০০৬. রুরুর সর্প হিংসা

সৌতি বলে অবধান কর মুনিবর।
হেনমতে ভৃগু পুত্র হইল চ্যবন।।
প্রমতি নামেতে হৈল চ্যবন-তনয়।
তাহার তনয় হৈল রুরু মহাশয়।
প্রমদ্বরা ভার্য্যা তার পরমা-সুন্দরী।
গর্ভে জন্ম হৈল তার মেনকা অপ্সরী।।
কতকালে মৈল কন্যা সর্পের দংশনে।
দেখি শোকাকুল হৈল যত বন্ধুগণে।।
ভার্য্যার মরণশোকে প্রমতি-নন্দন।
একাকী অরণ্যমধ্যে করয়ে ক্রন্দন।।
মুনির ক্রন্দন দেখি যত দেবগণ।
পাঠাইল দেবদূত প্রবোধ-কারণ।।
দেবদূত বলে রুরু কান্দ কি কারণে।
মরিল তোমার ভার্য্যা আয়ুর বিহনে।।
ইহার উপায় আর নাহিক ত্রিলোকে।
আছয়ে উপায় এক কহিব তোমাকে।।
আপন অর্দ্ধেক আয়ু যদি দেহ তারে।
তবে পাবে নিজ ভার্য্যা কহিনু তোমারে।।
অর্দ্ধ আয়ু দিব রুরু কৈল অঙ্গীকার।
জীউক যে ভার্য্যা মোর কর প্রতিকার।।
এত শুনি দেবদূত রুরুকে লইয়া।
যমের ভবনে গেল বিমানে চড়িয়া।।
যমেরে কহিল দূত সব বিবরণ।
অর্দ্ধ আয়ু স্ত্রীকে দল প্রমতি-নন্দন।।
ধর্ম্মরাজ বলে পাবে তোমার কামিনী।
যাও যাও নিজালয়ে ওহে দ্বিজমণি।।
ধর্ম্মবলে প্রেমদ্বারা জীবন পাইল।
দেখিয়া প্রমতি-পুত্র সানন্দ হইল।।
প্রতিজ্ঞা করিল রুরু ক্রোধে ততক্ষণে।
মারিব ভুজঙ্গ যত দেখিব নয়নে।।
হাতে দণ্ড ভ্রমে রুরু সর্প অম্বেষণে।
মারিল অনেক সর্প না যায় গণনে।।
একদিন ভ্রমে মুনি অরণ্য ভিতর।
দেখিলেন মহাসর্প অতি ভয়ঙ্কর।।
সর্প দেখি দণ্ড ল’য়ে যায় মারিবারে।
দেখিয়া ডুণ্ডুভ ডাকি কহে উচ্চৈঃস্বরে।।
কি দোষ করিনু আমি তোমার সদনে।
অহিংসক জনে মার কিসের কারণে।।
রুরু বলে দোষ গুণ না করি বিচার।
সর্প পেলে সংহারিব প্রতিজ্ঞা আমার।।
ডুণ্ডুভ বলেন আমি নাম মাত্র সাপ।
অহিংসক হিংসনে জন্মায় মহাপাপ।।
এতেক শুনিয়া রুরু ভাবে মনে মন।
জিজ্ঞাসিল সর্প তুমি কোন্‌ মহাজন।।
সর্প বলে পূর্ব্বে ছিনু মুনির কুমার।
চিত্রসেন নামে সখা ছিলেন আমার।।
তালপত্র এক সর্প করিয়া রচন।
সখারে দিলাম আমি হাস্যের কারণ।।
সর্প দেখি মোহ গেল মুনির তনয়।
ক্রোধ করি শাপ মোরে দিল অতিশয়।।
হীনবীর্য্য সর্প হৈয়া থাকহ কাননে।
পুনরপি কহে মোরে করুণ বচনে।।
অচিরে হইবে মুক্ত শুন প্রাণসখা।
রুরু সহ যেই দিনে হবে তব দেখা।।
প্রমতির পুত্র তুমি ভৃগুবংশে জন্ম।
দ্বিজ হৈয়া কর কেন ক্ষত্রিয়ের কর্ম্ম।।
ব্রাহ্মণের কর্ম্ম নয় লোকের হিংসন।
অল্প দোষে দেখ মোর দুর্গতি লক্ষণ।।
অহিংসা পরম ধর্ম্ম করহ পালন।
ভয়ার্ত্ত জনেরে রক্ষ করিয়া যতন।।
পূর্ব্বে রাজা জন্মেজয় সর্পযজ্ঞ কৈল।
?য়ায় সর্পের কুল ব্রহ্মণে রাখিল।।
আস্তিক নামেতে দ্বিজ জরৎকারু-সুত।
যাঁহার চরিত্র-কথা শুনিতে অদ্ভুত।।
রুরু বলে কহ শুনি আস্তিক-আখ্যান।
কিমতে নাগের কুল কৈল পরিত্রাণ।।
কি কারণে সর্পযজ্ঞ কৈল জন্মেজয়।
কহ শুনি মুনিবর ঘুচুক বিস্ময়।।
মুনি কহে সেই কথা কহিতে বিস্তার।
শুনিবারে চিত্ত যদি আছয়ে তোমার।।
মুনিগণে জিজ্ঞাসিলে কহিবে সকল।
আজ্ঞা দেহ যাব আমি আপনার স্থল।।
এতবলি দিব্যমূর্ত্তি হৈল ততক্ষণে।
অন্তর্দ্ধান হৈয়া মুনি গেল যথাস্থানে।।
বিস্ময় জন্মিল রুরু মনোদুঃখী তাপে।
আপনার গৃহে আসি জিজ্ঞাসিল বাপে।।
প্রমতি বলেন আমি তাহা সব জানি।
আস্তিকের উপাখ্যান অদ্ভুত কাহিনী।।
মহাভারতের কথা অমৃতের ধার।
শ্রবণের সুখ ইহা বিনা নাহি আর।।
কাশীরাম দাসের প্রণাম সাধুজনে।
পায় সে পরম প্রীতি ভারত-শ্রবণে।।