গগনবাবুর জীবন চরিত

গগনবাবুর জীবন চরিত

ভোররাতে অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখেন গগনবাবু। ধু-ধু কালো একটা পথ নির্জনে পড়ে আছে। পথের দুপাশে সার ধরা গাছপালা। কোথাও কোনও শব্দ নেই, হাওয়া নেই। পাতলা বার্লির মতো ম্লান একটা আলো ফুটে আছে চারদিকে। সেই আলোয় কালো পথটা বড় অলৌকিক মনে হয়। দূরে বহুদূরে পথের একেবারে শেষ মাথায় সাদা। পাজামা পাঞ্জাবি পরা একজন মানুষ ছোট্ট পাখির মতো ধীরে হেঁটে যায়। কোথায় কোন প্রান্তরের দিকে যায, গগনবাবু বুঝতে পারে না।

ঘুম ভেঙ্গে যায়।

 ঘুম ভাঙার পরও গগনবাবু খানিক বুঝতে পারেন না জেগে আছেন, না ঘুমিয়ে। স্বপ্নের শেষ দৃশ্যটা তখনও লেগে আছে তাঁর চোখে। ধু-ধু পথের একেবারে শেষ প্রান্তে ধীরে মন্থর পায়ে হেঁটে যাচ্ছে একাকী এক মানুষ। দূর থেকে মানুষটাকে দেখায় ছোট্ট পাখির মতো।

 তখনি নোয়াব বাড়ির মসজিদ থেকে ফজর নামাযের আজান ভেসে আসে।

তাঁতীবাজার থেকে নোয়াব বাড়ি কাছেই। মাইকে আযানের শব্দটা একদম স্পষ্ট পাওয়া। যায়।

 ফজর আযানের আগে পুরোনো ঢাকা বড় শব্দহীন হয়ে থাকে। যেন বা মৃত শহর। কোথাও কোন প্রাণের স্পন্দন নেই। আযানের ললিত সুর সেই শব্দহীনতা ভেঙে খান খান করে দেয়। গগনবাবু জানেন এখুনি আস্তেধীরে জেগে ওঠবে পুরোনো ঢাকা। কাক ডাকবে, কলতলায় ভিড় করবে গৃহস্থ নারীপুরুষ। সময়টা গগনবাবুর খুব প্রিয়।

 চোখ মেলে গগনবাবু প্রথমে তার ঘরের ভেতরটা দেখেন। লম্বা ধরনের ঘুপটি মতন একটা ঘর। ঘরের অর্ধেক জুড়ে বহুকালের পুরোনো একটা চৌকি। বাকি অর্ধেকে রান্নাবান্না আর ছেলেমেয়েদের শোয়াপড়ার জায়গা। এই ঘরের ভাড়া ষাট টাকা।

গগনবাবু যখন প্রথম আসেন তখন ভাড়া ছিল পনের টাকা। সে অনেককাল আগের কথা। দিনে দিনে ভাড়া বেড়েছে ঘরের। বাড়িঅলা হরিপদ একটা চামার। ছোট জাতের মানুষ তো, কৈবর্ত, চামার হবেই।

শালা একটা পয়সা কম নেবে না। ছসাতটা খুপরি ঘর ভাড়া দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে রাজার হালে মৌজে জীবন কাটাচ্ছে। কাজকাম কিছুই করে না। ভাড়া তোলে আর খায়। থাকে ছাদের ওপরকার বড় একখানা ঘরে। বাচ্চাকাচ্চা নেই। থাকার মধ্যে আছে। ধুমসি মতন বউটা। বউটা একটু পেটফোলা টাইপের। দেখলে মনে হয় অনন্তকাল ধরে গর্ভবতী হয়ে আছে। কিন্তু সত্যিকার গর্ভবতী সে কখনও হয় না। দোষ বউটার না হরিপদর, কে জানে! গগনবাবুর সময় কোথায় ওসব নিয়ে মাথা ঘামানোর।

 গগনবাবুর ঘরের ভেতর এখন এই সকালবেলা একটা অন্ধকার ঘাপটি মেরে আছে। চৌকির একপাশে, মাথার কাছে একটিমাত্র জানালা। দিনরাত খোলা থাকে জানালাটা। হলে হবে কী, আলো যেটুকু আসে তাতে ঘরের অন্ধকার পুরোপুরি কখনও কাটে না। বৃষ্টিবাদলার দিনে তো কথাই নেই, ঘোরতর রৌদ্রের দিনেও অন্ধকারটা গগনবাবুর ঘর থেকে কখনও বেরিয়ে যায় না। চিরকালীন দারিদ্র্যের মতো লেগে আছে।

গগনবাবুর ছেলেমেয়েরা জড়াজড়ি করে শুয়ে আছে মেঝেতে। হঠাৎ করে তাকালে, বোঝার উপায় নেই ওই অতটুকু জায়গায় পাঁচ পাঁচটি মানুষ শুয়ে আছে।

পাঁচজন মানুষের কী অতটুকু জায়গায় শোয়া হয়।

 আহা বড় কষ্ট বাচ্চাগুলোর। দুএকজন ইচ্ছে করলে চৌকির ওপরও শুতে পারে। কিন্তু গগনবাবুর ওই অভ্যেস, অন্যের সঙ্গে এক বিছানায় শুতে পারেন না। এটুকু বনেদিপনা এখনো তার চরিত্রে রয়ে গেছে। ব্যাপারটা সনাতনী বোঝে। ষোল সতের বছর গগনবাবুর ঘর করছে বুঝবে না!

নিজেও ছেলেমেয়েদের সঙ্গে শোয় সনাতনী। বড় শান্তনম আর ঠাণ্ডা প্রকৃতির মানুষ সনাতনী। সারা দিনে কথা বলে দশ পনেরটা। সংসার করে যন্ত্রের মতো। ফজর আযানের পর শুরু করে একটানা চালিয়ে যায় রাত নটা দশটা অব্দি। এর কোন বিরাম দেই। হিসেব করলে দেখা যাবে সনাতনী একা আসলে চার মানুষের কাজ করে। রান্নাবান্না, বাসন কোসন মাজা, ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় ধোয়া, কী করে না সনাতনী!

 গগনবাবুর বড় মেয়েটির বয়স চৌদ্দ বছর। নাম কমলা। কমলারানী মুখার্জী। ক্লাস নাইনে পড়ে। বড় ঢিলেঢালা স্বভাবের মেয়ে। ঘরসংসারের কাজ একদম বোঝে না। স্কুল আর পড়াশুনো নিয়ে আছে। সকালবেলা ওঠে মেঝেতে মাদুর বিছিয়ে ভাই-বোনদের নিয়ে পড়তে বসে কমলা। নটার দিকে ওঠে চানটান করে, রুটি আর ভাজিভুজি খেয়ে যায় স্কুলে। ছোট ছেলে দুটোও যায়। ওরা পড়ে মিউনিসিপ্যালিটির প্রাইমারী স্কুলে। একদম ছোট মেয়ে দুটির একটির বয়স তিন বছর আরেকটির এক বছর দুমাস। এক বছর দুমাসেরটি সনাতনীর বুকের দুধ আর সস্তায় কেনা পাতলা ট্যালট্যালে বার্লি খেয়ে বেঁচে আছে। আহা কোনকালে জন্মাল বাচ্চাগুলো। চারদিকে ঘোরতর অভাব, দুর্দিন। সুখের মুখ দেখল না বাচ্চাগুলো। ভালো খাওয়াপরা পেল না।

ভালো খাওয়া পরা কী, দুবেলা পেটপুরে শাকভাতও তো খেতে পায় না।

এসব ভেবে এই ভোরবেলাই বুক কাঁপিয়ে দীর্ঘ একটা শ্বাস পড়ল গগনবাবুর।

নিয়তি!

সব নিয়তি!

নয়তো কী জীবন ছিল গগনবাবুর, কী হয়ে গেছে।

গগনবাবুর ছিলেন বিক্রমপুরের বনেদি হিন্দু। মুখার্জী। বানীখাড়ার ছোটখাটো জমিদার ছিলেন গগনবাবুর বাবা স্বর্গীয় জীবন মুখার্জী।

জীবন মুখার্জীর একমাত্র সন্তান গগন মুখার্জী। গগনবাবু।

গগনবাবু ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন কলকাতা গিয়ে। সঙ্গে দুজন চাকর। টাকা পয়সার অভাব নেই, খাওয়া-দাওয়ার অভাব নেই। মুখ দিয়ে যে জিনিসের নাম উচ্চারণ করতেন, জীবন মুখার্জীর একমাত্র ছেলে, সঙ্গে সঙ্গে জিনিসটি হাতের কাছে এসে হাজির হত।

আহা! কী জীবন কী হয়ে গেছে। এখন সেই জীবনের কথা ভাবলে বিশ্বাস হয় না। মনে হয় কিচ্ছাকাহিনী।

জীবন মুখার্জী গত হলেন পার্টিশনের আগের বছর। খুবই জাঁদরেল ধরনের মানুষ ছিলেন। দোর্দণ্ড প্রতাপ তার। তার ছেলে গগনবাবু হয়েছেন খুব নিরীহ প্রকৃতির। সরল সোজা। জমিজিরাতের ঘোরপ্যাঁচ যেমন বুঝতেন না তেমন, বুঝতেন না জীবনের ঘোরপ্যাঁচ। ফলে হাতছাড়া হয়ে গেল সব।

পার্টিশনের আগের বছর দেশ জুড়ে ভয়াবহ দাঙ্গা হাঙ্গামা শুরু হয়েছিল। যেসব মুসলমান কৃষক জীবন মুখার্জীর বর্গা জমির দখল ছাড়তে নারাজ তাদের মধ্যে কেউ কেউ জীবন মুখার্জীর একমাত্র উত্তরাধিকার গগন মুখার্জিকে জানে মেরে ফেলার পাঁয়তারা করছিল। রাতের অন্ধকারে গরু কোরাবানি দেয়ার ছুরি নিয়ে আসবে গগন মুখার্জীকে কোরবানি দিতে, কথাটা শোনার পরই সামান্য টাকা-পয়সা যা হাতে ছিল তাই নিয়ে গ্রাম ছেড়েছিলেন গগন বাবু। সে কতকাল আগের কথা। তারপর আর কখন। গ্রামে ফেরা হয়নি গগনবাবুর। এখনও মাঝেমধ্যে গ্রামের জন্যে মনটা বড় কাঁদে। এই তো ঢাকার খুব কাছেই তাঁদের সেই গ্রাম। মুন্সিগঞ্জ থেকে দীঘিরপাড় যাওয়ার পথে পড়ে। সকালবেলা বেরুলে দিনে দিনে ঘুরে আসা যায়। কিন্তু যাওয়া হয়নি গগনবাবুর। সেই ভয়টা মনের তলায় এখন লুকিয়ে আছে। গেলে যদি সেই মুসলমান কৃষকরা কিংবা তাদের উত্তরাধিকার কেউ গরু কোরবানি দেয়ার ছুরি নিয়ে গগনবাবুকে কোরবানী দিতে আসে।

গগনবাবু মৃত্যুকে ভয় পান।

গগনবাবুর আত্মীয়স্বজনরা সব আগেভাগেই গ্রাম ছেড়ে কোলকাতা চলে গিয়েছিল। গগনবাবুরও যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কী যেন কী কারণে শেষ পর্যন্ত যাওয়া হয়নি। তাছাড়া কোলকাতা গিয়ে গগনবাবু করবেনই বা কী! তাঁর যাবতীয় আত্মীয়স্বজনই তো কলকাতায় উদ্বাস্তু। উদ্বাস্তুদের কাছে গিয়ে আরেকজন উদ্বাস্তু কেমন করে আশ্রয় নেবে। খড়কুটোর মতো উড়ে তখন দিন কেটেছে গগনবাবুর। কোলকাতায় না গিয়ে তিনি এসেছিলেন ঢাকায়। সেই যে ঢাকায় এসেছেন ঢাকা থেকে আর বেরন নি। দিন কেটে গেছে। তবে খড়কুটোর মতো উড়তে উড়তে এক সময় ভগবানের কৃপা জুটেছিল গগনবাবুর। এজি অফিসে কেরানির চাকরি পেয়েছিলেন। সেই চাকরি এখন আছে। সত্তর টাকা মাইনেয় ঢুকেছিলেন, এখন পান চারশো আশি। তখন ছিলেন একা। এখন না, খাওয়াপরার মানুষ সাতজন। ঘরভাড়া ষাট টাকা। অতিশয় কষ্টের জীবন। তবুও এই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন গগনবাবু। অভ্যস্ত হওয়ার কারণ অবশ্য সনাতনী। নিঃশব্দে গগনবাবুর সংসার তৈরি করেছে সনাতনী। সেই সংসার টেনেহিঁচড়ে চালিয়ে নিচ্ছে।

সনাতনীর কথা মনে হতেই গগনবাবুর টের পেলেন, চৌকির ওপর, সনাতনী তার পাশে শুয়ে আছে। রাতেরবেলা কখন ছেলেমেয়ে ফেলে ওঠে এসেছে চৌকিতে গগনবাবু টের পাননি। স্বামীর বুকে মুখ রেখে ঘুমোনোর বড় সাধ তার। এতকালের পুরোনো মানুষ গগনবাবু, হলে কী, সনাতনীর টানটা কমেনি। প্রথম যৌবনের মতো এখন স্বামীর বুকে মুখ রেখে ঘুমোতে চায়। ওভাবে ঘুমোলে একহাতে আবার খামছে ধরে রাখে গগনবাবুর একটা বাহু।

হাতাঅলা কোরা গেঞ্জি পরে শোয়ার অভ্যেস গগনবাবুর। সনাতনী যেদিন তাঁর বুকে মুখ রেখে ঘুমোয় সেদিন ঘুমঘোরে গগনবাবুর বাহুর কাছের গেঞ্জি খামছে ধরে রাখে। যেন ওভাবে ধরে না রাখলে সনাতনীকে ঘুম পাড়িয়ে রেখে নিঃশব্দে পালিয়ে যাবেন গগনবাবু। এমন এক জায়গায় পালিয়ে যাবেন যেখান থেকে মানুষ আর কখনও ফিরে আসে না।

 কথাটা ভেবে আজ সকালে আপন মনে হাসেন গগনবাবু। তারপর সনাতনীর হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চান। সনাতনী ঘুমের ভেতর কেঁপে ওঠে। চমকে চোখ মেলে। স্বামীর মুখের দিকে তাকায়। গগনবাবু কোন কথা বলেন না। গভীর মায়ামমতায় সনাতনীকে চেপে ধরেন।

তখন মেঝেতে শোয়া ছোট মেয়েটি ঘুম ভেঙে হাতের কাছে মাকে না পেয়ে ট্যা ট্যা করে কেঁদে ওঠে। স্বামীর হাত ছাড়িয়ে ওঠে যায় সনাতনী। মেয়েকে দুধ দেবে।

গগনবাবু তারপর আড়মোড় ভেঙে বিছানা ছাড়েন। মাথার কাছে সিজার সিগ্রেটের প্যাকেট আর ম্যাচ থাকে। হাতড়ে হাতড়ে প্যাকেটটা নেন গগনবাবু। ম্যাচটা নেন। তারপর দিনের প্রথম সিগ্রেটটা ধরিয়ে টানতে টানতে ঘর থেকে বেরোন। খানিক পরই বারোয়ারি পায়খানায় লাইন পড়বে। হরিপদর ভাড়াটেরা সব ওঠে লোটাবদনা নিয়ে দৌড়াবে পায়খানার দিকে। তার আগেই কাজটা সেরে রাখা ভালো। পায়খানাটা কুয়োতলার পাশেই। এই ভোরবেলাই কে যেন ঢুকে পড়েছে। কুয়োতলার কাছাকাছি গিয়ে পায়খানার বন্ধ দরোজার দিকে একবার তাকান গগনবাবু। তারপর তাকান কুয়োতলার দিকে। তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে চোখ ফিরিয়ে নেন।

এতক্ষণে চারদিক বেশ ফরসা হয়েছে। কাঁচা জামরুলের মতন একটা আলো ফুটে ওঠেছে চারদিকে। সেই আলোর তোয়াক্কা না করে গগনবাবুর পাশের ঘরের পাচি, ছাব্বিশ সাতাশ বছরের ধুমসি মেয়েছেলেটা অবলীলায় জল বিয়োগ করছে। দৃশ্যটা দেখে ভারি একটা লজ্জা পান গগনবাবু। পরপর দুবার সিগ্রেটে টান দেন। এক ফাঁকে দেন ছোট্ট একটা গলা খাকারি। গলা খাকারিটা দেন পাচিকে জানান দেওয়ার জন্যে। ভাবখানা এই রকম, ওহে পাচি সাবধান। পর পুরুষে তোমারজল বিয়োগ দেখছে!

 কিন্তু পাচি ওসব গা করবার মতো মেয়েছেলে না। লাজলজ্জার বালাই নেই তার। অবলীলায় পরপুরুষের চোখের সামনে কাপড় তুলে বসে যেতে পারে। চান করে বুকের কাপড়-টাপড় ফেলে এতটা বয়স হয়েছে পাচির বিয়ে হয়নি। বিয়ে হয়নি বলেই কি দিনে দিনে অমন বেহায়া আর নির্লজ্জ হয়ে গেছে সে। কুৎসিত সব ক্রিয়াকলাপ ঘটবার সময়ও আশেপাশে তাকিয়ে দেখে না। দেখার প্রয়োজন বোধ করে না। একরাতে জল বিয়োগ করতে বেরিয়ে পাচির অতিশয় জঘন্য একটি ব্যাপার দেখে ফেলেছিলেন গগনবাবু। তার এবং পাচিদের ঘরের পেছন দিকটার সরুগলিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পাচি আর সুবল

সুবল গগনবাবুকে দেখতে পায়নি। পাটি পেয়েছিল। কিন্তু তোয়াক্কা করেনি। নিজের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। কী করবে। এতটা বয়স হয়েছে, বিয়ে হয়নি পাচির। বুড়ো বাপের সাধ্য নেই মেয়ে বিয়ে দেয়ার।

কিন্তু মানুষের শরীর বড় অবুঝ। সে কোন শাসন মানতে চায় না।

পাচির শরীরও শাসন মানে না।

কিন্তু এইসব ক্রিয়াকলাপ তো মানুষ মানুষের চোখ বাঁচিয়ে করে। পাচি অত খোলামেলাভাবে মানুষের চোখের ওপর কেমন করে করে! কেন করে?

