০৭. দ্রোণের প্রতি দুর্য্যোধনের খেদোক্তি ও নারায়ণী সেনার যুদ্ধারন্ত

শিবিরেতে গেল তবে রাজা দুর্য্যোধন।
অত্যন্ত দুঃখিত হয়ে বিরস বদন।।
কহিলেন গুরু অগ্রে করিয়া রোদন।
কিরূপে আমার গুরু হইবে তারণ।।
কি প্রকারে জিনি উপদেশ বল তুমি।
কেবল ভরসা তব করিতেছি আমি।।

দ্রোণ বলে গুণ আমি কহি যে বচন।
তবে যুধিষ্ঠিরে ধরি শুন দুর্য্যোধন।।
নারায়ণী সেনা দেখ যুদ্ধে বড় কৃতী।
তাহার সহায় আছে সুশর্ম্মা নৃপতি।।
অর্জ্জুনের সহ তারা করুক সমর।
তবে সে ধরিতে পারি ধর্ম্মের কোঙর।।

এত শুনি আনন্দিত হইল রাজন।
সেইক্ষণে ‍ডাকি আনে সংসপ্তকগণ।।
ত্রিগর্ত্ত রাজাকে আনি বলিল বচন।
আমার বচন শুন সুশর্ম্মা রাজন।।
নারায়ণী সেনামধ্যে হও সেনাপতি।
অর্জ্জুনের সহ যুদ্ধ কর মহামতি।।
সসৈন্যে উত্তর দিকে তুমি চলি যাহ।
অর্জ্জুনের সনে গিয়া সমর করহ।।

সুশর্ম্মা বলেন শুন আমার বচন।
আজি অর্জ্জুনেরে করিব নিধন।।
নারায়ণী সেনা দেখ যমের সমান।
পৃথিবীর মাঝে যার অব্যর্থ সন্ধাণ।।
এ সব লইয়া আমি করি গিয়া রণ।
জানিহ পার্থের তবে নিশ্চয় মরণ।।
এতেক বলিয়া গর্জ্জে যত সেনাগণ।
শুনি দুর্য্যোধন হৈল উল্লাসিত মন।।
নারায়ণী সেনা মধ্যে শ্রেষ্ঠ সপ্তরথী।
তার মধ্যে সুশর্ম্মা হইল সেনাপতি।।
আনন্দিত মনে সবে রজনী বঞ্চিল।
প্রভাতে উঠিয়া কুরুক্ষেত্রেতে চলিল।।

অর্জ্জুনের রথে তবে সাজিলেন হরি।
আইল পাণ্ডবগণ কৃষ্ণ অগ্রে করি।।
অর্জ্জুনের প্রতি বলে সংসপ্তকগণ।
আজি ধনঞ্জয় তুমি মোরে দেহ রণ।।
করিব তোমারে আজি অবশ্য সংহার।
এই করিলাম শুন সত্য অঙ্গীকার।।
এতেক শুনিয়া হাসি ইন্দ্রের নন্দন।
সংসপ্তক সহ যান করিবারে রণ।।
রণেতে প্রচণ্ড বড় সংসপ্তকগণ।
অদ্ভূত করয়ে রণ নাহি নিবারণ।।
কর্ণ দুর্য্যোধন দেখি আনন্দিত মন।
হাসিয়া বলিল তবে মিহির নন্দন।।
বুঝিতে না পারি কিছু বিধাতার ইচ্ছা।
করিলাম যে প্রতিজ্ঞা সে হইল মিছা।।
অর্জ্জুনে বধিব আমি আছে অঙ্গীকার।
পড়িয়া সংসপ্ত হাতে হইবে সংহার।।
হরিষত হয়ে বড় রাজা ত্বরা করি।
কহিতে লাগিল গিয়া গুরু বরাবরি।।
তোমার ভারতী গুরু মস্তক ভূষণ।
একান্ত আমার তুমি জানিনু এখন।।
শত ভাই আমার সহায় কর্ণ রথী।
দ্রোণাচার্য্য অশ্বথামা মাতুল সুমতি।।
বেড়িয়া বধিব ভীমে ভয় তার কিসে।
যুধিষ্ঠিরে গিয়া গুরু ধর অনায়াসে।।
দ্রোণ বলে কর আজি সকলে সংগ্রাম।
আজি রণে ঘুচাইব পাণ্ডবের নাম।।
অপূর্ব্ব করিব ব্যূহ অদ্ভূত মানসে।
ব্যূহ করি সবাকারে মারিব নিঃশেষে।।
আজি সে ধরিব আমি ধর্ম্ম নৃপবর।
আমার প্রতিজ্ঞা এই সবার গোচর।।

