তার কোট

কী করত সে? যদি প্রশ্ন তোলে কেউ, বলা যায়, প্রায়শ নিশ্চুপ
থাকত কোথাও বসে। ক্রিয়ায় পাখির মতো অথবা গাছের অনুরূপ
ছিল সে-ও; হাতে প্রজাপতি এসে অনায়াস ঢঙে
মুহূর্তগুলোকে তার অনুবাদ করে নানা রঙে
উড়ে যেত। বিন্দুভর্তি বোর্ডের মতন
নৌকোময় নদী দেখে কখনো কাটত বেলা, বন
উপবন যেন তার পায়ে পায়ে লগ্ন আর হাজার হাজার
পাখি তাকে পাখিময়তার
বৃত্তান্ত শুনিয়ে যেত প্রত্যহ দু’বেলা। জানতাম
সে নয় সাধক কোনো সন্ত জটাধারী, পেশিও সুদৃঢ় থাম
নয় কোনো কর্মে বলিয়ান। জগৎ-সংসার
ছিল কি ছিল না সত্য অনুভবে, বোঝা দায়; তবু ক্ষুরধার
সত্যের সান্নিধ্যে যেতে চেয়েছিল বুঝি,
তাই আজও ঘাসে ঘাসে মরালপঙ্‌ক্তিতে তাকে খুঁজি।

এভাবে কুড়াত কুটো কিংবা নুড়ি, যেন কোন প্রাচীন রানীর
রত্নহার করতলগত তার, শহুরে পানির
ফোয়ারা শোনাত তাকে জলকিন্নরীর কত গান
বার বার, তার হাতে মাইক চকিতে কী অম্লান
অর্ফিয়ুস-বাঁশি হয়ে যেত। থাকত সে রোজ প্রতীক্ষায়
মোড়ে মোড়ে, যদি কেউ ডাকে ছলচ্ছল আকাঙ্ক্ষায়।

পরনে পুরোনো কোট শীতগ্রীষ্মে, নক্ষত্র প্রতিম
ছিদ্র ছিল কোটময়; বর্ণ তার পীত না রক্তিম,
বলা মুশকিল; সে তো পথবাসী। যখন উজাড় হ’ল পথ,
মেশিন গানের বন্য বর্বর চিৎকারে লুপ্ত সকল শপথ,

সে থাকে দাঁড়িয়ে অবিচল কী অবুঝ দৃষ্টি মেলে
চতুর্দিকে। পলায়ন অর্থহীন ভেবে অবহেলে

পকেট উল্টিয়ে দেয় চৌরাস্তায়-রাজার মুকুট,
স্বর্গের সোনালি নকশা ঝরে যায়, কোথায় কু’ফুট
জায়গায় ঘুমায় কারা, বুঝি ভাবল সে; দেখি
হঠাৎ মাথার খুলি তার চাঁদ হলো নীলিমায় এবং সাবেকি
কোট তার টুকরো টুকরো পড়ল ছড়িয়ে কী ব্যাপক, প্রতি খণ্ডে বরাভয়
স্ফুলিঙ্গ-অক্ষরে লেখা ‘আমি মৃত্যুঞ্জয়’।