১২. শ্রীকৃষ্ণের প্রতি দুর্য্যোধনের কোপ

এতেক বলেন যদি দেব নারায়ণ।
শুনি দুর্য্যোধন হল অতি ক্রুদ্ধমন।।
বাহুযুগ পৃথিবীতে জাঁকি দিয়া ভর।
হাঁটু অরোপিয়া ভূমি বলে নৃপবর।।
কহিতে লাগিল চাহি কৃষ্ণের বদন।
বুঝিলাম নিজে মন্ত্রী তুমি ‍নারায়ণ।।
কহিলে অর্জ্জুনে তুমি উপদেশ বাণী।
ভীমে জানাইল পার্থ চক্ষুকোণ হানি।।
তোমার আদেশ মতে পাপী পাণ্ডুসুত।
অন্যায় সমরে বীর মারিল বহুত।।
কর্ণ ভূরিশ্রবা সোমদত্ত গুরু দ্রোণ।
অন্যায় সমরেতে মারিলা নারায়ণ।।
তোমার চরিত্র আমি ভালমতে জানি।
পান্ডবের পক্ষ তুমি চিন্ত মম হানি।।
ধিক্ ধিক্ তোমার জীবন অকারণ।
যেন আমি তেন তব পাণ্ডুর নন্দন।।
তুমি সে মারিলা মম সকল সমাজ।
আমারে মারিয়া তুমি সাধিলা কি কাজ।।
এত শুনি কেশব বলেন অতিশয়।
শুন দুষ্ট দুরাশয় গান্ধারী তনয়।।
আপনি মরিলে তুমি অধর্ম্মের ফলে।
দ্রৌপদী সতীরে চাহ করিবারে কোলে।।
তোর যত অধর্ম্মে মরিল রাজগণ।
ভূরিশ্রবা দ্রোণ ভীষ্ম কর্ণ মহাজন।।
করিলে অধর্ম্ম যত তাহা পড়ে মনে।
অভিমন্যু সপ্তরথী মারিলে যখনে।।
আপনি তোমার ঠাঁই গেলাম যখন।
যুধিষ্ঠির লাগি পঞ্চ গ্রামের কারণ।।
অঙ্গুলি প্রমাণ নাহি দিলে বসুমতি।
এখন বান্ধব হৈল ধর্ম্ম নরপতি।।
কৃষ্ণের বচন শুনি বলে দুর্য্যোধন।
না জানি মাধব তব বীরত্ব কেমন।।
জানিনু পুরাণ বেদশাস্ত্র ধর্ম্মাধর্ম্ম ।
জগতে না দেখি কেহ করে হেন কর্ম্ম।।
ক্ষভ্র হয়ে ক্ষন্ত্রধর্ম্ম করিনু পালন।
এবে চলিলাম সঙ্গে লয়ে রাজগণ।।
বিধবা লইয়া রাজ্য কর যুধিষ্ঠির।
স্বর্গেতে লইয়া যাই যত সব বীর।।
দুর্য্যোধন নৃপতির শুনিয়া উত্তর।
মহাকোপে বলিলেন দেব হলধর।।
অন্যায় সমর আজি করি আকর্ষন।
দুর্য্যোধন মহারাজে করিল নিধন।।
এত বলি ক্রোধে কম্পে নাহি পরিমাণ।
লাঙ্গল ধরেন হাতে সুমেরু সমান।।
দারুণ প্রহারে মারি ভীম দুরাচার।
অনিয়ম যুদ্ধ করে অগ্রেতে আমার।।
এত বলি লাঙ্গল যুড়িল হলধর।
দেখিয়া পাইল ভয় যত চরাচর।।
সশঙ্ক হইয়া কহিলেন নারায়ণ।
কোপ দূর কর প্রভু করি নিবেদন।।
একবস্ত্রা রজস্বলা দ্রৌপদী সুন্দরী।
সভামধ্যে তাহারে আনিল কেশে ধরি।।
আনিয়া বসাবে বলি নিজ ঊরুপর।
সেই দিন প্রতিজ্ঞা করিল বৃকোদর।।
হেন কর্ম্ম করে দুষ্ট গোচরে আমার।
সেই হেতু ভীম ঊরু ভাঙ্গিল উহার।।
পাতকের প্রায়শ্চিত্ত হইল উচিত।
আপনি এ সব কথা না আছ বিদিত।।
আর কিছু পূর্ব্বকথা শুন হলধর।
মৈত্রেয় নামেতে ছিল এক ঋষিবর।।
তার স্থানে অপরাধী ছিল দুর্য্যোধন।
মৈত্র ঋষি অভ্যন্তরে ছিল কোপমন।।
তেজস্বী মৈত্রেয় ঋষি দিল তারে শাপ।
ভীম তোর ঊরু ভাঙ্গি ঘুচাইবে তাপ।।
সত্য অঙ্গীকার ভীম কৈল সে কারণ।
কুরুপতি ঊরু ভাঙ্গি করিল নিধন।।
ক্ষত্র হয়ে ক্ষন্ত্রধর্ম্ম রাখে আপনার।
ইহাতে করিতে ক্রোধ না হয় তোমার।।
এতেক শুনিয়া ক্রোধ সন্বরেণ রাম।
দুর্য্যোধনে প্রশংসা করেন অবিশ্রাম।।
নিন্দা করি ভীমেরে বলেন বার বার।
ধিক্ ধিক্ ভীমসেন জীবনে তোমার।।
আপনার বীরত্ব দেখালে ভালমতে।
অন্যায় সমরে খ্যাতি রাখিলে জগতে।।
আছিলেন দুর্য্যোধন রণ পরিহরি।
তুমি তারে মারিলে অন্যায় যুদ্ধ করি।।
হেন ছার সভাতে বসিতে না যুয়ায়।
এত বলি রথে চড়ি যান যদুরায়।।
দুর্য্যোধন রণ দেখি দেবগণ তুষ্টি।
হরিষে বর্ষন করিলেন পুষ্পবৃষ্টি।।
নৃপগণে লইয়া গেলেন ধর্ম্মরাজ।
বিষণ্নবদনে যান শিবিরের মাঝ।।
যার যেই শিবিরে গেলেন সর্ব্বজন।
বেলা অবসান, অস্ত হইল ভপন।।
বিজয় পাণ্ডব কথা অমৃত সমান।
অবহেলে শুনিলে বাড়য়ে দিব্যজ্ঞান।।
যতেক আছয়ে তীর্থ পৃথিবীমন্ডলে।
তার ফল লভে মহাভারত শুনিলে।।
মহাভারতের কথা সুধাসিন্ধুবত।
কাশীরাম দাস কহে পাঁচালীর মত।।

গদা পর্ব্ব সমাপ্ত।