চক্রব্যূহ করে তবে অদ্ভূত মানুষে।
মন্ত্রেতে পূর্ণিত করি অস্ত্র চারি পাশে।।
ব্যূহমুকে জয়দ্রথ রহে সাবধানে।
মহারথী মধ্যে যারে করিয়া গণনে।।
বহু রথ রথী হস্তী অশ্ব সেনাগণ।
ব্যূহমুখে জয়দ্রথ রহে সচেতন।।
তাহার পশ্চাতে রহে মহাশয় দ্রোণ।
দুই পার্শ্বে অশ্বথামা সূর্য্যের নন্দন।।
স্থানে স্থানে রাখে দ্রোণ মহাবীরগণ।
ব্যূহমধ্যে ভ্রাতৃসহ ‍রাজা দুর্য্যোধন।।
পশ্চাতে রহিল কৃপ শল্য ভগদত্ত।
সবে মহাপরাক্রম রণে মহামত্ত।।
দেবের অজিত ব্যূহ সৈন্য সমাবেশ।
সাহস না হয় কার করিতে প্রবেশ।।
দুই দলে মহাযুদ্ধ হয় গালাগালি।
সৈন্যে সৈন্যে সমর বাজিল রণস্থলী।।
সৈন্যে সৈন্যে মহাযুদ্ধ হৈল আগুয়ান।
গজে গজে মহাযুদ্ধ আর পাছু আন।।
রথে রথে হৈল যুদ্ধ অশ্বে আসোয়ার।
হুড়াহুড়ি রণস্থলে হৈল মহামার।।
চক্রব্যূহ করি দ্রোণ করে মহারণ।
নিমিষেকে নিপাতিল যত সৈন্যগণ।।
দ্রোণের বিক্রমে সেনাগণ নহে স্থির।
সম্মূখ হইয়া যুঝে নাহি হেন বীর।।
সংসপ্তকে রহিলেন পার্থ মহামতি।
হেথা সেনা বিনাশয়ে দ্রোণ যোদ্ধাপতি।।
একেশ্বর বৃকোদর করি প্রাণপণ।
নিবারণ করে আর যত যোদ্ধাগণ।।
যুধিষ্ঠিরে ধরিবারে যান দ্রোণ বীর।
নাহিক সম্ভ্রম কিছু নির্ভয় শরীর।।
যুধিষ্ঠির উপরে করেন শরবৃষ্টি।
বাণে অন্ধকার কৈল নাহি চলে দৃষ্টি।।
সহিতে না পারি বড় হইলা ফাঁপর।
মুহূর্ত্তেকে যুধিষ্ঠির করিয়া সমর।।
দশ বাণ এড়ে দ্রোণ রথের উপর।
দুই বাণে কাটি পাড়ে ধ্বজ মনোহর।।
চারি বাণে কাটি পাড়ে সারথির মুণ্ড।
চারি বাণে চারি অশ্ব করিলেন খণ্ড।।
অচল হইল রথ দেখি দ্রোণ বীরে।
ধরিবারে যায় তবে রাজা যুধিষ্ঠিরে।।
দেখিয়া কৌরবগণ হরিষ অন্তর।
ধন্য ধন্য করি দ্রোণে প্রশংসে বিস্তর।।
আজি ধরা গেল ধর্ম্মরাজ গুরু হাতে।
আজি মম মনোরথ পূরে ভালমতে।।

রাজার সঙ্কট দেখি ধৃষ্টদ্যুম্ন বীর।
আগুলিল দ্রোণে আসি নির্ভয় শরীর।।
দ্রোণের উপরে করে বান বরিষণ।
গগন ছাইল বাণে না দেখি তপন।।
অস্ত্রাঘাতে যুধিষ্ঠির হইয়া কম্পিত।
নকুলের রথ গিয়া চড়েন ত্বরিত।।
দ্রোণ ধৃষ্টদ্যুন্নে হয় অতি ঘোর রণ।
দুরেতে থাকিয়া তাহা দেখয়ে রাজন।।
ধৃষ্টদ্যুন্ন বাণ এড়ে তারা হেন ছুটে।
দ্রোণের ধনুক বীর চারি বাণে কাটে।।
আর দুই বাণ বীর এড়ে আচম্বিতে।
ধনুক কাটিয়া ফেলে দ্রোণের অগ্রেতে।।
আর ধনু লয়ে দ্রোণ গুণ দিয়া টানে।
সেই ধনু ধৃষ্টদ্যুন্ন কাটে এক বাণে।।
পুনরপি ধৃষ্টদ্যুন্ন এড়ে দশ বাণ।
দ্রোণের কবচ কাটি, করে খান খান।।
আর দশ বাণ বীর ছাড়িল ত্বরিত।
বাণাঘাতে দ্রোণাচার্য্য হইল মূর্চ্ছিত।।
দেখিয়া কৌরবগণ বিলাপ করিল।
পাণ্ডবের দলে বড় আনন্দ হইল।।

তবে কতক্ষণে দ্রোণ পাইল চেতন।
লাজে ভরদ্বাজপুত্র মলিন বদন।।
ক্রোধে এক ধনু লয়ে দিলেন টঙ্কার।
শব্দেতে লাগিল তালি কর্ণে সবাকার।।
সন্ধান পূরিয়া এড়ে দিব্য অস্ত্রগণ।
নিবারয়ে বাণে বাণ পাঞ্চাল নন্দন।।
তবে মহাক্রোধে দ্রোণ হৈল কম্পমান।
একেবারে প্রহারিল তীক্ষ্ম দশ বাণ।।
বাণাঘাতে ধৃষ্টদ্যুন্ন হইল মূর্চ্ছিত।
কবচ ভেদিয়া অঙ্গে বহিছে শোণিত।।
রথেতে পড়িল বীর হইয়া অজ্ঞান।
রথ লইয়া সারথি হৈল পাছুয়ান।।
মূর্চ্ছা ত্যজি উঠি বীর দেখে পলায়ন।
সারথিরে নিন্দা করি বলেন বচন।।
সম্মূখ সমরে মোর ফিরাইলি রথ।
দ্রোণ কি বলিষ্ঠ আমি নহি কি তেমত।।
এইক্ষণে দ্রোণে আমি বিনাশিব রণে।
ঝাট রথ লহ শুন দ্রোণ বিদ্যমানে।।

শুনিয়া সারথি রথ ফিরাইল বেগে।
অবিলম্বে নিল রথ দ্রোণাচার্য্য আগে।।
পুনঃ মুখামুকি দোঁহে হইল সমর।
দোঁহাকার বাণ গিয়া ঠেকিল অম্বর।।
মহাপরাক্রম দ্রোণ নানা অস্ত্র জানে।
ধৃষ্টদ্যুন্ন দুই ধনু কাটিলেন বাণে।।
ধনু যদি কাটি গেল, অন্য ধনু লয়।
সেই ধনু কাটি পাড়ে দ্রোণ মহাশয়।।
যত ধনু লয় বীর কাটে পুনর্ব্বার।
ক্রোধে শেল হাতে নিল দ্রুপদ কুমার।।
হাঁকারিয়া শেলপাট এড়ে বাহুবলে।
যতদূর যায় শেল ততদূর জ্বলে।।
শেলপাট দেখি দ্রোণ এড়ি দিব্য বাণ।
পাঁচ বাণে শেলপাট করে খান খান।।
শেল যদি কাটা গেল দ্রুপদ কুমার।
চিন্তিয়া ভাবেন মনে সকলি অসার।।
লাফ দিয়া ভূমে পড়ে লয়ে আসি ঢাল।
সম্মূখে পড়িয়া তবে বলে ভাল ভাল।।
ভাঙরি কাটিয়া বীর উঠে দ্রোণ রথে।
চারি অশ্ব কাটিলেক অতিশীঘ্র হাতে।।
সারথি কাটিয়া দ্রোণে কাটিবারে যায়।
চমৎকার সর্ব্বলোক একদৃষ্টে চায়।।
অর্দ্ধচন্দ্র বাণ গুরু করিয়া সন্ধান।
অসিচর্ম্ম কাটি তার করে খান খান।।
আর দশ বাণ গুরু মারে বায়ুবেগে।
দশবাণ ধৃষ্টদ্যুন্ন হৃদয়েতে লাগে।।
বিনাঘাতে ধৃষ্টদ্যুন্ন হইল মূর্চ্ছিত।
মেতে পড়িল বীর নাহিক সম্বিত।।
ধৃষ্টদ্যুন্নে বিমুখ দেখিয়া সর্ব্বজন।
করিলেন দ্রোণোপরি বাণ বরিষণ।।
তবে মহাক্রোধে দ্রোণ এড়ে দিব্যবাণ।
হয় হস্তী রথ রথী করে খান খান।।

