আক্রান্ত হ’য়ে

‘কী আছে তোমার কাছে? বের করো চটপট’ বলে
ক’জন উঠতি গুণ্ডা রাখল রিভলবার বুকের ওপর
আচমকা, আমি প্রায় অকম্পিত স্বরে বললাম, ‘এই তো
এখানে আমার বুকে শ্যামলিম শৈশবের নেবুতলা, নানান রঙের
প্রজাপতি, হৈ-হৈ মেলা
পাখির পেলব বাসা, কারো গাঢ় চুম্বনের রঙিন উষ্ণতা,
উনিশ শো বেয়াল্লিশ, তেতাল্লিশ, দুর্ভিক্ষের ছায়া,
ব্যক্তিগত নানাবিধ ক্ষুধা,
এবং দ্বিতীয় বিশ্ব সময়কালীন ঝিকঝিক মালুম ইত্যাদি শব্দাবলি;
আমার পাঁজরে বহু লাশ পলাশ রঙের বিভিন্ন মিছিল,
শ্রাবণ-সন্ধ্যায় ভেজা করুণ শহর,
আমার মুঠোয় কতো কান্না, নিয়নের ঝিকিমিকি
এবং হিরোশিমার নিদারুণ লণ্ডভণ্ড ল্যান্ডস্কেপ, দ্বিখণ্ডিত বঙ্গ,
সংখ্যাহীন উদ্বাস্তুর মুখ এবং আপনাদের পিস্তলের
রঙেন মতন তীব্র হতাশা অথবা
রঙিন শার্টের মতো আশা,
কবিতার জন্যে অন্তহীন ভালোবাসা, শুনুন পকেটে
অসমাপ্ত কবিতার পাণ্ডুলিপি, আইবুড়ো বোনের একটি
চিঠি ছাড়া আর কিছু নেই।
এসব ফালতু বস্তু আপনারা নেবেন কি করুণানিধান?’

হঠাৎ ছিটিয়ে থুতু আমার একান্ত নির্বিকার মুখে ওরা
ধাঁ করে উধাও হল ঝাঁ-ঝাঁ ধোঁয়া ছেড়ে কালো জিপে।
আমার ভেতর কিছু শব্দাবলি ম্যাজেশিয়ানের
তাসের মতন নেচে নেচে
কেবলি কবিতা হতে চায়। সটান নির্ভীক হেঁটে চলি পথ
বক্ষলগ্ন অলৌকিক একটি তালিকা নিয়ে অলক্ষ্যে সবার।