অনন্তনাগ

অনন্তনাগ শেষনাগ হিসাবে অভিহিত হয়ে থাকেন। এঁর ফণার সংখ্যা মোট ছয়টি এবং তা পদ্মফুলের মতো বিস্তৃত। পুরাণ মতে― নাগদের মধ্যে ইনিই সর্বশ্রেষ্ঠ। ইনি পৃথিবীকে ধারণ করে আছেন। ইনি যখন দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তখন সমস্ত পৃথিবী কম্পিত হয়।

কশ্যপ মুনির ঔরসে কদ্রুর গর্ভে ইনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁর স্ত্রীর নাম ছিল তুষ্টি।

অমৃতলাভের জন্য, সুমেরু শৃঙ্গে বসে দেবতারা সমুদ্রমন্থনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই মন্থনে তাঁরা মন্দরপর্বতকে মন্থনদণ্ড হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু সকল দেবতা মিলিত হয়ে এই পর্বত উত্তোলন করতে ব্যর্থ হন। পরে এঁরা বিষ্ণু এবং ব্রহ্মাকে তাঁদের ব্যর্থতার কথা জানান। উভয় দেবতা এই পর্বত উত্তোলনের অনন্তনাগের শরণাপন্ন হতে বলেন। এরপর দেবতাদের অনুরোধে অনন্তনাগ এই পর্বত উত্তোলন করেন। পরে তিনি এই পর্বত নিয়ে সমুদ্রকুলে উপস্থিত হন। দেবতারা কূর্মরাজকে (কচ্ছপরাজ) মন্দরপর্বতকে পিঠে ধারণ করতে বলেন। এই আদেশ অনুসারে কূর্মরাজ সমুদ্রের ভিতরে মন্দরপর্বতকে পিঠে ধারণ করেন। এই মন্থনে অনন্তনাগ রজ্জু হিসেবে মন্দরপর্বতকে বেষ্টন করেন।

সমুদ্রমন্থনের এই পর্যায়ে অমৃত লাভের আশায় দানবরা অংশগ্রহণ করেন। পরে দানবরা অনন্তনাগের মুখের দিক ধরে এবং দেবতার এর লেজ ধরে মন্থন শুরু করেন। এই সময় অনন্তনাগের মুখ থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো নিঃশ্বাস বায়ু বের হয় এবং বাস্পরাশিতে আকাশ আচ্ছন্ন করে। পরে এই বাস্পরাশি থেকে মেঘমালা সৃষ্টি হয় এবং এক সময় প্রবল বৃষ্টিতে দানব ও দেবতাদের শ্রান্তি দূরীকরণ করে।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। সপ্তদশ-অষ্টাদশ অধ্যায়]

উচ্চৈঃশ্রবা নামক অশ্বের লেজের বর্ণ নিয়ে কদ্রুর সাথে বিনতার তর্ক হলে, কদ্রু অশ্বের লেজ কালো বলেন। কদ্রু তাঁর কথা সত্য প্রমাণিত করার জন্য, তাঁর সর্পপুত্রদের উচ্চৈঃশ্রবার লেজে অবস্থান করতে বলেন। অনন্ত মায়ের এই আদেশকে অগ্রাহ্য করে অভিশপ্ত হন যে, তিনি জনমেজয়ের সর্প-যজ্ঞে দগ্ধ হয়ে মারা যাবেন। এই সময় তিনি তাঁর মাকে ত্যাগ করে গন্ধমাদন, বদরিকাশ্রম, গোকর্ণ, পুষ্কর, হিমবান প্রভৃতি পূণ্যতীর্থ ভ্রমণ করেন এবং এসকল তীর্থস্থানে কঠোর তপস্যা করেন। এই সময় তিনি বায়ুভক্ষণ, ব্রতপরায়ণ, জিতেন্দ্রিয় অবস্থায় তপস্যা করেন। ফলে তাঁর গায়ের মাংস, চর্ম এবং শিরাসমূহ শুকিয়ে যায়। ব্রহ্মা তাঁর এই কঠোর তপস্যার কারণ জানতে চাইলে, তিনি বলেন যে, পরলোকেও তাঁর সাথে এই দুর্জন ভাইরা যেন না থাকে এবং তপস্যার দ্বারা প্রাণ ত্যাগ করতে চান। ব্রহ্মা তাঁকে পাতালে গিয়ে পৃথিবীকে নিশ্চলভাবে ধারণ করতে বলেন। সেই আদেশ অনুসারে তিনি পাতালে গিয়ে পৃথিবী ধারণ করেন। এই সময় তিনি পাতালের নাগদের রাজা হিসাবে মনোনীত হন। ব্রহ্মা নাগদের শত্রু গরুড়ের সাথে বন্ধুত্ব ঘটিয়ে দেন।

মায়ের অভিশাপ থেকে তাঁর অন্যান্য ভাইদের রক্ষা করার জন্য তিনি উপায় অন্বেষণ করতে থাকেন। এই সময় এলাপত্র নামক এক নাগ অনন্তকে বলেন যে, অভিশাপদানকালে তিনি মায়ের কোল থেকে শুনেছিলেন— জরৎকারুর সন্তান আস্তীক মুনি সাপদের রক্ষা করবেন। এরপর অনন্ত জরৎকারু মুনিকে খুঁজে বের করেন এবং তাঁর সঙ্গে তাঁর নিজের বোনের বিবাহ দেন। উল্লেখ্য অনন্তের এই বোনের নামও ছিল জরৎকারু।
[সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ষটত্রিংশ-অষ্টাত্রিংশ অধ্যায়]

[সূত্র : অনুশীলন ডট অর্গ]

1 Comment
Collapse Comments

Please correct. Vasuki and sheshnag are not same. They are two brother among 1000 sons of Devi Kadru, Like Takshak, Kaliya etc etc. . sheshnag is devotee of Lord Vishnu & Vasuki stay with Lord shiva.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *