দীর্ঘতমা

মহর্ষি উতথ্য ও তাঁর পত্নী মমতার পুত্র। দীর্ঘতমা যখন মমতার গর্ভে ছিলেন তখন উতথ্যের ভ্রাতা বৃহস্পতি বল প্রয়োগ করে মমতার সঙ্গে মিলিত হবার চেষ্টা করেন। গর্ভস্থ দীর্ঘতমা পা দিয়ে পিতৃব্যের এই অপচেষ্টা ব্যর্থ করায় বৃহস্পতি শাপ দেন যে, দীর্ঘতমা অন্ধ হয়ে জন্মাবেন। ধার্মিক ও বেদজ্ঞ হলেও দীর্ঘতমা ছিলেন অত্যন্ত কাম-পরায়ণ। তিনি যখন গোধর্ম গ্রহণ করলেন, তখন প্রতিবেশী মুনিরা ওঁকে ত্যাগ করেন। দীর্ঘতমার পত্নী ছিলেন পরম রূপলাবন্যবতী প্রদ্বেষী। ওঁর পুত্রের নাম গৌতম। দীর্ঘতমার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রদ্বেষী পুত্রকে আদেশ দেন দীর্ঘতমাকে গঙ্গাবক্ষে একটি ভেলায় বসিয়ে ছেড়ে দিতে।
স্ত্রী ওঁকে পরিত্যাগ করেছিলেন বলে দীর্ঘতমা স্ত্রীজাতিদের অভিশাপ দেন যে, তাঁদের যাবজ্জীবন একই পতির অধীন হয়ে থাকতে হবে। কোনও নারী যদি অন্যপুরুষের ভজনা করেন (এমন কি তা পতির মৃত্যুর পরে হলেও) তাহলে তাঁকে পতিত হতে হবে। পতিবিহীনা নারীদের সম্পদ থাকলেও – তাঁরা তা ভোগ করতে পারবেন না। করলে অকীর্তি হবে।
বলি রাজা দীর্ঘতমাকে উদ্ধার করে মহিষী সুদেষ্ণার গর্ভে সন্তান উৎপাদনের জন্য ওঁকে নিয়োগ করলেন। কিন্তু সুদেষ্ণা নিজে এই বৃদ্ধ অন্ধ ঋষির কাছে না গিয়ে নিজের এক ধাত্রীকন্যাকে পাঠালেন। সেই ধাত্রীকন্যার গর্ভে কাক্ষীবান প্রভৃতি এগারোজন ঋষির জন্ম হয়। তারপর রাজার বিশেষ অনুরোধে সুদেষ্ণা নিজে ওঁর কাছে যান। দীর্ঘতমার বরে সুদেষ্ণার অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ, পুণ্ড্র ও সুহ্ম নামে পাঁচ পুত্র জন্মান। তাঁদের নামেই তাঁদের দেশের নামকরণ হয়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *