চ্যবন

ভৃগুর প্রিয় পুত্র। রাক্ষস পুলোমা যখন ভৃগুর স্ত্রী পুলোমাকে হরণ করছেন, তখন দুরাত্মা রাক্ষসের এই অন্যায় কাজ দেখে চ্যবন মাতৃ-গর্ভ দেখে বেরিয়ে আসেন। চ্যবনের তেজে রাক্ষস পুলোমার দেহ ভäম হয়ে যায়। চ্যবনের পুত্র (পত্নী আরুষীর গর্ভজাত) ঔর্বনাম হলেন ক্ষত্রিয় সংহারক পরশুরামের পিতামহ। মহর্ষি চ্যবন জানতেন যে, কুশিক বংশ থেকে তাঁর বংশে ক্ষত্রাচার সংক্রামিত হবে। তাই তিনি কুশিক বংশ দগ্ধ করার জন্য কুশিকের আতিথ্য নিলেন। চ্যবন ভেবেছিলেন যে,আতিথ্যে কোনও ত্রুটি দেখলেই তিনি অভিশাপ দিতে পারবেন। কিন্তু চ্যবনের সব রকমের অদ্ভুত ইচ্ছা কুশিক ও তাঁর মহিষী পূরণ করলেন – ওঁদের অনলস সেবায়ে চ্যবন কোনও রন্ধ্র খুঁজে পেলেন না। তখন তিনি প্রীত হয়ে কুশিককে জানালেন যে, কেন তিনি কুশিকের আতিথ্য নিয়েছিলেন। তারপর ভবিষ্যৎবানী করলেন যে, কুশিকের পৌত্রী (গাধির কন্যা) ভৃগুবংশজাত জমদগ্নিকে বিবাহ করে পরশুরাম বলে যে মহাতেজা পুত্রের জন্ম দেবেন, তিনিই ক্ষত্রিয়কুল ধবংস করবেন।

নর্মদা নদীর নিকট বৈদুর্ষ পর্বতে চ্যবন দীর্ঘকাল ধরে তপস্যা করেছিলেন। এই সময়ে ওঁর চক্ষুদুটি ছাড়া সর্ব দেহ বল্মীক, পিপীলিকা ও লতায় আবৃত হয়ে যায়। রাজা শর্যাতি তাঁর রূপবতী কন্যা সুকন্যা ও পত্নীদের নিয়ে যখন ভ্রমণ করতে সেখানে আসেন,তখন সুকন্যা একটি বল্মীকস্তূপের মধ্যে চ্যবনের জ্বলন্ত চক্ষুদুটি দেখে কৌতুহলী হয়ে কাঁটা দিয়ে বিদ্ধ করলেন। চ্যবন তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে যোগবলে রাজা শর্যাতির সৈন্যদের মলমুত্র রোধ করে দিলেন। শর্যাতি তার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানলেন যে,সুকন্যা বল্মীকস্তূপে অত্যুজ্জ্বল কোনও বস্তু বিদ্ধ করেছিলেন। শর্যাতি সঙ্গে সঙ্গে বল্মীকস্তুপের সন্মুখে কৃতাঞ্জলি হয়ে চ্যবনকে প্রসন্ন করার চেষ্টা করলেন। চ্যবন বললেন যে,যদি শর্যাতি সুকন্যাকে দান করেন, তাহলেই তিনি ক্রোধ সম্বরণ করবেন। শর্যাতি বাধ্য হয়ে সুকন্যাকে চ্যবনের হাতে সম্প্রদান করলেন।
এর কিছুকাল পরে একদিন অশ্বিনীকুমারদ্বয় স্নানরতা সুকন্যাকে নগ্নাবস্থায় দেখে তাঁকে বৃদ্ধ চ্যবনকে পরিত্যাগ করে ওঁদের একজনকে বরণ করতে বললেন। সুকন্যা ওঁদের প্রত্যাখ্যান করে বললেন যে, তিনি চ্যবনের প্রতি অনুরক্ত। তখন অশ্বিনীকুমারদ্বয় প্রস্তাব করলেন যে, ওঁরা চ্যবনকে এক রূপবান যুবক করে দেবেন, কিন্তু সুকন্যাকে রাজি হতে হবে যে, যুবক চ্যবন ও অশ্বিনীকুমারদের মধ্যে একজনকে পতিত্বে বরণ করতে। সুকন্যা সে কথা আশ্রমে এসে চ্যবন জানাতে তিনি তাতে সন্মতি দিলেন। তখন অশ্বিনীকুমারদ্বয় চ্যবনকে নিয়ে জলে প্রবেশ করে যখন সেখান থেকে আবার উঠলেন তখন তিন জনের রূপের মধ্যে কোনও আপাতপার্থক্য রইলো না। কিন্তু সুকন্যা চ্যবনকে চিনতে পেরে – তাঁকেই বরণ করলেন। যৌবন ও স্ত্রীকে পেয়ে চ্যবন প্রীত হয়ে অশ্বিনীকুমারদের বর দিলেন যে, দেবগণের চিকিৎসক হলেও এখন থেকে ওঁদেরও অন্য দেবতাদের মত সোমপানের অধিকার থাকবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *