আমি ভারি লোভাতুর

আমি ভারি লোভাতুর, একটা নাছোড় লোভ আমার আপন
প্রতিবেশী, আমাকে সে বারবার আয়নার সম্মুখে
নিয়ে যায়, মগ্ন হতে বলে নিজেরই ছায়ায়। আমি চাই
সূর্যোদয় আমার আত্মায় হোক পলেস্তারা, সূর্যাস্তের আভা
আমার সকল নিঃস্বতাকে বর্ণাঢ্য করুক।

মাটি ফুঁড়ে যে-অংকুর চারা হয় কোমল স্পন্দনে,
আমি তার শিহরণ আপন শিরায়
পেতে ভালোবাসি
এবং রহস্যময় মাঝরাতের বৃষ্টির অন্তরালে খুব
মুখর যে বৃষ্টি তারই ধ্বনি আমার প্রতিটি রোমকূপে ধরে
রাখতে লোভ হয়, হঠাৎ হাওয়ায় স্নিগ্ধ পায়রার
বুকের স্ফুরিত ঈষদুষ্ণ রোমরাজি আমার আপনকার
চোখের পলকে অতিশয় নম্রতায়
মিশিয়ে নেয়ার জন্যে প্রতীক্ষায় থাকি।

একটা নাছোড় লোভ আমাকে প্রত্যহ
ভুলিয়ে ভালিয়ে
নিসর্গের স্নেহ কিংবা ব্যাপক ক্রোধের দিকে নিয়ে যায় আর
মাঝে-মাঝে গেরুয়া রঙের মতো শুধু
অপার ঔদাস্য এক অস্মিতায় কেমন নিঃস্ব বাজে, সাদা
পাথরে অদৃশ্য মিনারের শোভা চাই কখনোবা,
এ-ও তো প্রখর লোভ ভিন্নতর। নক্ষত্র গোষ্ঠীর
আতশি মায়ায় মরীচিকা ডেকে যায় বারংবার।
আমার জীবন যেন পুরোনো রেশন কার্ড, দেখে
ঘেন্না হয়, অথচ হেলায় দূরে ছুড়ে
ফেলে দিতে পারি না কখনো।
বুঝি তাই হঠাৎ তেতলা থেকে পড়ি না ঝাঁপিয়ে
অথবা ঘুমের বড়ি মাত্রাধিক করি না সেবন।
একটা সেয়ানা লোভ গেরস্ত বাড়িতে তেজী কুকুরের মতো
চিৎকারে চিৎকারে
আমাকে জাগিয়ে রাখে রৌদ্রালোকে, গহন জ্যোৎস্নায়।

আমার লোভের সীমা-পরিসীমা নেই।
আমি তো আপনকার থেকে
ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হতে চেয়ে
কেবলি জড়িয়ে ফেলি নিজেকে নিজের অন্তর্গত
লতাগুল্মে, কিছু ভেঙে ফেলতে গিয়ে গড়ে ফেলি,
গড়তে চেয়ে ভেঙে করি চুরমার ঝাঁ ঝাঁ উত্তেজনায় সহসা।
মুঠোয় প্রবল চেপে ধরি জল, নিমেষে গড়িয়ে
ধুলোয় বিলীন হয়, শোকার্ত শোকার্ত চেয়ে থাকি।
আর নিরুপমা তুমি দূর
মরুভূমি পরিবৃত নৈঃসঙ্গের দুর্গ থেকে খুব টলটলে
মদির মুহূর্তগুলো ঠোঁটে নিয়ে যখন দাঁড়াও এসে কাছে
অগস্ত্য মুনির মতো চকিতে তোমাকে
গণ্ডুষে গণ্ডুষে পান করে ফেলতে ভারি লোভ হয়।