না, আমি যাব না

না, আমি যাব না
অন্য কোনোখানে।

আমিও নিজেকে ভালোবাসি
আর দশজনের মতন। সকালের
টাটকা মাখন-রোদে জেগে ওঠা, প্রাতরাশ সেরে
তুমুল আড্ডায় মাতা, চেনা রাস্তা দিয়ে
হেঁটে যাওয়া, রাত্রি জেগে বই পড়া, আলাপ জমানো
বন্ধুদের সাথে
আমারও অত্যন্ত ভালো লাগে।

আমিও নিজেকে ভালোবাসি
আর দশজনের মতন। ঘাতকের
অস্ত্রের আঘাত
এড়িয়ে থাকতে চাই আমিও সর্বদা।
অথচ এখানে রাস্তাঘাটে
সবাইকে মনে হয় প্রচ্ছন্ন ঘাতক।
মনে হয়, যে কোনো নিশ্চুপ পথচারী
জামার তলায়
লুকিয়ে রেখেছে ছোরা, অথবা রিভলবার, যেন
চোরাগোপ্তা খুনে
পাকিয়েছে হাত সকলেই।
জানি, গুপ্তচর
করছে অনুসরণ সারাক্ষণ। কখনো নিজেরই
ছায়া দেখে ভীষণ চমকে উঠি। রাজাকার, পুলিশ, জওয়ান
যারা খুশি তুলে নিয়ে যেতে পারে মধ্যরাতে অথবা দুপুরে
আমার সামান্য মৃতদেহ
বুকে নিয়ে বুড়িগঙ্গা বয়ে যেতে পারে নিরবধি।

তবু আমি যাব না কখনো
অন্য কোনোখানে। খুঁজব না
নিশ্চিন্ত আশ্রয়
অন্য কোনো আকাশের নিচে।

এখন পড়ে না চোখে চেনা মুখ কোথাও তেমন
কোনোখানে। কখনো চমকে উঠি দেখে
কাউকে নির্জন বাসস্টপে। মনে হয়,
চিনি তাকে, সান্নিধ্যে গেলেই
ভাঙে ভুল, মাথা হেঁট করে
পথ চলি পুনর্বার। বন্ধুরা অনেকে
দেশান্তরী, বস্তুত প্রত্যহ
হচ্ছে বাস্তুত্যাগী
সন্ত্রাসতাড়িত
হাজার হাজার লোক, এমনকি অসংখ্য কৃষক
আদি ভিটা জমিজমা ছেড়ে
খোঁজে ঠাঁই যেমন-তেমন ভিন দেশে।

তবু আমি যাব না কখনো
অন্য কোনোখানে
থাকব তাদের সঙ্গে এখানেই, বাজেয়াপ্ত হয়েছে যাদের
দিনরাত্রি, যন্ত্রণায় বিদ্ধ হয়ে সকল সময় সারিবদ্ধ
মৃত্যুর প্রতীক্ষা করা যাদের নিয়তি।