১৬. পাষাণ হইতে অশ্ব উদ্ধার

তপোবনে মুনিস্থানে করহ প্রস্থান।
দুঃখ না ভাবিও তুমি শুনহ অর্জ্জুন।।
প্রদ্যুন্ন অর্জ্জুন আর কত রথিগণে।
মুনি সম্ভাষিতে সবে গেল তপোবনে।।
সৌভরি রহিয়াছেন আপন আশ্রমে।
শিষ্যগণ বসিয়াছে তাঁর বিদ্যমানে।।
বেদ শাস্ত্র পাঠ দেন আনন্দিত মনে।
বনঞ্জয় কামদেব গিয়া সেইখানে।।
প্রণিপাত করিলেন ভূমিষ্ঠ হইয়া।
নিজ পরিচয় দেন বিনয় করিয়া।।

পাণ্ডুর তনয় যুধিষ্ঠির নরপতি।
অশ্বমেধ করিলেন কৃষ্ণের সংহতি।।
আমরা আইনু অশ্ব করিতে রক্ষণ।
অর্জ্জুন আমার নাম শুন তপোধন।।
ভ্রমিতে ভ্রমিতে অশ্ব আইল কানন।
পাষাণে ধরিল গোড়া না জানি কারণ।।
ভয় পেয়ে নিবেদন চরণে তোমার।
কহ কহ মহামুনি কি হবে আমার।।
জ্ঞাতিবধ পাপে রাজা উৎকন্ঠিত মন।
না হইল যজ্ঞ সাঙ্গ শুন তপোধন।।

অর্জ্জুন কহেন যদি এতেক উত্তর।
শুনিয়া ঈষৎ হাসি কহে মুনিবর।।
শুন শুন পার্থ তুমি বচন আমার।
চিত্তের সন্দেহ কেন না ঘুচে তোমার।।
অখিল ব্রহ্মাণ্ডনাথ তোমার সারথি।
তথাপিও পাপ বলি মনে ভাব ভীতি।।
কোটি ব্রহ্মহত্যা যায় যাঁহার স্মরণে।
হেন কৃষ্ণ নাম তুমি নাহি লও কেনে।।
না দেখি যে কিছু ভক্তি তোমার অন্তরে।
সখা বলি জান তুমি দেব গদাধরে।।
হিংসাতে পূতনা পায় কৃষ্ণের শরীর।
জ্ঞাতিবধ পাপে কেন ভাবে যুধিষ্ঠির।।
সতত সম্মূখে যেই দেখে নারায়ণ।
পাপ নাহি থাকে তার পাণ্ডুর নন্দন।।
তবে যদি অশ্বমেধে করিয়াছ মতি।
পাইবে যজ্ঞের হয় না করহ ভতি।।
ব্রহ্মশাপে শিলাতনু হইল ব্রাহ্মণী।
চণ্ডী নামে উদ্দালক মুনির রমণী।।
তুমি পরশিলে তার হইবে মুকতি।
পাইবে পূর্ব্বের তনু শুন মহামতি।।
মুক্ত হইবেক অশ্ব শুন মহাশয়।
গোবিন্দ বান্ধব তুমি না করিহ ভয়।।

শুনিয়া এসব কথা সৌভরি বদনে।
অশ্ব পাশে আইলেন আনন্দিত মনে।।
মুনির বচনে তবে আনন্দ অন্তরে।
শিলা পরশিয়া উদ্ধারেন অশ্ববরে।।
অর্জ্জুন শিলাকে স্পর্শিলেন দুই করে।
শিলারূপ পরিহরি নারীরূপ ধরে।।
বহুমতে অর্জ্জুনেরে করিল স্তবন।
তোমার পরশে হৈল এ পাপ মোচন।।
তুমি নারায়ণ ইথে নাহি করি আন।
শাপ হতে আমারে করিলে পরিত্রাণ।।
মুক্ত হয়ে নিজালয়ে গেলেন ব্রাহ্মণী।
পাণ্ডবের সৈন্য দিল জয় জয় ধ্বনি।।
মহাভারতের কথা অমৃত লহরী।
কাশীরাম দাস কহে ভবভয় তরি।।