বলার কিছু নেই

কিছুই তো বলব না, আমার বলার কিছু নেই।
তাছাড়া যা বলব তাতে অক্ষর মিলিয়ে এতেবার করতেই
হবে, এই দাবি কী করেইবা করি? শোনো হে বরং
ধরে নাও আমার এ আচরণ নিছক ভড়ং
ছাড়া কিছু নয়। আমি তো নীরবই থাকি
আকসার, জীবনের পায়ে গড়াগড়ি দিই আর অন্ধকারে ঢাকি
মুখ; আপাতত শিকস্তী জমির মতো পড়ে আছি,
নানান সত্তার কী জটিল রোদ্দুরে ছায়ায় বাঁচি।

কী-যে হয়, মাঝে-মধ্যে জিভের ডগাটা কোন ছলে
বেয়াড়া চঞ্চল হয়ে ওঠে বলে মুখের অঞ্চলে
বিস্ফোরণ ঘটে যায়। যদি বলি, এ পান্থশালায়
বেশুমার বুভুক্ষু থালায়
অহর্নিশ মৃত্যু-বাঘ ওৎ পেতে আছে,
দোলনার কাছে
মৃত্যু, যেন অশরীরি দাই-মা, গাইছে ঘুম-পাড়ানিয়া গান,
মৃত্যু ব্যান্ড মাস্টারের মতো বাদ্যহীন আসে, চকিতে বাগান
কংকালের ডালপালা বুকে নিয়ে মৃত্যুরই বাগিচা হয়ে যায়,
তবে কি একথা কেউ মেনে নেবে আজ? যে শাবাজ দূরে ধায়
অনেক উঁচুতে নীলিমায় তার চঞ্চুর ইস্পাতি
হিংস্রতায় ছিন্নভিন্ন বলে, হায়, হব কি আমিও আত্মঘাতী?

এই যে দেখছি ওরা, সারি সারি লোক, গোলাপের কাছে গিয়ে
ইনিয়ে-বিনিয়ে
এক আধসের চাল চায়, গাছের নিকট চায় নতুজানু অভিনব
পোশাক-আশাক, সর্বক্ষণ করে স্তব
নিসর্গের ইদানীং আর
অস্থিচর্মসার
হাজার হাজার শিশু চাঁদকে বেলুন ভেবে নিয়ে
মেটায় খেলার সাধ ধুলোয় গড়িয়ে।
এই যে দেখছি কত গ্রামীণ রমণী,
শহুরে ঘরণী
কী মিহি জ্যোৎস্নার শাড়ি পরে আড়ালেই
থাকে একাকিনী লজ্জা-জালে বন্দিনী এবং সেই
খাঁ-খাঁ রূপ এমনকি শয্যাসঙ্গীরও দেখার নেই অধিকার।
কিছুই দেখি না আমি, এ তো শুধু দৃষ্টিরই বিকার!

শক্রদের কয়েদখানায় ঘানি টেনেছি বলেই, হে স্বদেশ, শোনো,
তোমারই প্রেমের কোনো কোনো
দন্তুর ইজারাদার রক্তপায়ী পাখির মতন
আমাকে ভীষণ ঠোকরায় সুখে যখন তখন।
আমার তো শালপ্রাংশু বাহু নেই, এমনকি হাতই নেই তাই,
পারি না পবিত্র ক্রোধে জ্বলে উঠে মিথ্যার প্রাসাদ ছাই
করে দিতে, পারি না বেবাক মিসমার
করতে তাদের রাঙা তাসের ঘরের মতো মস্ত দরবার।