১৪. দ্রৌপদীর সহিত পঞ্চ পাণ্ডবের মহাপ্রস্থান

রাজা বলে ভাই সব কি ভাবিছ আর।
ব্রাহ্মণে আনিয়া দেহ সকল ভাণ্ডার।।
কৃষ্ণ বিনা গৃহবাসে নাহি প্রয়োজন।
কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে যাব নিশ্চয় বচন।।
সকল সম্পদ মম সেই জগৎপতি।
তাঁহা বিনে তিলেক উচিত নহে স্থিতি।।
যথায় পাইব দেখা শ্রীনন্দননন্দনে।
কৃষ্ণ অনুসারে আমি যাইব আপনে।।
বুঝিয়া রাজার মন ভাই চারিজন।
করপুট করিয়া করেন নিবেদন।।
পাণ্ডবের গতি তুমি পাণ্ডবের পতি।
তুমি যেই পথে যাবে সেই পথে গতি।।
তোমা বিনা কে আর করিবে কোন কাজ।
কৃপায় সংহতি করি লহ ধর্ম্মরাজ।।
আজন্ম তোমার পাশে নহি বিচলিত।
আমার সবা ত্যজিবারে নহে ত উচিত।।
এত শুনি আশ্বাসেন ধর্ম্ম নরপতি।
প্রণমিয়া করপুটে কহেন পার্ষতি।।
আমি ধর্ম্মপত্মী তব ভাই পঞ্চজনে।
আমারে ছাড়িয়া সবে যাইবে কেমনে।।
তোমা সবা সঙ্গে আমি যাইব নিশ্চয়।
অনুগত জনেরে না ত্যজ কৃপাময়।।
তোমার যে গতি রাজা আমার সে গতি।
অনুগত জনে রাজা করহ সংহতি।।
শুনি আশ্বাসেন তবে ধর্ম্মের নন্দনে।
দ্রুপদনন্দিনী হৈল হরষিত মনে।।
সোনা রত্ন সবারে বিলান অপ্রমিত।
মথুরা নগরে দূত পাঠান ত্বরিত।।
ঊষা (?) অনিরুদ্ধসূত বজ্রনাম ধরে।
যদুবংশ শেষ মাত্র তিনি একেশ্বরে।।
যুধিষ্ঠির আশয় বুঝিয়া বজ্রবীর।
সত্বরে আইল যথা রাজা যুধিষ্ঠির।।
বজ্রবীরে পেয়ে পঞ্চ পাণ্ডুর কুমার।
আলিঙ্গন করি হৈল আনন্দ অপার।।
ইন্দ্রপরস্থপাটে তারে অভিষেক করি।
ছত্রদণ্ড অর্পিলেন ধর্ম্ম অধিকারী।।
তাহারে কহেন তবে ধর্ম্ম নৃপবর।
কৃষ্ণের  প্রপৌত্র তুমি বৃষ্ণিবংশধর।।
এই ইন্দ্রপ্রস্থ তুমি কর অধিকার।
হস্তিনাতে পরীক্ষিত পাবে রাজ্যভার।।
তোমার প্রপিতামহ শ্রীমধুসূদন।
করিলেন বন্ধুরূপে আমারে পালন।।
এত কহি যুধিষ্ঠির সত্বর হইয়া।
বজ্রহস্তে ইন্দ্রপস্থে দেন সমর্পিয়া।।
তবে যুধিষ্ঠির রাজা হস্তিনা ভুবনে।
পরীক্ষিত বসায়েন রাজ-সিংহাসনে।।
পঞ্চতীর্থ জল আনি করি অভিষেক।
সমর্পিয়া পাত্র মিত্র অমাত্য যতেক।।
চতুর্দ্দিকে ঘন হয় হরি হরি ধ্বনি।
হস্তিনায় পরীক্ষিত হৈল নৃপমণি।।
শুভক্ষণ করিয়া পাণ্ডব পঞ্চবীর।
পাঞ্চাল নন্দিনী সঙ্গে হইল বাহির।
শ্রীহরি শ্রীহরি বলি ডাকি উচ্চৈঃস্বরে।
বিদায় দিলেন যত বন্ধু বান্ধবেরে।
কৃপাচার্য্য গুরুপদে প্রণাম করিয়া।
ধৌম্য পুরোহিত স্থানে বিদায় হইয়া।।
চলিল পাণ্ডব সহ দ্রুপদনন্দিনী।
হৃদয়ে ভাবিয়া সে দেব চক্রপাণি।।