ব্যাসদেব

পরাশর মুনির পুত্র, মহর্ষি শক্তৃর পৌত্র ও বশিষ্ঠ মুনির প্রপৌত্র। এক মৎস্যজীবির পালিতা-কন্যা সত্যবতীকে দেখে মুগ্ধ হয়ে পরাশর মুনি তাঁর সঙ্গে মিলিত হন। পরাশরের আশীর্বাদে সত্যবতীর কুমারিত্ব নষ্ট হয় না এবং মিলনের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাসদেবের ভুমিষ্ট হন। যমুনা দ্বীপে জন্ম হয়েছিল বলে ব্যাসদেবের অপর নাম কৃষ্ণ-দ্বৈপায়ন। তুমি স্মরণ করলেই আমি আসবো – এই বলে জন্মের পরই ব্যাসদেব মাতার অনুমতি নিয়ে তপস্যা করতে চলে যান। ব্যাসদেব ছিলেন মহাজ্ঞানী সিদ্ধপুরুষ। ওঁর আপন পুত্র শুকদেবও ছিলেন জন্মসিদ্ধ মহাপুরুষ। ওঁর জননী সত্যবতী পরে কুরুকুলজাত রাজা শান্তনুকে বিবাহ করেন। কুরুকুল রক্ষা করতে সত্যবতীর অনুরোধে ব্যাসদেব সত্যবতী ও শান্তনুর মৃত পুত্র বিচিত্রবীর্যের দুই স্ত্রী অম্বিকা ও অম্বালিকার সঙ্গে মিলিত হন। ব্যাসদেব সুপুরুষ ছিলেন না। তাই মিলনকালে ওঁর রূপ, গন্ধ ও বেশ সহ্য না করতে পেরে অম্বিকা চক্ষু বুঝলেন – অম্বালিকা হলেন ভয়ে পাণ্ডুর। ফলে অম্বিকা-পুত্র ধৃতরাষ্ট্র ভুমিষ্ঠ হলেন জন্মান্ধ হয়ে,আর অম্বালিকার পাণ্ডু বর্ণের পুত্র হল। কোনও পুত্রই স্বাভাবিক হল না দেখে, সত্যবতী আরেকবার অম্বিকাকে ব্যাসদেবের সঙ্গে মিলিত হতে বললেন। কিন্তু বিতৃষ্ণাবশত অম্বিকা নিজে না গিয়ে এক দাসীকে পাঠিয়ে দেন। ফলে সেই দাসীর গর্ভে ধার্মিক বিদুরের জন্ম হয়। কুরুবংশের সাতপুরুষের (শান্তনু থেকে জনমেজয় পর্যন্ত) নানান ঘটানাবলীর মধ্যে ব্যাসদেবকে দেখা যয়। মাঝে-মাঝেই তিনি আবির্ভূত হয়ে পাণ্ডব ও কৌরবদের হিতোপদেশ সান্ত্বনা ইত্যাদি দিয়ে সঙ্কটমোচন করেছেন। মহাভারতের শ্লোকগুলি ব্যাসদেবের রচনা। ব্যাসদেব গণেশকে লেখনী ধরতে বলেছিলেন। গণেশ লিখতে রাজি হয়েছিলেন এই শর্তে যে, একবার উনি কলম হাতে তুললে ব্যাসদেব থামতে পারবেন না। ব্যাসদেব তাতে রাজি হয়েছিলেন এই বলে যে, গণেশ না বুঝে কোনও শ্লোক লিখতে পারবেন না। সেইজন্য মহাভারতের অনেক শ্লোকই তিনি ইচ্ছে করে দুর্বোদ্ধ করে লিখেছিলেন যাতে গণেশ যখন ভাবছেন – সেই সুযোগে তিনি আরও কিছু শ্লোক বানিয়ে ফেলতে পারেন। পাণ্ডবদের প্রপৌত্র জনমেজয়ের অনুরোধে ব্যাসদেব তাঁর শিষ্য বৈশম্পায়নকে আজ্ঞা দিয়েছিলেন সবাইকে মহাভারত শোনাবার জন্য ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *