পরীক্ষিত (১)

অভিমন্যু ও উত্তরার পুত্র। পরীক্ষিৎ-এর ভার্যা ছিলেন মদ্ররাজ-দুহিতা মাদ্রবতী। তাঁর চার পুত্রের নাম জনমেজয়, শ্রুতসেন, উগ্রসেন ও ভীমসেন। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের শেষে দ্রোণের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তাঁর পুত্র অশ্বত্থমা পৃথিবীকে পাণ্ডবশূন্য করবেন বলে ব্রহ্মশির নামক এক দিব্যাস্ত্র প্রয়োগ করেন। অর্জুন সেই অস্ত্র নিবারণ করার জন্য নিজেও ব্রহ্মশির নিক্ষেপ করেন। দুই মহা অস্ত্রে প্রলয় উপস্থিত হলে, ব্যসদেব ও দেবর্ষি নারদ দুজনকেই অস্ত্র প্রত্যাহার করতে বলেন। অর্জুন তাতে সক্ষম হন, কিন্তু অশ্বত্থমা তাতে পুরোপুরি সক্ষম হলেন না। ফলে তাঁকে ইষিকা রূপে সেই অস্ত্র পাণ্ডবনারীদের গর্ভে নিক্ষেপ করতে হল। কৃষ্ণ সবাইকে অভয় দিয়ে বললেন যে, অস্ত্রাগ্নিতে উত্তরার গর্ভস্থ পুত্র দগ্ধ হলেও ,প্রসবের পর সেই মৃত পুত্রকে তিনি বাঁচিয়ে তুলবেন এবং সেই পুত্র দীর্ঘায়ু পাবে। কুরুকুল যখন ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে (পরিক্ষীণ) তখন উত্তরা-পুত্রের জন্ম হয়েছিল বলে তাঁর নামকরণ হল পরীক্ষিৎ। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পর যুধিষ্ঠির হস্তিনায় রাজসিংহাসনে বসেন। যুধিষ্ঠির মহাপ্রস্থানে যাবার আগে ছত্রিশ বছর বয়ষ্ক পরীক্ষিৎকে কুরু রাজ্যের অধিপতি করেন। চব্বিশ বৎসর দক্ষতার সঙ্গে রাজত্ব চালনা করার পর বৃদ্ধ বয়সে পরীক্ষিৎ মৃগয়ায় গিয়ে একটি মৃগকে শরবিদ্ধ করেন। কিন্তু মৃগটি শরাহত হয়েও পলায়নে সমর্থ হয়। তাকে খুঁজতে খুঁজতে পরীক্ষিত্ একজন মৌনব্রতধারী মুনীর (শমীক মুনি) সামনে আসেন। ওঁর কাছ থেকে কোনও প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে পরীক্ষিৎ বিরক্ত হয়ে ওঁর স্কন্ধে একটি মৃত সর্প ঝুলিয়ে দিয়ে প্রাসাদে ফিরে যান। শমীক মুনির তেজস্বী পুত্র শৃঙ্গী ঘটনাটি পরে জানতে পেরে পরীক্ষিৎকে শাপ দেন যে, সাত দিনের মধ্যে নাগরাজ তক্ষকের দংশনে তাঁর মৃত্যু ঘটবে। সাত দিনের দিন তক্ষক ব্রাহ্মণের ছদ্মবেশে প্রাসাদে ঢুকে বিষাক্ত কামড় দিয়ে পরীক্ষিত্কে হত্যা করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *