যুধিষ্ঠির

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

যুধিষ্ঠির

যুধিষ্ঠির

পাণ্ডু ও কুন্তি-র জ্যেষ্ঠ পুত্র। ওঁর এক ভার্যা দ্রুপদ-রাজের কন্যা কৃষ্ণা বা দ্রৌপদী (যিনি পঞ্চপাণ্ডবের সবারই ভার্যা ছিলেন),অপর ভার্যা হলেন গোবাসন শৈব্যের দুহিতা দেবিকা। যুধিষ্ঠিরের দুই পুত্র – প্রতিবিন্ধ্য (দ্রৌপদীর গর্ভজাত) ও যৌধেয় (দেবিকার গর্ভজাত)। কিন্দম মুনির অভিশাপ ছিল যে,মৈথুনকালে পাণ্ডুর মৃত্যু হবে – সেইজন্য পাণ্ডু স্ত্রীদের মিলিত হতেন না। পুত্র কামনায় তিনি বার বার কুন্তিকে অনুরোধ করেন ক্ষেত্রজ পুত্রের জন্য। দুর্বাসা মুনির বরে কুন্তি যে-কোনও দেবতাকে আহবান করে তাঁর সন্তান গর্ভে ধারণ করতে পারতেন। সেই বরের বিষয়ে পাণ্ডুকে জানাতে তিনি ধর্মকে আহবান করতে অনুরোধ করলেন। ধর্মের সেই পুত্রই হলেন যুধিষ্ঠির। তিনি ছিলেন পরম ধার্মিক ও সত্যবাদী। দ্রোণের কাছে অস্ত্রশিক্ষা করলেও যুধিষ্ঠিরের যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি ছিল না। দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভায় অর্জুন ও ভীম যখন অন্য রাজাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন তখন যুধিষ্ঠির নকুল ও সহদেবকে নিয়ে প্রস্থান করলেন। তবে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে শল্যকে উনি পরাজিত করেছিলেন। যুধিষ্ঠির দ্যূতক্রীড়ায় আসক্ত ছিলেন,কিন্তু ক্রীড়ায় অভিজ্ঞ ছিলেন না। যুধিষ্ঠির যখন ইন্দ্রপ্রস্থে রাজসূয় যজ্ঞ সমাপ্ত করে পরম সুখে রাজত্ব করছেন,তখন দুর্যোধন তাঁর মাতুল শকুনির পরামর্শে যুধিষ্ঠিরকে দ্যূতক্রীড়ায় আহবান করলেন। এটে যে ওঁর সর্বস্বান্ত হবার সম্ভাবনা সেটা বুঝেও যুধিষ্ঠির সেই আহবানে সাড়া দিলেন। পণে রেখে একে একে সর্বস্বতো খোয়ালেনই – শেষে পণ রেখে পরাজিত হয়ে দ্রৌপদী সহ পঞ্চপাণ্ডব দুযোধনের দাস হলেন। এ ব্যাপারে ওঁর সারল্য ও অসংযমতা বাস্তবিকই দৃষ্টিকটু। শুধু একবার নয়,আবার যখন দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে দ্যূতক্রীড়ায় আহবান করলেন,তিনি আবার তাতে সন্মত হলেন। এবার তারজন্য পাণ্ডবদের বনবাস ও অজ্ঞাতবাসে যেতে হল!

যুধিষ্ঠির ছিলেন ক্ষমাশীল। এই দুর্যোধনই যখন গন্ধর্বরাজের হাতে বন্দি হয়েছেন, তখন দুর্যোধনকে মুক্ত করার জন্য ভ্রাতাদের আহবান করেছেন। দ্রৌপদীকে হরণ করার চেষ্টা করেছিলেন বলে ভীম যখন জয়দ্রথকে প্রহার করে যুধিষ্ঠিরের দাসত্ব স্বীকার করিয়েছেন, তখন যুধিষ্ঠিত তাঁকে ক্ষমা করে মুক্তি দিয়েছেন। পরম দুঃখ ও শোকের মধ্যেও যুধিষ্ঠির বিচলিত হতেন না। চার ভ্রাতা মৃত জেনেও বক-রূপী ধর্মর প্রশ্ন চিন্তাশীল উত্তর তিনি শান্তভাবে দিয়েছেন। গুরুজনদের প্রতি তাঁর ব্যবহার ছিল সব সময়ে সশ্রদ্ধ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের আগে তিনি ভীষ্ম, দ্রোণ, ইত্যাদি গুরুস্থানীয়দের কাছে গিয়ে তিনি আশীর্বাদ চেয়েছে – তাঁরা বিপক্ষ দলে যোগ দেওয়া সত্বেও। যুধিষ্ঠির মিথ্যে বলতেন না, কিন্তু কৃষ্ণ ও ভীমের অনুরোধে যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রোণকে বলেছিলেন যে, অশ্বত্থমার মৃত্যু হয়েছে। যদিও পরে যোগ করেছিলেন যে, তিনি হস্তি অশ্বত্থমার কথা বলছেন। কিন্তু যুধিষ্ঠির যে ওঁর সঙ্গে এরকমভাবে চতুরি করবেন সেটা দ্রোণের পক্ষে চিন্তা করাও অসম্ভব ছিল। তাই তিনি অস্ত্রত্যাগ করলেন আর সেই সুযোগে ধৃষ্টদ্যুম্ন পিতৃ-অপমানের পরিশোধ নিতে দ্রোণের শিরশ্ছেদ করলেন। মিথ্যা না বলেও যুধিষ্ঠিরের চরিত্র এর জন্য কলঙ্কিত হয়েছে। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠির হস্তিনাপুরীতে সিংহাসনে বসলেন। রাজত্বের পঁযত্রিশ বছর পূর্ণ হলে, অভিমন্যু-পুত্র পরীক্ষিতকে রাজ্যভার দিয়ে তিনি ভ্রাতাদের ও দ্রৌপদীকে নিয়ে মহাপ্রস্থানের পথে যাত্রা করলেন। একটি কুকুর তাঁদের সঙ্গ নিল। যেতে যেতে দ্রৌপদী সহদেব নকুল অর্জুন ও ভীম – সবাই একে একে নিপাতিত হলেন। শেষে দেবরাজ ইন্দ্র রথ নিয়ে এলেন যুধিষ্ঠিরকে স্বর্গে নিয়ে যাবার জন্য। যুধিষ্ঠির বললেন যে,দ্রৌপদী ও ভ্রাতাদের না নিয়ে তিনি স্বর্গে যাবেন না। ইন্দ্র তাঁকে আস্বস্ত করলেন যে,স্বর্গে তাঁরা থাকবেন। যুধিষ্ঠির তখন কুকুরটিকে নিয়ে রথে উঠতে চাইলেন। ইন্দ্র তাতে আপত্তি জানালে,যুধিষ্ঠির বললেন যে, ভক্ত কুকুরটিকে ছেড়ে তিনি যাবেন না। তখন কুকুর-রূপী ধর্ম তাঁর স্বরূপ ধারণ করে যুধিষ্ঠিরকে আশীর্বাদ করলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *