০০৭. জরৎকারু উপাখ্যান

জিজ্ঞাসিল রুরু তবে জনকের স্থানে।
সর্পযজ্ঞ জন্মেজয় কৈল কি কারণে।।
প্রমতি বলেন, বৎস কর অবধান।
মহাশ্চর্য্য সর্প-যজ্ঞ অপূর্ব্ব আখ্যান।।
যাযাবর বংশে জন্ম জরৎকারু মনি।
যোগেতে পরম যোগী ত্রিজগতে জানি।।
স্বচ্ছন্দে ভ্রমিয়া গেল দেশ-দেশান্তরে।
উলঙ্গ উম্মত্তবেশ সদা অনাহারে।।
একদা অরণ্য-মধ্যে ভ্রমে তপোধন।
একগোটা গর্ত্ত দেখে অদ্ভুত রচন।।
তার মধ্যে দেখয়ে মনুষ্য কত জন।
এক উলামূল ধরি আছে সর্ব্বজন।।
অপূর্ব দেখিয়া জিজ্ঞাসিল মুনিবর।
কি কারণে এত দুঃখ তোমা সবাকার।।
যে উলার মূল ধরি আছ সর্ব্বজনে।
মূষিক খুঁজিছে মূল, না দেখ নয়নে।।
একগোটা মূল মাত্র দৃঢ় আছে তৃণে।
এখনি ছিঁড়িবে উহা ইন্দুর-দংশনে।।
তবে ত পড়িবে সবে গর্ত্তের ভিতর।
এত শুনি পিতৃগণ করিল উত্তর।।
যাযাবর বংশে আমা সবার উৎপত্তি।
নির্ব্বংশ হইনু সেই হৈল হেন গতি।।
ঋষি বলে, বংশে কেহ নাহি কি তোমার।
বংশ-রক্ষা করি করে সবার উদ্ধার।।
পিতৃগণ বলে, মাত্র আছে একজন।
মূর্খ দুরাচার সেই বংশ-অভাজন।।
না করিল কুলধর্ম্ম বংশের রক্ষণ।
জরৎকারু নাম তার, শুন মহাজন।।

এত শুনি জরৎকারু বিস্ময় হইয়া।
আমি জরৎকারু বলি কহিল ডাকিয়া।।
কি করিব, আজ্ঞা মোরে কর পিতৃগণ।
যে আজ্ঞা করিবে, তাহা করিব পালন।।
পিতৃগণ বলে, কর বনিতা গ্রহণ।
পুত্র জন্মাইয়া কর বংশের রক্ষণ।।
সর্ব্বশাস্ত্রে বিজ্ঞ তুমি তপেতে-তৎপর।
পুত্রবন্তে যেই ধর্ম্ম তোমাতে গোচর।।
মহাপুণ্য করি লোক না যায় যথায়।
পুত্রবন্ত লোক সব তথাকারে ধায়।।
তে কারণে বিবাহ করহ মুনিবর।
পুত্র জন্মাইয়া আমা-সবা রক্ষা কর।।

পিতৃগণ-বাক্য শুনি বলে জরৎকার।
যত্নে না করিব বিভা, মম অঙ্গীকার।।
মোর নামে কন্যা যদি যাচি কেহ দেয়।
তবে সে করিব বিভা কহিনু নিশ্চয়।।
তাহার গর্ভেতে যেই জন্মিবে কুমার।
তোমা সবাকারে সেই করিবে উদ্ধার।।
শুনি অন্তর্দ্ধান হৈল যত পিতৃগণ।
শূন্যেতে ডাকিয়া তবে বলিল বচন।।
বিভা করি জরৎকারু জন্মাও সন্ততি।
সন্তান জন্মিলে হবে বংশের সদ্গতি।।
যেই বেণামূল সবে ছিলাম ধরিয়া।
তুমি আছ, তাই মূল আছে ত লাগিয়া।।
মূষিকে খুঁড়িতেছিল মূষিক সে নয়।
মূষা-রূপে আপনি সে ধর্ম্ম-মহাশয়।।

তাহা শুনি জরৎকারু করিল গমন।
বহু-দেশ-দেশান্তর করেন ভ্রমণ।।
পিতৃ-গণ আজ্ঞা শুনি চিন্তে অনুক্ষণে।
যাচি কন্যা দিতে কেহ নাহি কি ভুবনে।।
মহাবনে প্রবেশ করিল জরৎকার।
কন্যা কার আছে দেহ, বলে তিনবার।।
আছিল তথায় বাসুকির অনুচর।
মুনির সন্দেশ কহে বাসুকি-গোচর।।
এত শুনি বাসুকি যে আনন্দ অপার।
ভগিনী সহিত গেল যথা জরৎকার।
মুনিবরে ফণিবর কহে নিবেদন।
আমার ভগিনী তুমি করহ গ্রহণ।।
মুনি বলে, এই কন্যা কোন নাম ধরে।
সত্য করি কহ শুনি না ভাণ্ডিহ মোরে।।
মোর নামে হয় যদি ভগিনী তোমার।
বিবাহ করিব তবে, কৈনু অঙ্গীকার।।
বাসুকি বলিল, নাম ধরে জরৎকারী।
তোমার লাগিয়া জন্ম ল’য়েছে সুন্দরী।।
যত্নে রাখিয়াছি আমি তোমার কারণে।
তোমার আজ্ঞায় আনিলাম এতদিনে।।
এত বলি কন্য দিয়া গেল ফণিবর।
শুনি নাগলোকে হৈল আনন্দ বিস্তর।।
মহাভারতের কথা সুধা হইতে সুধা।
কর্ণপথে কর পান, যাবে ভব-ক্ষুধা।।
বহু চিত্র-কথা যত ব্যাস বিরচিত।
অমর-কিন্নর-নর-নাগের চরিত।।
বিবিধ বিপদ খণ্ডে যাহার শ্রবণে।
আত্মশুদ্ধি বংশবৃদ্ধি পাপ-বিমোচনে।।
স্ববাঞ্ছিত ফল হয় ইথে নাহি আন।
হরিপদে মতি হয়, জন্মে দিব্যজ্ঞান।
এই কথা শ্রবণে সকল পাপ নাশে।
গীতিচ্ছন্দে বিরচিল তাহা কাশীদাসে।।