৩২. শ্রীকৃষ্ণের প্রতি বভ্রুবাহনের বিনয়

বভ্রুবাহ নরনাথ, যোড় করি দুই হাত,
নিবেদয়ে কৃষ্ণের চরণে।
আমি অতি দুরাশয়, শুন কৃষ্ণ মহাশয়,
জানিয়া প্রবৃত্ত এই রণে।।
অশ্ব এল মণিপুরে, কহিলেন অনুচরে,
অহঙ্কারে ধরিলাম আমি।
অশ্বভালে লেখা যত, পড়িয়া হইনু জ্ঞাত,
শুন শুন দেব চক্রপাণি।।
পরিচয় পিতাসনে, ইচ্ছা করিলাম মনে,
বিশেষ কহিল চিত্রাঙ্গদা।
অশ্ব নিয়া আগে ধরি, কুসুম চন্দন পূরি,
দূর করি আপন মর্য্যাদা।।
নানারত্ন স্বর্গথালে, দিয়া পার্থ পদতলে,
যথাযোগ্য করিনু প্রণাম।
জারজ বলিয়া মোরে, লাথি মারিলেন শিরে,
সভাতে পাইনু অপমান।।
তবু দুঃখ নাহি ধরি, আমি কৃতাঞ্জলি করি,
করিলাম অনেক বিনয়।
শুন শুন চক্রপাণি, নটীর তনয় আমি,
কহিলেন পার্থ মহাশয়।।
এ পঞ্চভৌতিক দেহ, কাম ক্রোধ লোভ মোহ,
সম্বরিতে না পারিনু আমি।
অবশেষে যুদ্ধকার্য্য কহিলাম শুন আছ।।
অহঙ্কারে হয়ে মত্ত, না বুঝিনু ধর্ম্মতত্ত্ব,
বিনাশ করিনু জন্মদাতা।
প্রবেশিয়া রসাতলে, নাগে জিনিলাম বলে,
মনি আনি না দেখিনু মাথা।।
আদি অন্ত বিবরণ, করিলাম নিবেদন,
কে লইল হরি পার্থশির।
আমি আপনার প্রাণ, না রাখিব ভগবান,
ভাল হৈল এলে যদুবীর।।
এত বলি বভ্রুবাহ, ত্যাজিয়া সকল মোহ,
দিব্য অস্ত্র লইল তখন।
নৃপতির হাতে ধরি, বারণ করেন হরি,
না মরিও অর্জ্জুন নন্দন।।
মহাভারতের কথা, শুনিলে ঘুচয়ে ব্যথা,
কলির কলুষ হয় নাশ।
কমলাকান্তের সুত, হেতু সুজনের প্রীত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।