ধৃষ্টদ্যুম্ন

পাঞ্চালদেশের রাজা দ্রুপদের (যজ্ঞসেন) পুত্র। বাল্যবন্ধু দ্রোণের কাছে অপমানিত হয়ে দ্রোণ-বধের নিমিত্তে দ্রুপদ পুত্রার্থে যে যজ্ঞ করেন, সেই যজ্ঞাগ্নি থেকে ধৃষ্টদ্যুম্ন কিরীট, বর্ম, খড়গ ও ধনুর্বাণ নিয়ে রথারোহিত অবস্থায় উদ্ভূত হন। ওঁর পরেই যজ্ঞবেদী থেকে ওঁর ভগিনী কৃষ্ণা (দ্রৌপদী, যিনি পরে পঞ্চপাণ্ডবের ভার্যা হন) আবির্ভূতা হন। ধৃষ্টদ্যুম্ন যখন যজ্ঞাগ্নি থেকে আবির্ভূত হচ্ছেন তখন দৈববাণী হয়েছিল যে, এই রাজপুত্র দ্রোণকে বধ করে রাজার শোক দূর করবেন। দৈব অনিবার্য এই বিশ্বাসে দ্রোণ নিজের হাতে স্বগৃহে ধৃষ্টদ্যুম্নকে অস্ত্রশিক্ষা দেন। দ্রুপদ পুত্রদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। ভীষ্মও পাণ্ডব-কৌরবদের শক্তি গণনা কালে ধৃষ্টদ্যুম্নকে অতিরথের (শ্রেষ্ঠ স্তরের যোদ্ধা) সন্মান দিয়েছেন। ধৃষ্টদ্যুম্ন বিবাহিত ছিলেন, কিন্তু তাঁর পুত্রাদি বিষয়ে বিশেষ কোনও তথ্য জানা যায় না। কৃষ্ণার স্বয়ংবর সভায় ধৃষ্টদ্যুম্নের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি কৃষ্ণাকে এক এক করে সভাস্থ রাজণ্যবৃন্দের পরিচয় দিয়েছেন। ব্রাহ্মণবেশী অর্জুন লক্ষ্যভেদ করে কৃষ্ণাকে নিয়ে স্বয়ংবর সভা ত্যাগ করার পর গোপনে তাঁর পদানুসরণ করে অর্জুন ও তাঁর ভ্রাতাদের যথার্থ পরিচয় জেনে এসেছেন। ভগিনীপতি পাণ্ডবদের প্রতি ওঁর সৌহার্দ ছিল। যুধিষ্ঠির কৃষ্ণার্জুনের উপদেশ নিয়ে ওঁকেই যুদ্ধে সর্বাধিনায়কত্ব দিয়েছিলেন। সেই দায়িত্ব তিনি দক্ষতার সঙ্গে পালন করেন। যুদ্ধের পঞ্চদশ দিনে অশ্বত্থমার মৃত্যু হয়েছে মনে করে দ্রোণ ধনুর্বাণ পরিত্যাগ করে যোগবলে ব্রহ্মলোকে যাত্রা করলেন। কৃষ্ণ, অর্জুন, কৃপ, যুধিষ্ঠির ও সঞ্জয় তা বুঝতে পারলেও, আর কেউ পারলো না। ধৃষ্টদ্যুম্ন নিরস্ত্র দ্রোণের দিকে ধাবিত হয়ে প্রাণহীন দ্রোণের কেশ ধরে তাঁর শিরশ্ছেদ করেন। দ্রোণপুত্র অশ্বত্থমা সেই কথা শুনে শপথ করলেন যে-কোনও উপায়ই হোক, ধৃষ্টদ্যুম্নকে তিনি হত্যা করবেন। যুদ্ধের শেষদিনে গভীর রাত্রে অশ্বত্থমা পাণ্ডবশিবিরে ঢুকে সুপ্ত ধৃষ্টদ্যুম্নকে নৃশংস ভাবে তাঁর প্রাণ সংহার করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *