০৫. দধীচি তীর্থের বিবরণ

বলেন বৈশম্পয়ান শুন কুরুরায়।
দধীচি তীর্থের কথা জানাই তোমায়।।
ত্বষ্টা নামে মুনি এক বিরিঞ্চি-নন্দন।
মহাতেজোময় ছিল মহাতপোধন।।
অসুরের কন্যা এক বিবাহ করিল।
ত্রিশিরা নামেতে পুত্র তাহাতে জন্মিল।।
তিন মুন্ড হৈল তার দেখিতে সুন্দর।
একমুখে বেদপাঠ করে নিরন্তর।।
আর মুখে রামনাম করে অহর্নিশি।
অন্য মুখে মদ্যপান করে মহাঋষি।।
মুনিপুত্র যজ্ঞ করে যখন যেখানে।
লুকাইয়া যজ্ঞভাগ দেয় দৈত্যগণে।।
মাতামহকুলে তার বড়ই আদর।
দেবগণ জানিল সকল সমাচার।।
ইন্দ্রকে কহিল শুন দেবতার পতি।
দেখ ত্বষ্টামুনি পুত্র করিছে অনীতি।।
লুকাইয়া যজ্ঞভাগ দেয় মাতামহে।
এতেক বচন ইন্দ্রে দেবগণ কহে।।
শুনিয়া কুপিল ইন্দ্র অগ্নির সমান।
দেবগণে সাম্যবাক্যে কৈল সমাধান।।
খড়গ দিয়া ত্রিশারার কাটিলেন মাথা।
শুনিয়া সন্তুষ্ট হৈল সকল দেবতা।।
তৃষ্টা মুনি পাইল সকল সমাচার।
শচীপতি প্রতি রোষ করিল অপার।।
যজ্ঞ করে ত্বষ্টা মুনি ইন্দ্রে কোপ করি।
সঘনে অমরগণ কম্পে থরহরি।।
যজ্ঞে পূর্ণাহুতি দিতে জন্মিল নন্দন।
বৃত্রাসুর নাম তার অতি সুলক্ষণ।।
পরম তেজস্বী সেই বৃত্র মহাশয়।
ত্রিভুবনে কোন জনে নাহি করে ভয়।।
বিষ্ণুপরায়ণ হৈল পরম বৈষ্ণব।
তার কর্ম্ম দেখি ভয়ে কাঁপয়ে বাসব।।
মিলিল অনেক সৈন্য বৃত্রের সংহতি।
ইন্দ্রত্ব লইল খেদাড়িয়া সুরপতি।।
সকল অমরগণে লন্ডভন্ড কৈল।
স্বর্গের দেবতাগণ ভয়ে লুকাইল।।
পলাইয়া গেল সব ব্রক্ষ্মার সদন।
ব্রক্ষ্মারে কহিল গিয়া সব বিবরণ।।
বৃত্রাসুর লইল সকল অধিকার।
আপনি ইহার প্রভু কর প্রতিকার।।
প্রজাপতি বলিলেন শুন দেবগণ।
দেবের অবধ্য ত্বষ্টা মুনির নন্দন।।
নারায়ণ স্থানে সবে করহ গমন।
নিজ নিজ দুঃখ কথা কর নিবেদন।।
এত বলি দেবগণে লইয়া সংহতি।
নারায়ণ সমীপে গেলেন প্রজাপতি।।
গোলোকধামেতে যথা দেব নারায়ণ।
উপনীত হইলেন সহ দেবগণ।।
প্রণাম করিল গিয়া অমর নিকর।
বসিতে আদেশ করিলেন বিশ্বম্ভর।।
আদেশ পাইয়া সবে বসে সন্নিধানে।
কহেন চতুরানন বিনয় বচনে।।
শুন প্রভু নারায়ণ আমার বচন।
তোমার চরণে কিছু করি নিবেদন।।
মহাভারতের কথা সমান পীযূষ।
যাহার শ্রবণে হয় নর নিষ্কলুষ।।
গদাপর্ব্ব ভারতের অপূর্ব্ব কথন।
কাশীরাম দাসের পয়ার বিরচন।।