কলহেতে করিতেছ মন।।
সমুচিত পাণ্ডবের বিভাগ যে হয়।
তাহা দিয়া প্রীত কর, পাণ্ডুর তনয়।।
এইরূপে দুর্য্যোধনে কহিবে আপনে।
পশ্চাতে যাইব আমি সবা বিদ্যমানে।।
সারথির হেতু যাহা কহিলে আমারে।
করিব সারথিপণ তাঁহার গোচরে।।
কিন্তু আগে মোর পাশে বলে ধনঞ্জয়।
অঙ্গীকার করিয়াছি, শুন মহাশয়।।
তথাপি তোমার বাক্য না পারি খণ্ডিতে।
আপনি আসিবে হেথা আমারে বরিতে।।
আসিবে আমারে পার্থ করিতে বরণ।
পঞ্চম দিবসে হবে পার্থ আগমন।।
আমারে আসিয়া অগ্রে যে জন বরিবে।
তাহারি সারথ্য মম করিতে হইবে।।
এইরূপে দুর্য্যোধনে কহিবে বচন।
এত বলি দূতে পাঠাইল নারায়ণ।।
তবে যদুবল লয়ে দেব জগৎপতি।
গুপ্তভাবে পরামর্শ করে মহামতি।।
কৌরব পাণ্ডবে দোঁহে হবে মহারণ।
সে কারণে দুর্য্যোধন পাঠায় লিখন।।
পাণ্ডব আমারে পূর্ব্বে করিল বরণ।
দুই কুল হিত আমি, জানে জগজ্জন।।
কাহার স্বপক্ষ হৈব, করিব কেমন।
ইহার সুযুক্তি যাহা কহ সর্ব্বজন।।
ইহা শুনি কহিলেন যত যদুগণ।
কপটী কুবুদ্ধি খল রাজা দুর্য্যোধন।।
তাহার স্বপক্ষ হৈতে উচিত না হয়।
বিশেষে তোমার প্রিয় পাণ্ডুর তনয়।।
যদি বা বরিতে তোমা আসে দুর্য্যোধন।
তাহার সহায়ে দেহ কিছু সৈন্যগণ।।
কপট করিয়া তার কর উপকার।
আমা সবা চিত্তে লয়, এই ত বিচার।।
যদুগণ-বাক্য শুনি দেব নারায়ণ।
শিল্পকারগণে আজ্ঞা দিলেন তখন।।
দিব্য সিংহাসন এক করহ নির্ম্মাণ।
ইন্দ্রের আসন জিনি তাহার বাখান।।
নানারত্ন মাণিক্যেতে সুবর্ণ জড়িত।
প্রবাল মাণিক্য গজদন্তে বিরচিত।।
সত্বরে রচিয়া দেহ আমার অগ্রেতে।
আজ্ঞামাত্র শিল্পিগণ লাগিল গঠিতে।।
তিন দিবসের মধ্যে গঠি সিংহাসন।
গোবিন্দের অগ্রে আনি দিল ততক্ষণ।।
পঞ্চম দিবস পরে দেব নারায়ণ।
বাহির মন্দিরে গিয়া করেন শয়ন।।
সংকীর্ণ রহিল স্থান শিতানের পানে।
রত্ন-সিংহাসন রাখিলেন সেই স্থানে।।
পাছে রাখিলেন স্থান বুঝিয়া বিস্তার।
অচেতনে নিদ্রা যান দেবকী-কুমার।।
মহাভারতের কথা সুধা সম হয়।
পয়ার প্রবন্ধে কাশীরাম দাস কয়।।