০১. শল্যের সেনাপতিত্ব

মুনি বলে শুন পরীক্ষিতের তনয়।
সমরে পড়িল যদি কর্ণ মহোদয়।।
দুই দিন যুদ্ধ করি মারি সেনাগণ।
অর্জ্জুনের হন্তে হৈল কর্ণের নিধন।।
কর্ণ যদি পড়িল আইল দুর্য্যোধন।
হাহাকার শব্দে তবে কররে রোদন।।
মহানাদে রোদন করয়ে সেনাগণ।
শল্যে চাহি বলিতে লাগিল দুর্য্যোধন।।
কি করিব কহ শল্য ইহার বিচার।
কারে সেনাপতি করি কে করিবে পার।।
সেনাপতি হয়ে আজি তুমি কর রণ।
তুমি মোরে ধরি দেহ কুন্তীর নন্দন।।
পান্ডবে করিয়া ক্ষয় তুমি লহ জয়।
ইহা শুনি কহিলেন শল্য মহাশয়।।
কোন কর্ম্ম হেতু চিন্তা কর মহাশয়।
আমি সব বিনাশিব জানিহ নিশ্চয়।।
এতেক শুনিয়া তবে রাজা দুর্য্যোধন।
শল্যরাজে দিল বহ মান আর ধন।।
বিজয়ী দুন্দুভি বাজে মৃদঙ্গ কাহাল।
ঝাঝরি মুহরি বাজে কাংস্ন্য করতাল।।
শঙ্খনাদ সিংহনাদ গজের গর্জ্জন।
ধ্বজ পতাকায়সব ঢাকিল গগণ।।
বাদ্যের নিনাদে যেন কম্পে বসুমতী।
সর্ব্ব সৈন্য সমাবেশ করিল নৃপতি।।
কর্ণের মরণে দুঃখ সব গেল দুর।
সাজিল কৌরব সেনা সমরে অসুর।।
এতেক জানিয়া তবে শ্রীকৃষ্ণ কহেন।
সাজিল কৌরব সেনা সমুদ্র যেমন।।
দেখ রাজা যুধিষ্ঠির কুরুসৈন্য এল।
সৈন্য সমাবেশ করি কুরুক্ষেত্রে গেল।।
শল্য শীঘ্র সাজিল না করহ বিলম্ব।
কুরক্ষেত্র কর গিয়া সমর আরম্ভ।।
নিধন করহ সৈন্য নাহি কালাকাল।
সাহায্য করুক আসি বিরাট পাঞ্চাল।।
ভীষ্ম দ্রোণ কর্ণ আদি বিনাশিলে রণে।
কি করিতে পারে শল্য যুঝ তার সনে।।
শক্রুবশে আত্নপর না করিহ মনে।
বিনাশ করহ শল্য আজিকার রণে।।
এত শুনি যুধিষ্ঠির আনন্দিত মন।
অর্জ্জুনের ডাক দিয়া কহিল রাজন।।
প্রভাতে উঠিয়া কালি কর যুদ্ধ ক্রম।
তবেত জানিব আমি তোমার বিক্রম।।
হেনমতে যুধিষ্ঠির বলেন বচন।
শুনিয়া অর্জ্জুন বীর কহিছে তখন।।
কি কারণে চিন্তা তুমি কর মহাশয়।
কেবল ভরসা কৃষ্ণ সংগ্রামের জয়।।
এই মত সর্ব্বজন রজনী বঞ্চিয়া।
সৈন্য সমাবেশ করে প্রভাতে উঠিয়া।।
যুধিষ্ঠির আজ্ঞা করিলেন যোদ্ধাগণে।
বাজায় বিবিধ বাদ্য না যায় লিখনে।।
দুই দলে মিশামিশি হৈল মহারোল।
প্রলয়কালেতে যেন সমুদ্র কল্লোল।।
করিল বিচিত্র ব্যূহ শল্য মহারাজ।
ভূজঙ্গম ব্যূহ কৈল পান্ডব সমাজ।।