০২১.সমুদ্রবর্ণন

একবিংশ অধ্যায়
সমুদ্রবর্ণন

উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, কদ্রু ও বিনতা এইরূপে পরস্পর দাস্যবৃত্তি পণ করিয়া এবং তজ্জন্য সাতিশয় অমর্ষাবিষ্ট ও রোষপরবশ হইয়া সেই রাত্রি অতিবাহিত করিলেন। পরদিবস প্রভাতে সূর্য্যোদয় হইবামাত্র তাঁহারা দুইজনে অনতিদূরবর্ত্তী উচ্চৈঃশ্রবাঃ তুরঙ্গমকে দেখিবার মানসে কিয়দ্দুর গমন করিয়া অপ্রমেয়, অচিন্তনীয়, অগাধ, সর্ব্বভূতভয়াবহ, পরমপবিত্র অম্ভোনিধি অবলোকন করিলেন। যে জলধি তিমি [সমুদ্রের সুবৃহৎ মৎস্য], তিমিঙ্গিল [তিমিকে যে গিলিয়া থাকে– তিমি অপেক্ষাও বড় মাছ], মৎস্য, কচ্ছপ, মকর, নক্র-চক্র [দলবদ্ধ কুম্ভীর] প্রভৃতি সহস্র সহস্র ভয়ঙ্কর, বিকৃতাকার জলচরগণে এবং ভীষণাকার সর্পগণে নিরন্তর সমাকীর্ণ; চন্দ্র, লক্ষ্মী, উচ্চৈঃশ্রবাঃ অশ্ব, পাঞ্চজন্য শঙ্খ, অমৃত, বাড়বানল ও সর্ব্বপ্রকার রত্ন যাহা হইতে উৎপন্ন; পর্ব্বতাধিরাজ মৈনাক ও জলাধিরাজ বরুণদেব যাহাতে সতত বাস করেন, যে সমুদ্র দানবগণের পরম মিত্র ও স্থলচর জন্তুগণের সাতিশয় ভয়াবহ শত্রু; যাহাতে ভয়ঙ্কর জলজন্তুসকল সর্ব্বদা ঘোরতর শব্দ করিতেছে এবং বায়ুবেগে অনবরত পর্ব্বতাকার তরঙ্গমালা সমুত্থিত হইতেছে, দেখিলে বোধ হয় যেন, সমুদ্র তরঙ্গরূপ হস্ত উত্তোলনপূর্ব্বক নিরন্তর নৃত্য করিতেছে; চন্দ্রের হ্রাস-বৃদ্ধি অনুসারে যাহার হ্রাস বৃদ্ধি হইয়া থাকে; অমিততেজাঃ ভগবান্ নারায়ণ বরাহরূপ ধারণপূর্ব্বক মধ্যে প্রবেশ করিয়া যাহার জল বিক্ষোভিত ও আবিল করিয়াছিলেন এবং যাহাতে যোগনিদ্রা অনুভব করিয়াছিলেন; ব্রত পরায়ণ ব্রহ্মর্ষি অত্রি শতবৎসরেও যাহার তলস্পর্শ করিতে পারেন নাই; অসুরগণ অরাজক যুদ্ধে পরাভূত হইয়া যাহার মধ্যে বাস করে; যে সমুদ্র স্বীয় গর্ভস্থ বাড়বানলকে সর্ব্বদা তোয়রূপ হবিঃ প্রদান করিতেছে, সহস্র সহস্র মহানদী পরস্পর স্পর্দ্ধা করিয়া যেন অভিসারিকার ন্যায় যাহাতে সতত সমাবেশ করিতেছে।