০০৫. ভৃগুবংশ উপাখ্যান

সৌতি বলে অবধান কর মুনিগণ।
কহিব বিচিত্র কথা ব্যাসের বচন।
ব্রহ্মার নন্দন হৈল ভৃগুমহামুনি।
পুলোমা নামেতে কন্যা তাহার গৃহিণী।।
গর্ভবতী পুলোমা রাখিয়া নিজ ঘরে।
মহামুনি ভৃগু গেল স্নান করিবারে।।
হেনকালে তথা আসে দৈত্য একজন।
হরিবারে গুরুপত্নী করিয়া মনন।।
কামেতে পীড়িত চিত্ত অন্যে নাহি ভয়।
ফলমূল দিল কন্যা কিছু নাহি লয়।
বলেতে ধরিব বলি বিচারিল মনে।
গৃহে প্রবেশিতে দেখে জলন্ত আগুনে।।
অগ্নিপানে চাহি বলে দানব দুরন্ত।
কহ বৈশ্বানর তুমি জান আদি অন্ত।।
ইহার জনক পূর্ব্বে বরিলেক মোরে।
না দিয়া বিবাহ মোরে দিলেন ভৃগুরে।।
মিথ্যাবাদি ভৃগু নাহি করিল বিচার।
বিভা করি আনে কন্যা বরণ আমার।।
না কহিও মিথ্যা তুমি কহ সত্যবাণী।
ন্যায়েতে এ কন্যা হয় কাহার গৃহিণী।।
দানবের কথা শুনি অগ্নি হৈল ভীত।
কহিব কেমনে মিথ্যা হইল চিন্তিত।।
সত্য কৈলে কন্যা লৈয়া যাইবে দানব।
ভাবিয়া তাহার প্রতি বলে জলোদ্ভব।।
যে কালে ইহার বাপ কহিলেক মোরে।
বিধিমত বেদমন্ত্র তোমা নাহি বরে।।
বিধিমতে বিভা কৈল ভৃগু মুনিবর।
ইহার জনক দিল আমার গোচর।।
ন্যায়েতে পুলোমা হৈল ভৃগুর রমণী।
শুনিয়া দানব হৈল জলন্ত আগুনি।।
বলে ধরি কন্যা ল’য়ে চলিল সত্বর।
ভয়েতে বিকলা কন্যা কাঁপে থর থর।।
কান্দয়ে পুলোমা বহু বিলাপ করিয়া।
বালকে জন্মিল ক্রোধ গর্ভেতে থাকিয়া।।
দ্বিতীয় সূর্যের প্রায় হইল বাহির।
বিখ্যাত চ্যবন নাম সেই মহাবীর।।
দৃষ্টি মাত্রে ভৃগুপুত্র রাক্ষস দুর্জ্জন।
সেই দণ্ডে ভস্মীভূত কৈল তপোধন।।
হেনকালে তথায় আইল পদ্মযোনি।
ক্রন্দন নিবৃত্ত কৈল বলি প্রিয়বাণী।।
ক্রন্দনে বহিল অশ্রুজল পুলোমার।
খরতর স্রোতে বহে নদী সে অপার।।
দেখিয়া বিস্ময় চিত্ত হইলেন বিধি।
নাম তার দিল তবে বধূমতী নদী।।
বধূকে রাখিয়ে গৃহে গেল প্রজাপতি।
পুত্র কোলে করিয়া আছয়ে দুঃখমতি।।
হেনকালে স্নান করি আসে ভৃগু তথা।
জিজ্ঞাসিল কেন তোর চিত্ত বিচলতা।।
স্বামীরে দেখিয়া কন্যা করিয়া রোদন।
কহিলেন যতেক দানব-বিবরণ।।
তোমার তনয় এই কৈল প্রতিকার।
দানবে মারিয়া মোরে করিল উদ্ধার।।
এত বলি পুনঃ ভৃগু হেতু জিজ্ঞাসিল।
কি কারণে দানব ধরিয়া তোরে নিল।।
কন্যা বলে আচম্বিতে আসি দুষ্টমতি।
আমারে দেখিয়া জিজ্ঞাসিল অগ্নি প্রতি।।
বৈশ্বানর-বাক্যে মোরে নিলেক দুর্জ্জন।
শুনি শাপ দিল ভৃগু ক্রোধে অচেতন।।
আজি হৈতে সর্ব্বভক্ষ্য হও হুতাশন।
ত্রাসিত অনল শুনি ভৃগুর বচন।।
কোন্‌ দোষে ভৃগুমুনি শাপ দিলে মোরে।
যাহা জানি তাহা বলি আমি দানবেরে।।
জানিয়া শুনিয়া মিথ্যা বলে যেই জন।
ইহলোকে কুৎসা অন্তে নরকে গমন।।
উভয় সপ্তম কুল নরকে প্রবেশে।
জানিয়া আমারে শাপ দিলে কোন্‌ দোষে।।
মোর মুখে দিলে তৃপ্ত দেব পিতৃগণ।
অনুচিত শাপ মোরে দিলে কি কারণ।।
এত বলি বৈশ্বানর দেবগণ লৈয়া।
ব্রহ্মারে সকল কথা নিবেদিল গিয়া।।
ব্রহ্মা বলে অগ্নি দুঃখ না ভাবিহ মনে।
সকল হইবে শুদ্ধ তোমার কারণে।।
ব্রহ্মার বচনে অগ্নি সন্তুষ্ট হইয়া।
পুনরপি ত্রিজগতে ব্যাপিল আসিয়া।।