০২. শ্রীকৃষ্ণের সহিত পাণ্ডবদিগের মন্ত্রণা

হেথায় ধর্ম্মের পুত্র সহ ভ্রাতৃগণ।
কৃষ্ণ সনে বসি সবে আনন্দিত মন।।
দ্রুপদ বিরাট আর সাত্যকি সংহতি।
ধৃষ্টদ্যুন্ন চেকিতান যুযুৎসু নৃপতি।।
অভিমন্যু ঘটোৎকচ পঞ্চপুত্র আর।
সভায় বসিয়া সবে করয়ে বিচার।।
হেনকালে দূত গিয়া কহিল সত্বর।
দ্রোণ সেনাপতি হৈল শুন নরবর।।
তোমারে ধরিয়া দিতে কৌরব বলিল।
ধরিব বলিয়া দ্রোণ প্রতিজ্ঞা করিল।।
ইহার বিধান আজ্ঞা কর নৃপবর।
নিবেদন করি এই তোমার গোচর।।

এত শুনি যুধিষ্ঠির আতঙ্ক পাইয়া।
করিলেন জিজ্ঞাসা নারায়ণে চাহিয়া।।
প্রতিজ্ঞা করিল দ্রোণ ধরিতে আমারে।
কিমতে পাইব রক্ষা কহ কৃষ্ণ মোরে।।
ভুবনে দুর্জ্জয় দ্রোণ বীর মহারথী।
প্রতিজ্ঞা খণ্ডায় তাঁর কেবা হেন কৃতী।।
হৃদয় কম্পিত মম খণ্ডে নাহি ভয়।
কি করি উপায়, কহ কৃষ্ণ মহাশয়।।
অশেষ সঙ্কটে পার করিয়াছ তুমি।
কার মনে ছিল যে আসিব দেশে আমি।।
সভায় দ্রৌপদী লজ্জা কর নিবারণ।
তোমা বিনা পাণ্ডবের গতি কোন্ জন।।
হাসিয়া বলেন কৃষ্ণ শুনহ বচন।
কি শক্তি তোমারে ধরি লইবেক দ্রোণ।।
শত দ্রোণ হয়ে যদি আইসে সমরে।
তবু কি তাহার শক্তি ধরিবে তোমারে।।
ব্রহ্মা যদি আপনি আসিয়া করে রণ।
তবু তব পরাজয় না হবে কখন।।

ভীম বলে মহারাজ কি ভয় তোমার।
তোমাকে ধরিবে হেন শক্তি আছে কার।।
সহদেব নকুল যতেক যোদ্ধাগণ।
তোমারে রাখিবে সবে করিয়া যতন।।
কৃষ্ণ বলিলেন শুন ধর্ম্মের নন্দন।
ভীমে সেনাপতি করি তুমি কর রণ।।
মহাযোদ্ধা ভীমসেন হবে সেনাপতি।
সমরে অজয় শক্তি অকাতর মতি।।

এত শুনি যুধিষ্ঠির আনন্দিত মনে।
অভিষেক ভীমেরে করেন সেইক্ষণে।।
ভীমে সেনাপতি করি ধর্ম্মের নন্দন।
হরষিত হইলেন সব যোদ্ধাগণ।।
বাদ্য কোলাহলে কর্ণে কিছুই না শুনি।
জয় জয় শব্দ করে যতেক বাহিনী।।
বাজিল দুন্দুভি শঙ্খ অতি সুললিত।
বীণা বাঁশী বাজে আর সুমধুর গীত।।
ভীম বলে মহারাজ শুনহ বচন।
কালি ধৃতরাষ্ট্রপুত্রে করিব নিধন।।
এত শুনি হরষিত ধর্ম্মের নন্দন।
মহানাদে গর্জ্জন করিল সেনাগণ।।
সৈন্য কোলাহলে যেন সিন্ধু উথলিল।
অশ্ব গজ গর্জ্জনে শ্রবণ রুদ্ধ হৈল।।
পাঞ্চজন্য শঙ্খ কৃষ্ণ বাজান আপনে।
পৃথিবীর যত বাদ্য করে আচ্ছাদনে।।
হৃষ্টচিত্তে সর্ব্বজন বঞ্চিল রজনী।
প্রভাতে উঠিয়া সৈন্যে বলেন ফাল্গুনি।।
রাজারে রখিবে সবে করিয়া যতন।
কোনমতে ধরিতে না পারে যেন দ্রোণ।।