২০. তপ্ত তৈলে সুধম্বার পতনে রাজা ও রাণীর শোক

না দেখিয়া সুধন্বারে, কান্দিতেছে উচ্চৈঃস্বরে,
ভূমিতে লোটায়ে সর্ব্বজন।
কেহ মনে দুঃখ পেয়ে, রাজার সম্মূখে গিয়ে,
কহিলেন সুধম্বা নিধন।।
তাহা শুনি পুরোহিতে রাজা কহে দুঃখচিত্তে,
সুধম্বা মরিল তৈল পাশে।
রক্ষা পায় ধর্ম্মপথ, রহিল শাস্ত্রের মত,
দেখিবারে চলহ হরিষে।।
তবে হংধ্বজ রায়, ধরি পুরোহিত পায়,
তৈল পাশে আনিল সত্বরে।
তাহাতে বেড়িয়া লোক, করে নানাবিধশোক,
না দেখি বৈষ্ণব সুধন্বারে।।
হংসধ্বজ নরপতি, বিহবলে পড়িয়া ক্ষিতি,
পুত্রশোকে হরিল চেতন।
কেহ জল দেয় মুখে, কর্ণমুলে কেহ ডাকে,
পুত্রশোকে মুর্চ্ছিত রাজন।।
নগরে বনিতা ধেয়ে, সমাচার দিল গিয়ে,
সুধন্বার জননি যেখানে।
শুন শুন ঠাকুরাণী, সুধন্বা ত্যজিল প্রাণী,
অগ্নি সহ তৈলের মিলনে।।
শুনি অমঙ্গল কথা, চলে সুধন্বার মাতা,
ত্যজিয়া চলেন অন্তঃপুরী।
বধূগণ চলে সাথে, শোকাকূল হয়ে চিতে,
প্রভাবতী সুধন্বার নারী।।
লজ্জা ভয় নাহিকরে, কান্দেরামা উচ্চৈঃস্বরে,
কোথা প্রভু বৈষ্ণব সুধন্বা।
রণস্থলে প্রবেশিয়ে, কে ধরিবে ধনঞ্জয়ে,
কৃষ্ণকে দেখাবে কোন জনা।।
ধরিয়া রাজার পায়, কান্দে রাণী উভরায়,
কেন কৈলা নিদারুণ পণ।
রণস্থলে প্রবেশিবে, অর্জ্জুনেরে পরাজিবে,
মিছে তুমি করিলে ভাবনা।।
রাজা বলে উঠ পুত্র, লহ তুমি নানা অস্ত্র,
পরাভব করহ অর্জ্জুনে।
আছিল সে অভিলাষ, দেখিবারে শ্রীনিবাস,
আনিয়া দেখাও নারায়ণে।।
এত বলি সে রাজন, পুত্রশোকে অচেতন,
প্রবোধ করয়ে রাজরাণী।
শোকসিন্ধু তেয়াগিয়া, অর্জ্জুনেরে পরাজিয়া,
আনিয়া দেখাও চক্রপাণি।।
পুলকে পূর্ণিত হয়ে, নৃপ অগ্রে পাত্র ধেয়ে,
কহিছেন শুন মহারাজ।
সুধম্বা না মরে তৈলে, বসিয়াছে কুতূহলে,
যেন দেখি প্রফুল্ল পঙ্কজ।।
মহাভারতের কথা, শ্রবণে ঘুচয়ে ব্যথা,
কলির কলুষ হয় নাশ।
কমলাকান্তের সুত, সুজনের মনঃপুত,
বিরচিল কাশীরাম দাস।।