যিনি নম্বর ভালবাসতেন

“নম্বরে জীবন ছাওয়া। সেই কবে ইশকুলের রোল নম্বরের
স্মৃতি নিয়ে বেরিয়েছি পথে,
তারপর থেকে ঝাঁক ঝাঁক
নম্বরের দাবি-দাওয়া মেটাতেই জীবনের প্লেন
ফুরিয়ে ফেলেছে পেট্রোলিয়াম বেবাক। কয়েকটি
পলিসি নম্বর আর বাড়ির নম্বর আর গাড়ির নম্বর,
ব্যাংকের খাতার প্রিয় নম্বর ইত্যাদি
কেবলি করেছি জড়ো, অথচ নম্বর
নিকট এসেছে যত মানুষ ততই দূরে গেছে চলে। তবে
আমি নিজেই কি শুধু কতিপয় নম্বরের সমাহার কোনো?
শিখেছি অনেক ঠেকে বহু ঘোল খেয়ে
নম্বরের নেই শ্রুতি, নেই আলাপের কোনো সাধ।“
-বলে তিনি ব্রিফকেস নেড়ে-চেড়ে বসলেন গার্হস্থ্য মোটরে।

গাড়ি তাঁর হুট করে চলে গেল, বাড়ির সুরম্য দরজায়
অভ্যস্ত রীতিতে নেমে দেখেন কাগজ কতিপয়
হাওয়ায় উড়ছে আর ক’জন বালক
পাখির ঝাঁকের মতো একরাশ কাগজের পেছনে-পেছনে
ছুটেছে হুল্লোড় করে। মনে হ’ল তাঁর,
কাগজের ঝাঁক যেন একতাড়া নোট ফুরফুরে
আর তিনি নিজে হৈ-হৈ ছেলেদের সঙ্গে ছুটছেন
উড়ো কাগজের ঠিক পেছনে-পেছনে শৈশবের দিকে ব্যগ্র মুখ রেখে।

“দাড়ি কামানোর পর গালে কিংবা কোমল চিবুকে
যেসব খুচরো কাটা দাগ লেগে থাকে,
তাদের কেমন যেন অন্তরঙ্গ লাগে, বড় ব্যক্তিগত”-বলে তিনি
জরুরি ফাইল কিছু রাখলেন গোপন দেরাজে।
চিরচেনা বাগানের দেশী কি বিদেশী ফুল দেখে,
সতেজ ফুলেরা যেন-ভাবলেন তিনি-চকচকে টাকাকড়ি।

হঠাৎ রক্তের চাপ বাড়ে, বুকে ট্যাক্সির ঝাঁকুনি
আপিসের বন্ধ ঘর, ব্রিফকেস, চেক বই, হৈ-হৈ বালকেরা
বাড়ির ঘোরানো সিঁড়ি, লিফট-এর স্তিমিত আলো, গোপন দেরাজে,
ব্রিফকেস, চেক বই, প্রসন্ন নোটের তাড়া, জরুরি ফাইল,
লিফট্‌-এর স্তিমিত আলো, হৈ-হৈ বালকেরা, ব্রিফকেস,
পলিসি নম্বর,
গৃহিণীর পলায়নপত্র যৌবনের অস্তরাগ, চেক বই, আপিসের,
বন্ধ ঘর, টাইপিস্ট মেয়েটির লো-কাট ব্লাউজ, বালকেরা,
ব্রিফকেস, অস্তরাগ, লিফট্‌-এর স্তিমিত আলো, লো-কাট ব্লাউজ,
পলিসি নম্বর,
ব্রিফকেস, চেক বই, প্রসন্ন নোটের তাড়া, চেক বই, চেক বই, চেক…
বাগানের স্তব্ধতায় পতনের শব্দ আর নিঃশব্দ ভীষণ
বুকের একান্ত ঘড়ি, শূন্য হাত, ঘাসে আধপোড়া সিগারেট,
অদূরে নিশ্চুপ ঝারি।
ওপরে অনেক তারা, একান্ত সেকেলে আশরফি।