যে সমাজে একটি মেয়ে শরীরে ভরা যৌবন নিয়ে নিরন্তর ছটফট করে বেড়ায়, সংসারের অভাব অনটনে যে সমাজে যুবতী কন্যার বিয়ে হয় না, সমাজের দশজন মানুষের চোখের সামনে দিনদুপুরে এই কারণেই কি লীলা করে পাচি আসলে বলতে চাইছে, দেখ হে সমাজবাসী, কেমন করে তোমাদের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছি আমি। দেখ আমাকে দেখ। এসব কথা ভাবতে ভাবতে পাচির জন্যে কী রকম একটা মায়া হয় গগনবাবুর। তখন চকিতে একবার ভোররাতে দেখা স্বপ্নের কথা মনে পড়ে তাঁর। ধু-ধু পথের শেষপ্রান্তে একাকী হেঁটে যায় এক মানুষ।

তারপর নিজের চৌদ্দ বছরের মেয়ে কমলার কথা মনে পড়ে গগনবাবুর। হিন্দু ঘরের মেয়ে। বিয়ে দিতে থোক টাকা লাগবে। মেয়ে বিয়ে দেয়ার অত টাকা গগনবাবু পাবেন কোথায়! টাকার অভাবে পাচির মতো কমলারও বিয়ে হবে না। ছাব্বিশ সাতাশ বছর বয়সেও আইবুড়ো থেকে যাবে কমলা। কিন্তু মানুষের শরীর বড় অবুঝ। সে কোন শাসন মানতে চাইবে না। কমলার শরীরও পুরুষ সঙ্গ চাইবে। পাড়ার ছোঁকরারা রাতবিরাতে এসে ঘরের পাশের গলিতে টেনে নেবে কমলাকে। এই অব্দি ভেবে দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলেন গগনবাবু।

 গগনবাবুর বাবা জীবন মুখার্জীর বড় শখ ছিল একটা মেয়ের। হয়নি। হলেরাজরানীর মতো মানুষ হত মেয়েটি। সোনাদানায় মুড়ে, মালখানগরের জমিদার ললিত মোহনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতেন। ললিত মোহন ছিলেন বাবার বন্ধু। বন্ধু পুত্রের সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দেয়ার বড় শখ ছিল তাঁর।

 অথচ গগনবাবুর তিনটি মেয়ে। বড়টির বয়স চৌদ্দ। সেটির বিয়ে নিয়ে এখুনি চিন্তায় ঘুম হয় না গগনবাবুর। একেই বলে নিয়তি। সকালবেলার ক্রিয়াকর্ম সেরে, চান টান করে গগনবাবু যখন ঘরে ঢোকেন তখন পুরোনো সংসারটি তার জেগে গেছে। ছেলেমেয়েরা মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছে। সকালবেলা ঘরটায় আলো একদমই ঢুকতে চায় না। কুপি জ্বালিয়ে মাটির গাছার ওপর রেখে তার পাশে গোল হয়ে পড়তে বসেছে সবাই। ছোট মেয়েটিকে একটা টিনের বাটির একমুঠ মুড়ি দিয়ে ওদের পাশে বসিয়ে দিয়েছে সনাতনী। একটা দুটো করে মুড়ি খুটে খাচ্ছে মেয়েটি। পাশে সনাতনী কেরোসিনের স্টোভ জ্বেলে চা করছে। এখন এককাপ করে আদা চা আর এক মুঠ করে মুড়ি খাবে ছেলেমেয়েরা। তারপর নটা দশটার দিকে রুটি আর ভাজিভুজি খেয়ে স্কুলে যাবে তিনজন। তার আগে গগনবাবু যাবেন অফিসে।

সকালবেলা বাজার করার নিয়ম নেই গগনবাবুর সংসারে। অফিস ফেরার পথে বাজারটা ঘুরে আসেন তিনি। আনাজপাতি কিনে আনেন। সস্তায় পচাধচা মাছ কিনে আনেন। এতেই সংসার চলে।

দু-পাঁচটা উপরি টাকা আজকাল প্রায়ই পান গগনবাবু। সে টাকায় অফিস ফেরার পথের বাজার খরচটা ওঠে যায়। দুপুরবেলা অফিস ক্যান্টিনে গিয়ে এক কাপ চা আর দুটো বিসকিট খাওয়া যায়। সকালবেলা তো ভরপেট রুটিভাজি খেয়ে বেরোন। দুপুরবেলা না খেলেও চলে। বাসায় ফিরে রাতে একবার ভাত খাবেন। তারপর চৌকিতে একা শুয়ে ঘুম।

