১৩. যুধিষ্ঠিরের বিলাপ

অর্জ্জুনের বাক্য শুনি, যুধিষ্ঠির নৃপমণি,
পড়িলেন ধরনী উপর।
ভীমসেন মাদ্রীসুত,  ভদ্রা কৃষ্ণা পরীক্ষিত,
লোটাইয়া ধূলায় ধূসর।।
চিত্রের পুত্তলি প্রায়, ভূমে গড়াগড়ি যায়,
প্রাণধন গোবিন্দ বিহনে।
হাহাকার শব্দ করি, কান্দি ধর্ম্ম অধিকারী,
পড়িলেন ভূমে অচেতনে।।
হা কৃষ্ণ করুণাসিন্ধু, পাণ্ডবগণের বন্ধু,
পার্থরূপ পক্ষীর জীবন।
বিবিধ সঙ্কটে ঘোরে, রক্ষা কৈলে বারে বারে,
কুরুক্ষেত্র আদি মহারণ।।
খাণ্ডবদাহন কালে, ইন্দ্র আদি দিকপালে,
তোমার কৃপায় হৈল জয়।
নিবাত কবচ আদি, যত দেবগণ বাদী,
একেলা বধিল ধনঞ্জয়।।
উত্তর গোগ্রহে রণে, ভীষ্ম আদি বীরগণে,
একেশ্বর জিনিল ফাল্গুনী।
দুর্য্যোধন ভয় হৈতে, রক্ষা কৈলে কুরুক্ষেত্রে,
সারথিত্ব করিলে আপনি।।
পূর্ব্বেতে পাশায় জিনি, সভামধ্যে যাজ্ঞসেনী,
ধরিয়া আনিল দুর্য্যোধন।
বিবস্ত্রা করিতে তারে, দুষ্ট দুঃশাসন ধরে,
বস্ত্র ধরি টানে ঘনে ঘন।।
পঞ্চস্বামী বিদ্যমান, কিছুতে না দেখি ত্রাণ,
ডাকিল তোমার নাম ধরি।
অনাথের নাথ তুমি, তখনি জানিনু আমি,
রক্ষা কৈলে দ্রুপদকুমারী।।
দ্বিতীয় প্রহর নিশি, আসিল দুর্ব্বাসা ঋষি,
ঘোরতর অরণ্য ভিতর।
সে সমুদ্রে পাণ্ডুসুতে, ফেলাইল কুরুনাথে,
তাহাতে রাখিলা দামোদর।।
বিরাট নগর হৈতে, দুর্য্যোধন কুরুসুতে,
হস্তিনা আইসে দূতগণে।
তোমার মুখের বাণী, না শুনিল কুরুমণি,
ঘোরতর করিল দারুণে।।
কৃপাসিন্ধু অবতার, সঙ্কটে করিলে পার,
বন্ধুরূপে পাণ্ডব নন্দনে।
পুনঃ আমি শোকান্তরে, অরণ্যে যাবার তরে,
সত্য চিন্তিলাম নিজ মনে।।
প্রবোধিয়া বিধিমতে, আমারে রাখিলে তাতে,
বুঝাইয়া অশেষ প্রকার।
হায় দুঃখ বিমোচন, পাণ্ডবের প্রাণধণ,
তোমা বিনা কে আছে আমার।।
যুধিষ্ঠির নৃপবর, ধনঞ্জয় বৃকোদর,
সহ দুই মাদ্রীর নন্দন।
শোকসিন্ধু মধ্যে পড়ি, ধরণীতে গড়াগড়ি,
কৃষ্ণ কৃষ্ণ ডাকে ঘনে ঘন।।
ভারত অমৃত কথা, ব্যাসের রচিত গাথা,
সর্ব্ব দুঃখ শ্রবণে বিনাশ।
কমলাকান্তের সুত, সুজনের মনপ্রীত
বিরচিল কাশীরাম দাস।।