রৌদ্রে নিয়ে যাও

দ্বিধাকে সরিয়ে দূরে ঘটঘুটে অন্ধকার থেকে
এখন তোমরা তাকে রৌদ্রে নিয়ে যাও। বড় বেশি
অন্ধকারে ছিল এতদিন, দিনগুলি ছিল তার
পেঁচার কোটরাগত। বড় বেশি অন্ধকারে ওরা
রেখেছিল তাকে; অন্তর্জীবনের হল্‌দে পাতাগুলো
অন্ধকারে ডোবা আর তৃষিত শরীর তার পাকা
আনারের মতো ফেটে পড়তে চেয়েছে প্রতিদিন

রোদ্দুরের আকাঙ্ক্ষায়। হবে সে সূর্যের সেবাদাসী,
আজীবন সাধ ছিল তারও অথচ নিঃসঙ্গ ঘরে
প্রখর চৈত্রের ভরা দুপুরেও বিরূপ আঁধার
হঠাৎ বাদুড় সেজে উদ্ভিন্ন শরীরটাকে খুব
আলুথালু করছে উন্মত্ততায়, তীব্র পাখসাটে।
রৌদ্রকে সে প্রস্ফুটিত গোলাপের মতো নগ্নতায়
করেছে কামনা আর দুধ-সাদা স্বপ্নের অচেনা
গলিপথে দেখেছে অনেক কাঁটাবন, মরুভূমি,
গহ্বর পেরিয়ে আনা ক্ষুধার্ত বেখাপ্পা কয়েকটি
ক্রুদ্ধ পশু রাত্রিটাকে খুবলে খেতে পরম উৎসাহী-
যেন তারা তাড়াতাড়ি গলিপথে ভোর হোক চায়।

মরীচিকা-প্রতারিত আত্মা তার হরিণের মতো
চেয়েছে রাখতে মুখ রোদ্দুরের হ্রদে কতদিন।
কখনোবা রাত বারোটায় কিংবা একটায়( তাই
অনুমান করা চলে) শরীরে বাড়ির ছায়া নেমে
এলে মৃদু মোমবাতি-আলোকিত চায় দেয়ালের
চুন-সুরকি ভেদ করে কতিপয় সন্ত আর মিহি
সোনালি চুলের দেবদূত আসতেন তার কাছে,
আঁধার শাসিত কণ্ঠে দিতেন পরিয়ে মালা ঠিক
আলোর মুক্তোয় গড়া। নিতেন মাথার ঘ্রাণ আর
রাখতেন অলোকিক হাত তার লাজুক মাথায়
তখন চৈতন্যে দিব্যি উঠত জ্ব’লে আশা ক্ষিপ্রতায়
ভুল সকালের মতো। বড় বেশি অন্ধকারে ছিল
বলে স্বপ্নভঙ্গে খেত থতমত, যেমন সে কাজে
হঠাৎ জলের ঘড়া ভেঙে, ফেলে হত অপ্রস্তুত।
শোনো, মৃত্যু বন্দনায় যুগ যুগ কাটিয়ে দিলেও
ফিরিয়ে দেবে না তাকে আর, তার সত্তার শীতল
অন্ধকার কখনো হবে না দূর। ভীষণ আঁধারে
এতদিন রেখেছিল তাকে ওরা; দয়ালু ব্যক্তিরা
অন্তত এখন তাকে অকৃপণ রৌদ্রে নিয়ে যাও।