 কিন্তু উপরি পয়সাটা পেলে দুপুরবেলা চা বিসকিট খাওয়ার জন্যে মনটা বড় আকুলি বিকুলি করে। মনকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে চা বিসকিটটা তিনি খান। দিন চলে যাচ্ছে গগনবাবুর।

 অফিসে যাওয়ার আগে গগনবাবু আজ অদ্ভুত একটা কাজ করলেন। সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরেছেন, পায়ে কদিন আগে সারানো হয়েছে এমন একঝোড়া পাম্প সু, একদম তৈরি হয়ে সনাতনীকে বললেন, এক কাপ চা খাওয়াবে?

ছোট মেয়েটিকে চামচে করে বার্লি খাওয়াচ্ছিল সনাতনী। গগনবাবুর কথায় মুখ তুলে তাকাল। মুখটা হাসি হাসি হয়ে গেল তার।

কিন্তু সনাতনী মুখের হাসি হাসি ভাবটা দেখলেন না গগনবাবু। তিনি দেখলেন অন্য একটা দৃশ্য। বহুকাল পর সনাতনীকে আজ বড় সুন্দর লাগছে। ফরসা মুখটা পাকা পেয়ারার মতো চকচক করছে। চোখ দুটো বরাবরই খুব সুন্দর সনাতনীর। সেই চোখে আজ অদ্ভুত এক দৃষ্টি। গভীর এক প্রশান্তি। সিঁথিতে জ্বলজ্বল করছে সিঁদুর। সনাতনীর সিঁথির সিঁদুর দেখে কেন যে বুকের খুব ভেতরে একটা মোচড় লাগে গগনবাবুর। গগনবাবু মারা গেলে সিঁথির সিঁদুর মুছে যাবে সনাতনীর। সনাতনী আর কখনও সিঁদুর পরবে না।

গগনবাবুর মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।

 সনাতনী এমনিতেই খুব কম কথা বলে। গগনবাবু মারা গেলে কি একেবারেই বোবা হয়ে যাবে।

ভোররাতে দেখা স্বপ্নের কথাটা আবার মনে পড়ে গগনবাবুর। ধু-ধু পথের শেষপ্রান্তে একাকী হেঁটে যায় এক মানুষ।

স্বপ্নের কথাটি কি সনাতনীকে বলবেন গগনবাবু।

সনাতনী ততক্ষণে স্টোভ জ্বেলে চায়ের জল বসিয়েছে। ছোট মেয়েটিকে দিয়েছে কমলার কোলে। মায়ের মতোই বোনকে কোলে বসিয়ে চামচে করে বার্লি খাওয়াচ্ছি কমলা। দৃশ্যটা দেখে পা ঝুলিয়ে চৌকিতে বসেন গগনবাবু। তারপর পকেট হাতড়ে সিগ্রেটের প্যাকেট বের করেন। ম্যাচ বের করেন। তখন দিনের প্রথম কথাটা বলে সনাতনী। চা খেয়ে নাও। তারপর সিগ্রেট ধরাও। শুনে গগনবাবু একটু চমকে ওঠেন। মনে হয় বহুকাল পর যেন গলা শুনছেন। চায়ে চুমুক দিয়ে ভারি একটা গরম টের পেলেন গগনবাবু। বললেন, ভারি গরম পড়েছে গো। সনাতনী বলল, কাঁঠাল পাকা গরম। এই গরমে গাছের সব কাঁঠাল পেকে যায়।

তারপর হাতপাখা নিয়ে স্বামীর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আস্তেধীরে বাতাস করতে থাকে সনাতনী।

চা শেষ করে সিগ্রেট ধরান গগনবাবু। নটা বাজে। এক্ষুনি বেরিয়ে পড়া উচিত।

তাঁতীবাজার থেকে এজি অফিস হেঁটে যেতে আধঘণ্টা লাগে।.এখন না বেরুলে সময় মতো অফিস পৌঁছুনো যাবে না।

কিন্তু কেন যে আজ ওঠতে ইচ্ছে করে না গগনবাবুর। অকারণে সনাতনীর মুখের দিকে খানিক তাকিয়ে থাকেন গগনবাবু।

সনাতনী বললো, কী দেখছ?

কিছু না।

তারপরে একটু থেমে গগনবাবু বললেন, অফিস যেতে আজ ইচ্ছে করছে না।

তাহলে কাজ নাই গিয়ে।

বাসায় থেকে কি করব?