এতেক দেখিয়া তবে রাজা যুধিষ্ঠির।।
করিছেন মনে চিন্তা কুপিত শরীর।।
চক্রব্যূহ করি দ্রোণ করে মহারণ।
পার্থ বিনা ব্যূহ বিন্ধে নাহি হেনজন।।
হেনকালে মনেতে পড়িল আচম্বিত।
অভিমন্যু মহাবীরে ডাকেন ত্বরিত।।

আইলেন অভিমন্যু রাজার আদেশে।
ভূমিষ্ঠ হইয়া বর রাজাকে সম্ভাষে।।
ধর্ম্ম বলিলেন পুত্র শুনহ বচন।
ব্যূহ ভেদিবার তুমি জান প্রকরণ।।
অভিমন্যু বলে রাজা করি দিবেদন।
প্রবেশ জানি যে আমি, না জানি নির্গম।।
যেইকালে ছিনু আমি, জননী জঠরে।
তাহার বৃত্তান্ত কহি তোমার গোচরে।।

পিতা মম জিজ্ঞাসিল গোবিন্দের স্থান।
ব্যূহ ভেদিবারে মোরে করহ বিধান।।
এত শুনি নারায়ণ ভূমিতে আঁকিয়া।
প্রত্যক্ষে বৃত্তান্ত সব দিলেন কহিয়া।।
হেনকালে জননী জিজ্ঞাসে সেইক্ষণ।
প্রবেশে জানিলে কহ নির্গম কারণ।।
এত যদি মাতা জিজ্ঞাসিলেন পিতারে।
নির্গম কারণ নাহি কহিল মায়েরে।।
নির্গম না জানি আমি জানাই তোমারে।
তবে করি, যাহা আজ্ঞা করিবে আমারে।।

শ্রীধর্ম্ম বলেন পুত্র শুনহ কারণ।
তোমার পশ্চাতে যাবে যত যোদ্ধাগণ।।
ব্যূহ ভেদি মার পুত্র দ্রোণ ধনুর্দ্ধর।
তোমার বিক্রম যত আমাতে গোচর।।
বাপের সমান পুত্র মহাধনুর্দ্ধর।
তোমার সহিত যাবে যত বীরবর।।
তোমার পশ্চাতে যাবে ভীম আদি করি।
সত্বর আইস পুত্র দ্রোণেরে সংহারি।।
অন্ধের জীবন তুই নয়নের তারা।
না দেখিলে তোমা ধনে ক্ষণে হই হারা।।
প্রাণ পাঠাইয়া রব সংশয়ের স্থান।
তোমার পশ্চাতে যাবে যত যোদ্ধাগণ।।
এত বলি শিরে রাজা করেন চুম্বন।
প্রশংসিয়া ঘন ঘন দেন আলিঙ্গন।।
কিশোর বয়স তব নব্য কলেবর।
রমণীমোহন রূপ অতি মনোহর।।
অগুরু চন্দন গায় বায়ু বহে গন্ধ।
ভুবনবিজয়ী বীর নহে নিরানন্দ।।
মণি মরকত আদি আভরণ গায়।
হেরিলে জুয়ায় আঁখি আপদ পলায়।।
পীতাম্বর পরিধান হাতে শর ধনু।
সাহসে সিংহের প্রায় দোষহীন তনু।।
রাজাকে কহিল বার না করিহ ভয়।
করিব সমরে আজি রিপুগণ ক্ষয়।।
আজি যুদ্ধে বিনাশিব দ্রাণ ধনুর্দ্ধরে।
দ্রোণে না মারিয়া আমি না আসিব ঘরে।।
এই সত্য কথা মম শুন নৃপবর।
ইহাতে আপনি কেন এতেক কাতর।।

এত বলি যুঝিতে চলিল বীরবর।
সারথিরে বলে রথ সাজাও সত্বর।।
সুমন্ত্র সারথি বলে করি যোড়কর।
এক নিবেদন মম শুন ধনুর্দ্ধর।।
অত্যল্প বয়স তব নবীন যৌবন।
দ্রোণ সহ তোমার উচিত নহে রণ।।
যমের সমান হেন দেখ দ্রোণ বীর।
যার বাণে যোদ্ধাগণ কেহ নহে স্থির।।
এতেক শুনিয়া বীর ক্রোধে হুতাশন।
সারথিরে চাহি বলে করিয়া গর্জ্জন।।
কৃষ্ণের ভাগিনা আমি অর্জ্জুন তনয়।
ত্রিভুবন মধ্যেতে কাহারে মোর ভয়।।
দ্রোণের সহিত আজি করিব সমর।
এক বাণে তাহারে পাঠাব গমঘর।।
আজি যদি দ্রোণে আমি মারিবারে পারি।
বড় তুষ্ট হইবেন মাতুল শ্রীহরি।।
যুধিষ্ঠির রাজার করিব কিছু হিত।
করিব সমর আজি জানাই নিশ্চিত।।
এইক্ষণে রথ তুমি সাজাও সত্বর।
অবশ্য করিব যুদ্ধ কিছু নাহি ডর।।

এতেক শুনিয়া তবে সুমন্ত্র সত্বর।
তুলিল বহুল অস্ত্র রথের উপর।।
জাঠি শেল ঝকড়া যে মুষল মুদগর।
শক্তি ভিন্দিপাল তোলে অসংখ্য তোমর।।
মহাদর্প করি উঠে রথের উপর।
ব্যূহ ভেদিবারে যায় পার্থ বংশধর।।
ভীম আদি করি তবে মহারথীগণ।
তাহার পশ্চাতে যান করিবারে রণ।।
ব্যূহে প্রবেশিল বীর চক্ষুর নিমিষে।
নানা অস্ত্র সৈন্যগণ উপরে বরষে।।
প্রলয়ের মেষ যেন সংহারিতে সৃষ্টি।
ততোধিক অভিমন্যু করে শরবৃষ্টি।।
ঝাঁকে ঝাঁকে বাণ মারে সৈন্যের উপর।
মার মার বলি ডাকে অর্জ্জুন কোঙর।।
এক গোটা বাণ বীর তূণ হৈতে আনে।
দশ গোটা বাণ হয় ধনুকের গুণে।।
গমনে শতেক হয়, সহস্র পতনে।
এই মত পুনঃ পুনঃ এড়ে অস্ত্রগণে।।
পড়িল অনেক সৈন্য রক্তে বহে নদী।
কুরুসৈন্য রক্তে স্নান করে বসুমতী।।
ভীম আদি করিয়া যতেক বীরগণ।
ব্যূহমুখে গিয়া সবে করে মহারণ।।
জয়দ্রথ ব্যূহ রক্ষা করে প্রাণপণে।
না দেয় দুয়ার ছাড়ি অন্য বীরগণে।।
যুধিষ্ঠির ভীম আদি নকুল দুর্জ্জয়।
পার্থ বিনা সবাকারে করিলেক জয়।।
জয়দ্রথ যুদ্ধ করে অতি ঘোরতর।
বিমূখ করিল সর্ব্ব বীরে একেশ্বর।।

এতেক শুনিয়া জন্মেজয় জিজ্ঞাসিল।
কহ মুনিবর আরো শুনিতে হইল।।
পাণ্ডবগণেরে জয়দ্রথ করে জয়।
ইহার কারণ মোরে কহ মহাশয়।।
দ্রোণপর্ব্ব সুধারস অভিমন্যু বধে।
কাশীরাম দাস কহে গোবিন্দের পদে।।