শুয়ে থাক।

না চলেই যাই। বলে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন গগনবাবু। সঙ্গে সঙ্গে ছোট ছেলেটা এসে তার হাত ধরে। একটা কাঁঠাল আনবে বাবা।

কথাটা এমন করে বলে ছেলেটা, গগনবাবুর বড় মায়া হয়। ছেলেটার নিশ্চয় কাঁঠাল খাওয়ার সাধ হয়েছে।

আনবেন, নিশ্চয় গগনবাবু আজ একটা কাঁঠাল আনবেন। ছেলের মাথায় হাত রেখে গগনবাবু বললেন, আনব বাবা। আনব।

তারপর কৃষ্ণ কৃষ্ণ বলে ঘর থেকে বেরোন।

বাইরে বেরিয়ে গগনবাবু টের পান বেজায় রোদ ওঠেছে আজ। বেজায় গরমও পড়েছে। সনাতনী বলেছে, এই গরমে গাছের সব কাঁঠাল পেকে যায়। সেই কথা শুনেই বুঝি কাঁঠালের বায়না ধরেছে ছেলেটা। আজ অফিসে গোটা দশেক টাকা উপরি পেলেই হয়। বিকেলবেলা অফিস থেকে বেরিয়ে বড়সড় একটা কাঁঠাল কিনবেন গগনবাবু। কাঁঠালটা কাঁধে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। কাঁঠাল দেখে ছেলেমেয়েরা বড় খুশি হবে। সনাতনী বড় খুশি হবে। ছেলেমেয়ে এবং স্ত্রীর মুখ খুশি দেখা পুরুষ জন্মের শ্রেষ্ঠ উপহার। আজ সেই উপহারটা পাবেন গগনবাবু। কিন্তু অফিসে আজ সকাল থেকেই কিছু কিছু ভুল হতে থাকে গগনবাবুর।

সাধারণত এমন কখনও হয় না তার। আজ কেন যে হচ্ছে।

কাজ থামিয়ে গগনবাবু একটা সিগ্রেট ধরান। তারপর উদাস হয়ে সিগ্রেট টানতে থাকেন। গগনবাবুর পাশের টেবিলে বসে অল্পবয়সী নজরুল। ভারি ফূর্তিবাজ লোক নজরুল। মাথায় উত্তমকুমারের মতো চুল। সুযোগ পেলেই পকেট থেকে কাকুই বের করে চুল আঁচড়ায় সে। এখন তাই করছিল। তবে চুল আচিড়াতে গগনবাবুর উদাস ভঙ্গিতে সিগ্রেট টানাটা খেয়াল করল সে। বলল, কী হইছে দাদা? অমন কইরা সিগ্রেট টানতাছেন?

কথাটার জবাব দিলেন না গগনবাবু। বললেন, খাবেন একটা?

দেন।

কাকুই পকেটে রেখে গগনবাবুর টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াল নজরুল। সিগ্রেট নিয়ে ধরাল। তারপর একাকী যেন নিজের কাছে বলছে এমন স্বরে বলল, শালা আজব আদমি। আসতেছে না কেন?

গগনবাবু উদাস গলায় বললেন, কে?

আছে এক মক্কেল। একটা কাজ কইরা দিছি। পঞ্চাশটা টেকা দেওনের কথা। পাত্তা নাই হালার।

গগনবাবু আস্তে করে বললেন, আসবে। অস্থির হচ্ছেন কেন?

নজরুল লোকটা ঝোঁকের মাথায় কথা বলে ঝোঁকের মাথায় কাজ করে। বলল, আপনে কইলেন দাদা, আইব!

হ্যাঁ আমার মনে হয়।

পঞ্চাশটা টেকা তাইলে আমি পামু?

পাবেন।

নজরুল আঙুল তুলে বলল, পাইলে দশ টেকা আপনের। ওয়ার্ড ইজ ল।

নজরুলের কথা শুনে ভারি একটা উত্তেজনা বোধ করেন গগনবাবু। দশটা টাকা পেলে কাঁঠালটা কেনা হবে। লাঞ্চ আওয়ারেই হেডক্লার্কের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে যাবেন। মনটা ভালো লাগছে না। থেকে থেকে স্বপ্নের কথাটা মনে হয়। মনটা বড় উদাস লাগে গগনবাবুর।

 সিগ্রেট শেষ করে আবার কাজে মন দেন গগনবাবু।

দেড়টার দিকে নজরুলের সেই মক্কেল এসে হাজির। এসেই নজরুলকে ডেকে নেয় বারান্দায়। দেখে গগনবাবু বুঝে যান দশটা টাকা তিনি পাবেন। উত্তেজনায় চেয়ার ঠেলে ওঠে দাঁড়ান তিনি। মিনিট পাঁচেক পর দামি সিগ্রেট মুঠো করে ধরে, ভারি একটা কায়দা করে টানতে টানতে ফিরে আসে নজরুল। এসে গগনবাবুর হাতে গুঁজে দেয় সবুজ একখানা দশ টাকার নোট। মুখটা একটু গম্ভীর তার। টাকা গুঁজে দিতে দিতে বলল, ওয়ার্ড ইজ ল।

টাকাটা হাতে পেয়ে পরিকল্পনাটা কাজে লাগিয় ফেলেন গগনবাবু। হেডক্লার্কের টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান। হেডক্লার্ক বুড়ো মানুষ। চুলদাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। তার। মুখে দাঁত আছে গোটা পাঁচেক। খুবই ভালো ধরনের মানুষ। খানিক আগেই বাড়ি থেকে আনা রুটি আর ডিমভাজা দিয়ে লাঞ্চ করেছেন। এখন তারিয়ে তারিয়ে চা খাচ্ছেন। গগনবাবুকে দেখে বললেন, কী?

শরীরটা ভালো নেই স্যার।

বাড়ি যাবেন?

জি স্যার।

 চলে যান, চলে যান।

হেডক্লার্ক সাহেব এত সহজে ছুটি দিয়ে দেবেন ভাবেননি গগনবাবু। খুবই খুশি হলেন, তিনি। হাত তুলে হেডক্লার্ক সাহেবকে একটা আদাব দেন। তারপর অফিস থেকে বেরোন।

 ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনের কাছে এসে অনেক দরদাম করে সাড়ে চার টাকায় লম্বা মতন বিশাল কাঁঠাল কেনেন গগনবাবু। কাঁঠালটা বেশ পাকা, বেশ ভারি। শিক দিয়ে পাকানো হয়নি। একদম গাছপাকা। দুজায়গায় খারার মাঠের মতো ইরল চিরল ফাটা। সেই ফাটা দিয়ে ভুর ভুর করে বেরুচ্ছে তীব্র গন্ধ। গালা কাঁঠাল হবে। মুড়ি দিয়ে গালা কাঁঠাল, আহা বড় স্বাদের। টাকা তো পকেটে আছেই, সেরখানেক মুড়িও কিনে নেবেন গগনবাবু। তারপর রাতের বেলার সব ছেলেমেয়ে নিয়ে গোল হয়ে বসে কাঁঠাল মুড়ি খাবেন। হাতে সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে অতিশয় যত্নে কাঠালের কোয়া খুলে খুলে দেবে সনাতনী।

বনগ্রামের কাছাকাছি এসে গগনবাবু টের পান কাঁঠাল বহন করা কাঁধটা বড় ব্যথা হয়ে গেছে। কাঁঠালটা বেশ ভারি। দশ বার সেরের কম হবে না।

কাঁধ বদল করার জন্যে দুহাতে কাঁঠালটা শূন্যে তুলে ধরেন গগনবাবু। তারপর কায়দা করে অন্য কাঁধে বসাতে যান। হাত দুটো কি মুহূর্তের জন্যে সামান্য কেঁপে যায় গগনবাবুর। কাঁঠালটা ধপ করে পড়ে রাস্তায় তারপর গড়গড় করে গড়িয়ে যায় রাস্তায় একেবারে মাঝে। রাস্তায় ম্যালা গাড়িঘোড়া ছিল, গগনবাবু খেয়াল করেন না। পাগলের মতো দিশেহারা হয়ে ছুটে যান কাঁঠাল ধরতে। ঠিক তখুনি বুনো মোষের মতো গোঁ গোঁ করতে করতে ছুটে আসে ট্রাক। গগনবাবু দুহাতে কেবল ধরেছেন কাঁঠালটা। ট্রাক এসে দলাইমলাই করে দিয়ে যায় কাঁঠালটাকে, গগনবাবুকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গগনবাবু দেখতে পান ধুধু কালো একটা পথ নির্জনে পড়ে আছে। পথের দুপাশে সার ধরা গাছপালা। কোথাও কোন শব্দ নেই, হাওয়া নেই। পাতলা বার্লির মতো ম্লান একটা আলো ফুটে আছে চারদিকে। সেই আলোয় কালো পথটা বড়ো অলৌকিক মনে হয়। দূরে বহুদূরে পথের একেবারে শেষ মাথায় সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা একটা মানুষ। ছোট্ট পাখির মতো ধীরে হেঁটে যায়। কোথায় কোন প্রান্তরের দিকে যায়, গগনবাবু বুঝতে পারেন না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *